রেস্তোরাঁ ক্যাফেতে পড়ার পাশাপাশি খণ্ডকালীন চাকরি
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠছে নজরকাড়া সব আধুনিক রেস্তোরাঁ, ক্যাফে। এসব ক্যাফেতে কর্মরতদের অধিকাংশই বয়সে তরুণ। সুবিধামতো সময়ে পালা ঠিক করার সুযোগ থাকায় এখন অনেক শিক্ষার্থীই লেখাপড়ার পাশাপাশি খণ্ডকালীন চাকরি করছেন ক্যাফেতে।
ঢাকায় বিনোদনের জায়গার অভাবে দ্রুতগতিতে প্রসার ঘটছে ক্যাফে-রেস্তোরাঁ ব্যবসার। শহরের প্রধান সড়কগুলোর পাশে এমনকি পাড়া-মহল্লায় চালু হচ্ছে একের পর এক ক্যাফে। এসব খাবারের দোকানমালিকদের অধিকাংশই বয়সে তরুণ। কেউ আবার পড়ালেখার পাশাপাশি খাবারের ব্যবসা করছেন। এসব তরুণ মালিকেরা ক্যাফের কর্মী, খাবার সরবরাহকারী বা ওয়েটার হিসেবে তরুণদেরই বেছে নিচ্ছেন।
পিৎজা হাট ও কেএফসি ফ্র্যাঞ্চাইজি ট্রান্সকম ফুডস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আক্কু চৌধুরী বলেন, ট্রান্সকম ফুডস লিমিটেডের প্রতিষ্ঠান দুটি বর্তমানে রাজধানী ঢাকাসহ সিলেট, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে ব্যবসা পরিচালনা করছে। এর মধ্যে কেএফসির ১৮ এবং পিৎজা হাটের ৮টি রেস্টুরেন্ট আছে। এর বাইরে পিৎজা হাট হোম ডেলিভারির ৭টি আউটলেট আছে। এসব প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ১ হাজার ২৩০ জনের মতো কর্মী কাজ করছেন। ক্রেতাদের চাহিদার কারণে রেস্টুরেন্ট দুটি সারা দেশে নতুন নতুন শাখা স্থাপন করছে। প্রতি মাসেই কর্মী নিয়োগ করা হচ্ছে।
আক্কু চৌধুরী বলেন, ‘আমরা সব সময় তরুণদের নিয়ে কাজ করি। আমাদের প্রতিষ্ঠানের সামনের দিকে আছে একদল, যারা ক্রেতাদের সেবা করে। আর পেছনে কাজ করছে আরেক দল, যারা খাবার তৈরি করার কাজ করে। এখানে এগিয়ে যাওয়ার মাপকাঠি হলো শুধুই কাজ। আমাদের এখানে কাজ করার পরে পরবর্তী ধাপে যাওয়ার জন্য পরীক্ষা হয়। কাজ ও পড়াশোনা একসঙ্গে করা যাবে। এমনকি পরীক্ষা দিয়ে উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করতে পারবে যে কেউ।’ তিনি জানান, এখানে সবচেয়ে বড় কথা হলো ভালো কাজ করা, ক্রেতাদের সঙ্গে ভালোভাবে কথা বলা এবং সততা। এগুলোই এখানে এগিয়ে যাওয়ার মূল মন্ত্র।
ধানমন্ডি এলাকার রুফটপ রেস্তোরাঁ অরিগানোর উদ্যোক্তাদের একজন তানভীর আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যাফেগুলোতে কাজের ভালো সুযোগ আছে। দক্ষতার ভিত্তিতে কাজের মূল্যায়ন করা হয়। ক্লাসের সময় বাদে নিজের সুবিধামতো সময়ে কাজ করার সুযোগ থাকে।
কাজ ও পড়াশোনা একসঙ্গে করা যায় বলে অনেকেই খণ্ডকালীন চাকরিতে আগ্রহী হন। শ্যামলী পলিটেকনিক কলেজের পুরকৌশল বিভাগের পঞ্চম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী আবু ইব্রাহিম। দুই মাস আগে কমিক ক্যাফের ধানমন্ডি শাখায় যোগ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘নিজের হাতখরচ চালানোর জন্যই পার্টটাইম চাকরি নিয়েছি। ডিউটি শেষে ক্লাসে যাই। চাকরি-ক্লাস মিলিয়ে একটু কষ্ট হলেও পড়ালেখায় খুব একটা সমস্যা হয় না।
বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকা চাহিদা আর পকেট মানি বা হাতখরচের অনেকটাই উঠে আসে খণ্ডকালীন বেতনের টাকায়। ক্যাফের চাকরির শুরুতে বেতনটা এখানে কম হলেও অভিজ্ঞতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেতনও বাড়তে থাকে। নিজের পকেট মানি বা হাতখরচের জন্য বাবা-মায়ের কাছে হাত পাততে হয় না। ক্যাফেতে খণ্ডকালীন চাকরি করে ৬ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব।
ধানমন্ডি সাতমসজিদ সড়কের জি এইচ হাইটস ভবনে আছে সাতটি খাবার রেস্তোরাঁ। এই ভবনের ফুড রিপাবলিক ক্যাফের ১১ জন খাবার সরবরাহকারীর সবাই শিক্ষার্থী। ক্যাফের ব্যবস্থাপক এম ই এইচ রনি জানালেন, নির্ধারিত বেতনের বাইরেও ক্রেতারা খুশি হয়ে যে টিপস বা বকশিশ দেন, তা একটি বক্সে জমা রেখে প্রতি ১৫ দিন পরপর সবার মধ্যে সমান ভাগে ভাগ করে দেওয়া হয়।
সহজ, সাবলীল ও সুন্দর উপস্থাপনা, নিজের বক্তব্যকে সুন্দর করে উপস্থাপন করতে পারা, শুদ্ধ বাংলা ও ইংরেজি বলতে পারার ক্ষমতা—এই বিষয়গুলো এই পেশার ক্ষেত্রে যোগ্যতা হিসেবে কাজ করে। নিয়োগদাতারা সব সময়ই এমন কাউকে নিয়োগ দিতে চান, যাঁর আচার-ব্যবহার সবার কাছেই গ্রহণযোগ্য, যিনি খুব সহজেই ক্রেতার বন্ধু হয়ে যেতে পারেন।
ক্যাফেতে চাকরির অন্যতম প্রধান শর্ত ক্যাফের খাবার তালিকা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান রাখা এবং ক্রেতাদের কাছে খাবারের বিশেষত্ব তুলে ধরতে পারা। ক্যাফের চাকরি জন্য একটু চটপটে হতে হয়। আর উপস্থিত বুদ্ধিটাও এ ধরনের কাজের জন্য অপরিহার্য।
সুন্দর ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ, স্মার্ট পেশা হওয়ায় ছেলেদের পাশাপাশি নারী শিক্ষার্থীরাও ক্যাফের চাকরিতে আগ্রহী হচ্ছেন। মোহাম্মদপুর মহিলা কলেজের সম্মান দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মৌমিতা মৌ কাজ করছেন ফুড রিপাবলিক ক্যাফেতে। তিনি বললেন, ‘ইচ্ছে ছিল নিজের পায়ে দাঁড়াব। পড়ালেখার ক্ষতি হয় না বলে ক্যাফেতে চাকরি নিলাম। ভালো পরিবেশ কাজ করে মাসে বেশ ভালো টাকা আয় করছি।’
রাজধানীর নতুন খাবারপাড়া খিলগাঁও তালতলা, ধানমন্ডি, বনানী, উত্তরার বিভিন্ন ক্যাফেতেই শিক্ষার্থীদের খণ্ডকালীন কাজের সুযোগ আছে। একাধিক ক্যাফের মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ক্যাফেগুলোতে কর্মীদের দুপুরের খাবার বা সন্ধ্যার নাশতা দেওয়া হয়। অনেক ক্যাফেতে প্রতি মাসের মোট বিক্রির একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ কর্মীদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়।
সরকারি-বেসরকারি যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই ক্যাফেতে কাজের আবেদন করতে পারেন। ক্যাফেগুলো চাকরির জন্য সাধারণত গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচার করে না। ফেসবুকে প্রতিটি ক্যাফের নিজস্ব পেজ আছে, সেগুলোতে চাকরির বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। আবার এসব চাকরিতে নিয়োগের বেলায় খুব বেশি সময়ও নেওয়া হয় না। তাই নিজ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখাই ভালো।