যুক্তরাষ্ট্রে প্রিয়াংকার সাফল্য
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
প্রিয়াংকা সরকার ছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের ছাত্রী। ২০০৯ সালে স্নাতক শেষ করে স্নাতকোত্তর করতে পরের বছর চলে গিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব অ্যাক্রনে। ঢাকার বিমানবন্দরের রানওয়ে দিয়ে প্রিয়াংকাকে নিয়ে উড়োজাহাজ যখন ছুটে যাচ্ছিল, তখন কি কল্পনাও করেছিলেন, একদিন এই ‘রানওয়ে’ই তাঁকে অনন্য সাফল্য এনে দেবে!
প্রিয়াংকার পড়ার বিষয়টা জটিল। আমাদের কাছে একটু অপরিচিতও বটে। এখন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয় অ্যাট আরবানা—শ্যাম্পেইনে ‘রানওয়ে’ নিয়ে গবেষণা করছেন তিনি। বিমান পরিবহনব্যবস্থার উন্নয়নে গবেষণা প্রকল্প উপস্থাপন করে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে চলতি বছরের সেরা দশে ঠাঁই পেয়েছেন এই তরুণ প্রকৌশলী। পুরস্কার হিসেবে পাচ্ছেন ১০ হাজার মার্কিন ডলার।
এমন প্রাপ্তিতে ভীষণ আনন্দিত প্রিয়াংকা। কিছুদিন আগে ফেসবুক মেসেঞ্জারে কথা হচ্ছিল তাঁর সঙ্গে। ও প্রান্ত থেকে প্রিয়াংকা লিখলেন, ‘পুরস্কার পেয়ে তো খুবই ভালো লাগছে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় পর্যায়ে আমার কাজের স্বীকৃতি মেলাটা অনেক বেশি গৌরবের। এতে আমার পরিচিতি অনেক বেড়ে গেছে, যা পিএইচডির পর আমার ক্যারিয়ারের জন্য সহায়ক হবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের বিমান পরিবহনব্যবস্থা নিয়ে কাজ করছেন, এমন পিএইচডি গবেষকদের উৎসাহিত করতে এ পুরস্কার দেওয়া হয়। এটি দেয় দেশটির বিমানবন্দর ও বিমান পরিবহনব্যবস্থার সরকারি সংস্থা ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ)। এই পুরস্কারের জন্য মার্কিন সব বিশ্ববিদ্যালয়ের বিমান পরিবহন প্রকৌশল নিয়ে গবেষণারত পিএইচডি গবেষকেরা আবেদন করতে পারেন। এতে তুলে ধরতে হয় তাঁদের ভবিষ্যৎ গবেষণার একটি সারাংশ। এই গবেষণা কীভাবে দেশটির বিমান পরিবহন উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে, সেটিও উল্লেখ করতে হয়। গবেষণা প্রকল্পের বিষয়বস্তুর গুরুত্ব এবং এ বিষয়ে গবেষকের পূর্ববর্তী কাজের অভিজ্ঞতার বিচার করে প্রতিবছর ১০ জন গবেষককে এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়।
গবেষণা প্রকল্পটির বিষয়ে জানতে চাইলে প্রিয়াংকা বলেন, ‘আমার কাজটা বিমানবন্দরের রানওয়ে নিয়ে। বিশ্বে প্রতিনিয়ত যাত্রীবাহী ও মালবাহী বিমানের সংখ্যা বাড়ছে। ভবিষ্যতেও সংখ্যাটা বাড়তেই থাকবে। এয়ারবাস ৩৮০, বোয়িং ৭৪৭ ও ৭৭৭-এর মতো নতুন নতুন বিমান আসছে, যেগুলো আগের চেয়ে অনেক বেশি ওজন বহন করে। এগুলোর অবতরণের সময় রানওয়েতে অনেক বেশি চাপ পড়ে। রানওয়েগুলো দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব রানওয়ে সংস্কারের জন্য অনেক বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয়। এ ছাড়া সময়মতো সংস্কারের অভাবে অনেক রানওয়ে বিমান অবতরণের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। সে জন্য রানওয়ে তৈরির সময় কীভাবে লেয়ারিং করলে তা আরও শক্তিশালী, মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী হবে, সে কৌশল জানতে হবে।’
প্রিয়াংকা এর সঙ্গে যোগ করলেন, নিউ জার্সিতে এফএএর ন্যাশনাল এয়ারপোর্ট পেভমেন্ট টেস্টিং ফ্যাসিলিটি নামে একটা ল্যাব আছে। এখানে তিন বছর ধরে বিভিন্ন লেয়ারিং করে বানানো রানওয়ে দিয়ে এয়ারবাস ৩৮০, বোয়িং ৭৪৭ ও ৭৭৭-এর মতো বিমান অবতরণ করে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমার কাজ হচ্ছে তাদের ডেটাগুলো বিশ্লেষণ করে একটা প্যাটার্ন বের করা, যেখানে যেকোনো ধরনের বিমানের ওজন, চাকার ধরন ও সংখ্যা দিলেই বলে দেবে এই রানওয়ে কত দিন এ ধরনের বিমানের ভার নিতে পারবে। সে ক্ষেত্রে নতুন বিমানবন্দরের রানওয়ের নকশা করাটা অনেক বেশি বাস্তবসম্মত হবে। কয়েক দিন পর পর সংস্কারের দরকার পড়বে না।’
প্রিয়াংকার বাবা নিশিকান্ত সরকারও একজন পুরকৌশলী। দুই ভাইবোনের মধ্যে প্রিয়াংকা ছোট, বড় ভাই নিবিড় সরকার পেশায় চিকিৎসক। জানালেন, এই পেশায় আসার পেছনে বাবার ভূমিকার পাশাপাশি মা প্রমীলা সরকারের উৎসাহ ছিল অনেক বেশি। প্রিয়াংকার স্বামী অনুপম আইচ বুয়েট থেকে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক। ২০১৫ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের হিউস্টন ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। এখন কাজ করছেন ইন্টেল করপোরেশনে।
সূত্র: প্রথম আলো