প্রতিনিয়ত চাহিদা বাড়ছে এসইওর
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
একজন এসইও এক্সপার্ট, ওয়েবসাইট ডিজাইনার এবং ডেভলপার। ২০০৯ সাল থেকে তিনি এই সেক্টরে কাজ করছেন। বর্তমানে তিনি ব্লাক আইজ লিমিটেডের এমডি। নিজে কাজ করার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এসইওতে যারা কাজ করতে আগ্রহী, তাদের প্রশিক্ষণও দিয়ে থাকেন। এসইও’র নানা বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেন নুরুল ইসলাম।এসইও কী এবং এর কাজ সম্পর্কে বলুন। এসইও’র পূর্ণ রূপ হচ্ছে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন। এসইও নিয়ে আলোচনা করতে গেলে প্রথমেই চলে আসে সার্চ ইঞ্জিনের কথা। গুগল, ইয়াহু, বিং, চরকি, খুঁজুন.কম, পিপীলিকা, বাইডু, এওএল, ইয়ান্ডেক্স, নাভেরসহ সকল সার্চ ইঞ্জিনগুলোর সৃষ্টি হয়েছে প্রয়োজনীয় তথ্য কিংবা ওয়েবসাইট সহজে খুঁজে বের করে তা সুবিন্যাসিতভাবে ফলাফল আকারে প্রকাশ করার জন্য। যে কোনো ব্যক্তি কোনো তথ্য খোঁজ করলে যাতে সবচেয়ে সঠিক তথ্য খুঁজে পেতে পারে, সেজন্য সার্চ ইঞ্জিনগুলো কিছু প্রোগ্রাম তৈরি করে রেখেছে। যে প্রোগ্রামগুলোর কাজ হচ্ছে- সংশ্লিষ্ট সাইটগুলোর মধ্যে কিছু বিষয় পর্যালোচনা করে সঠিক সাইটগুলোকে সামনে নিয়ে আসা।
সার্চ ইঞ্জিন প্রোগ্রামগুলো এই পর্যালোচনা অনেকগুলো বিষয়ের উপর ভিত্তি করে সম্পাদন করে থাকে। যেমন: ওয়েবসাইটের কনটেন্ট, ইউনিক ও প্রাসঙ্গিক তথ্য, সাইটের স্ট্রাকচার, ডিজাইন ইত্যাদি। সহজ কথায় এসইও মানে সার্চ ইঞ্জিনগুলো যে মানদ-ের উপর ভিত্তি সাইটগুলোর র্যাংকিং করে এবং ফলাফল প্রকাশ করে, সেই বিষয়গুলো মেনে সুনির্দিষ্টভাবে সাইট অপটিমাইজ করা। সফলভাবে একটি সাইট এসইও করলে নির্দিষ্ট কিওয়ার্ডে সাইটটি উপরের দিকে আসবে। অর্থাৎ কোনো ওয়েব সাইটকে সার্চ রেজাল্টের উপরের দিকে নিয়ে আসার জন্য যে প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয়, সেটিকে এসইও বলে। যখন একটি ওয়েবসাইট সার্চ রেজাল্টের উপরের দিকে থাকবে তখন ওয়েবসাইটের ভিজিটর বৃদ্ধি পায়। ফলে ইনকামও বৃদ্ধি পায়। ধরুন, একজন ব্যক্তি গুগল সার্চে জবহঃ অ ঈধৎ ঝবৎারপব ভৎড়স ইধহমষধফবংয লিখে সার্চ করল এবং ফলাফলে গুগল সার্চ লক্ষাধিক প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট ফলাফল দেখালো। কিন্তু এক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তি প্রথমদিকে যে প্রতিষ্ঠানের নামগুলো পাবেন সে সকল প্রতিষ্ঠানের মধ্যেই একটিকে বেছে নেবেন। ফলে জবহঃ অ ঈধৎ ঝবৎারপব ভৎড়স ইধহমষধফবংয কিওয়ার্ডে সার্চ করলে যে প্রতিষ্ঠান সবার উপরে আসছে সেই প্রতিষ্ঠানই বেশি ভিজিটর পাবে এবং আয়ও বেশি করবে।
আপনি কীভাবে এই পেশার সাথে যুক্ত হলেন? প্রথমদিকে আমি ওয়েব ডিজাইনিং এবং ডেভেলপিং করতাম। এখান থেকে আমার অনলাইন ক্যারিয়ারের শুরু। কাজ করতে গিয়েই এক সময় এসইও’র প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি। গ্রাহকদের সাইট তৈরি করে দেয়ার পর তারা জানাত যে, সাইটে কাক্সিক্ষত ভিজিটর পাচ্ছেন না। তারপর নিজের ডিজাইন এবং ডেভেলপ করা সাইটের মাধ্যমেই প্রথম শুরু করি এসইও’র কাজ। ধীরে ধীরে অনেকটা সময় পর এখন আমাদের একটি এসইও টিমই রয়েছে, যাদের মূল কাজই হচ্ছে অনলাইন মার্কেটিং। ক্যারিয়ার : এসইওতে খ-কালীন কাজের সুযোগ কেমন?
আপওয়ার্ক, ফ্রিল্যান্সার, স্ক্রিপ্টল্যান্সার, রেন্ট-এ-কোডার, ইল্যান্স, জুমলাল্যান্সার, পিপল পার আওয়ার, ফাইবারসহ প্রায় সকল মার্কেটপ্লেসগুলোতে ভিজিট করলে দেখা যায়, এসইও’র কাজ সবচাইতে বেশি। শুধু তাই নয়, বলতে গেলে অনলাইনে আয় করার যতগুলো উৎস আছে, তাদের সবার সাথে এসইও খুব অন্তরঙ্গভাবে জড়িত। এমনকি যারা অ্যাপস্ ডেভেলপার, ওয়েব ডিজাইনার কিংবা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার তাদেরও এসইও সম্পর্কে সুস্পস্ট ধারণা থাকতে হয়। ফলে বলা যেতে পারে, এসইও একটি অপরিহার্য বিষয়। তাই অনলাইনে ক্যারিয়ার শুরু করার ক্ষেত্রে, এসইও সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা নিয়ে কাজ শুরু করলে সফলতার সম্ভবনাও বেশি। যেহেতু মার্কেটপ্লেসগুলোতে এই কাজ সবচাইতে বেশি এবং তুলনামূলক সহজ, তাই এই পেশার লোকদের পাশাপাশি লেখাপড়া বা অন্য যে কোনো পেশার লোকজনেরও এসইওতে খ-কালীন কাজেরও অনেক সুযোগ রয়েছে।
এই পেশায় মাসে কত টাকা আয় করা সম্ভব? এসইও সম্পর্কে ভালো ধারণা এবং ইংরেজি পড়া ও বোঝার স্কিল যদি মোটামুটি ভালো হয়, তবে অনলাইনে থেকে মোটামুটি ভালো আয় করা সম্ভব। একজন এসইও এক্সপার্ট অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলো থেকে মাসে দশ হাজার টাকা থেকে শুরু করে এক লক্ষ কিংবা তারও অধিক আয় করতে পারেন। আর টিম ওয়ার্ক, এজেন্সি কিংবা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কোটি টাকা আয় করা সম্ভব। তবে আয়ের পরিমাণ অবশ্যই দক্ষতার উপর নির্ভর করে। কাজ কিংবা প্রজেক্টের পরিমাণ বেশি হয়ে গেলে টিম ওয়ার্কের প্রয়োজন হতে পারে। এছাড়াও একজন এসইও এক্সপার্ট ব্লগিং করে কী ধরনের আয় করতে পারে, তা ধারণা দেয়ার জন্য বলা যেতে পারে মারিয়ো লেভেন্ডারিয়ার (গধৎরড় খধাধহফবরৎধ) অথবা গিনা ট্রাপানি (এরহধ ঞৎধঢ়ধহর) এর কথা। যাদের মাসিক আয়ের পরিমাণ প্রায় ৪ কোটি টাকারও বেশি। তাই এ ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্টভাবে বলা কঠিন মাসে সর্বোচ্চ কি পরিমাণ আয় করা সম্ভব।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এসইও’র সম্ভাবনা ও ভবিষ্যত কেমন? আমাদের দেশে বর্তমানে বড় বড় ডিগ্রি নিয়ে অনেকেই বসে আছেন কাজের সন্ধানে কিংবা একটি চাকরির জন্য। তবে তথ্য-প্রযুক্তির এই যুগে এসইও’র কাজ জানলে বসে থাকার কোনো কারণ নেই। শুধু এসইও-ই নয় প্রযুক্তিগত যেকোনো সেক্টরে দক্ষতা থাকলে লোকাল মার্কেটেও কাজের অভাব নেই। প্রতিনিয়ত আমাদেও দেশে হাজার হাজার ওয়েবসাইট তৈরি হচ্ছে। সাথে সাথে এসইও এর চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এজন্য আগামীতেও এসইও কাজের প্রচুর প্রভাব থাকবে এবং দেশীয় বাজারে এই কাজের পরিমাণও বৃদ্ধি পাবে। বিশ্ব বাজারে এসইও এখন বিলিয়ন ডলার মার্কেটে রূপ নিয়েছে। বাংলাদেশেও অদূর ভবিষ্যতে এসইও হবে একটা বিশাল কর্মসংস্থানের জায়গা। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী এই কাজে নিয়োজিত রয়েছেন লাখ লাখ ফ্রিল্যান্সার এবং বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও অধিকাংশ ফ্রিল্যান্সারই এসইওরই কাজ করে থাকেন। অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোতে এসইও’র যে পরিমাণ প্রজেক্ট কিংবা কাজ রয়েছে তা মোট প্রজেক্ট কিংবা কাজের প্রায় অর্ধেক হবে। সুতরাং বলা যেতে পারে দেশে কিংবা বিশ্ব বাজারে এসইও’র সম্ভাবনা অফুরন্ত এবং এসইও এক্সপার্টদের ভবিষ্যৎ খুবই উজ্জ¦ল।
নতুনরা কোথায় এবং কীভাবে শিখবে?
প্রথমেই ইংরেজি পড়া এবং বুঝার স্কিলটা রপ্ত করতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো প্রোগ্রামিং ভাষা জানার তেমন দরকার নেই। অনপেজ অপটিমাইজেশনের জন্য নূন্যতম কোডিং জ্ঞান থাকলেই হবে, যেটি আপনি প্রশিক্ষণ বা অনলাইনের বিভিন্ন রিসোর্স থেকে জেনে নিতে বা শিখে নিতে পারবেন। এসইও শেখার অনেকগুলো মাধ্যম রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম এবং শ্রেষ্ঠ উপায় হচ্ছে গুগল। প্রথমে গুগল সার্চ শেখার ক্ষেত্রে এসইও এর কাজের একটা চেক-লিস্ট করতে হবে। সেই চেক-লিস্ট ধরে এক এক করে প্রতিটি টপিক সম্পর্কে ভাল ধারণা নিতে হবে। পরবর্তী স্টেপে প্রাকটিস করতে হবে। প্রাক্যটিসের জন্য একটি ফ্রি সাইট বানিয়ে তাতে করা যেতে পারে অথবা একটি সাইট তৈরি করে নিয়ে প্রাকটিস করলে আরও ভালো হয়। অনেকে অনলাইন থেকে শিখতে গিয়ে ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলেন। কিন্তু ধৈর্য্য হারালে চলবে না। যারা অনলাইনে শিখতে অভ্যস্ত নয়, তারা আইটি ইন্সটিটিউট কিংবা ট্রেনিং সেন্টারের সাহায্য নিতে পারেন। বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক ট্রেনিং সেন্টার রয়েছে, যারা এসইও এর উপর নিয়মিত ট্রেনিং করিয়ে থাকে। ট্রেনিং সেন্টারগুলোতে ভর্তি হয়ে ১০,০০০ টাকা থেকে ১৫,০০০ টাকা খরচ করে পুরো ব্যাপারটি অভিজ্ঞ কারো কাছ থেকে শেখা যায়। ইউটিউবে এসইও’র প্রতিটি টপিকের উপর ধারাবাহিক ভিডিও রয়েছে। সেগুলো দেখে শেখা যেতে পারে।