রুটিন করে পড়াশোনা
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
ধরা যাক কোনো একটা ব্যাংক থেকে প্রতিদিন সকালে আপনাকে ৮৬ হাজার ১৮৪ টাকা দেয়া হলো। তারপর বলা হলো, ওই টাকা থেকে আপনি ইচ্ছেমতো খরচ করতে পারবেন। কিন্তু শর্ত হলো খরচ করার পর যা বাকি থাকবে, দিনশেষে তা ফিরিয়ে দিতে হবে। এরকম হলে আপনি কী করতেন? নিশ্চয়ই পুরো টাকাটা কাজে লাগানোর জন্যে উঠে পড়ে লাগতেন। কিন্তু সময়কে নিয়ে কি আপনি এভাবে ভাবেন? অথচ সময়ই কিন্তু আপনার এই সম্পদ। কারণ একটি দিনে আপনার থাকে মোট ৮৬,১৮৪ সেকেন্ড যা আজকে চলে গেলে আর কোনোদিনই ফিরে পাবেন না আপনি।
শিক্ষার্থীদের সময় মোটামুটি ৪ ধরনের কাজ করে কাটে:
১. জরুরি (দরজা খোলা, ফোন ধরা বা কোনো অনিবার্য বাধাবিঘ্ন)
২. গুরুত্বপূর্ণ (ক্লাসের আগে পড়া, নোট তৈরি করা, পরীক্ষার পূর্বপ্রস্তুতি, নিয়মিত ব্যায়াম, মেডিটেশন)
৩. জরুরি এবং গুরুত্বপূর্ণ (পরীক্ষার পড়া, বাড়ির কাজ, প্রাকটিক্যাল বা কোনো এসাইনমেন্টের কাজ)
৪. জরুরি না, গুরুত্বপূর্ণও না (যেমন, টিভি দেখা, কম্পিউটার গেম খেলা, মোবাইলে কথা বলা, আড্ডা দেয়া, বেড়ানো বা অসময়ে অতিরিক্ত ঘুম)
একজন সাধারণ শিক্ষার্থীর বেশিরভাগ সময় কাটে ৩ এবং ৪ নম্বর কাজে। কিন্তু একজন অনন্য ছাত্র হিসেবে আপনাকে সবচেয়ে বেশি সময় দিতে হবে ২ এবং ৩ নম্বর কাজে। ১ নম্বর কাজগুলো যাতে খুব বেশি সময় নিয়ে না নেয় সে ব্যাপারে সচেতন হতে হবে এবং ৪ নম্বর কাজগুলো থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করতে হবে।
রুটিন করবেন কীভাবে
১. পরীক্ষা, অ্যাসাইনমেন্ট ও রিপোর্ট তৈরি: রুটিন করার প্রথম ধাপ হচ্ছে আপনার পরীক্ষার শিডিউল, এসাইনমেন্ট, রিপোর্ট ইত্যাদির লিস্টটা আপনার পড়ার টেবিলের সামনে এমন এক জায়গায় সেঁটে রাখা যেন ঢুকলেই চোখে পড়ে। আরেক সেট রাখবেন আপনার সঙ্গেই। বইয়ের ব্যাগে বা মানিব্যাগে বা ভ্যানিটি ব্যাগে।
২. সাপ্তাহিক সূচি তৈরি: বাঁধা-ধরা যে কাজগুলো প্রতি সপ্তাহে আপনাকে করতে হয় তা ঐ সূচিতে লিখে অনেকগুলো ফটোকপি করা। কেন? কারণ প্রতি সপ্তাহেই আমরা এর একটি করে কপি ব্যবহার করবো।
৩. দৈনিক রুটিন: সাপ্তাহিক এই রুটিনকে এবার দৈনিক রুটিনে রূপান্তরিত করতে হবে। কারণ তাহলেই আপনার সারাদিনকে আপনি রুটিনের আওতায় আনতে পারবেন। নিচে দৈনিক রুটিনের একটি নমুনা দেয়া হলো। প্রতিদিন ঘুমানোর আগে করতে হবে এই দৈনিক রুটিন।
তারিখ: ———
শনিবার
সকাল ৫:৩০ – ৬:০০ মিনিট ঘুম থেকে ওঠা এবং ফ্রেশ হওয়া
সকাল ৬:০০- ৬:৩০ মিনিট ব্যায়াম
সকাল ৬:৩০- ৭:০০ মিনিট মেডিটেশন
সকাল ৭:০০- ৭:১৫ মিনিট নাস্তা খাওয়া
সকাল ৭:১৫- ৭:৩০ মিনিট ভার্সিটি প্রস্তুতি
সকাল ৭:৩০- ৮:০০ মিনিট ভার্সিটি যাত্রা
সকাল ৮:০০- ১:০০ মিনিট ভার্সিটি
দুপুর ১:০০- ৩:০০ মিনিট বাসায় ফেরা, খাওয়া, গোসল, বিশ্রাম
বিকেল ৩:০০- ৫:০০ মিনিট একাউন্টিং পড়তে যাওয়া
বিকেল ৫:০০- ৭:০০ মিনিট বাসায় এসে ফ্রেশ হওয়া, নাস্তা খাওয়া, টিভি দেখা, পরিবারের সাথে সময় কাটানো
সন্ধ্যা ৭:০০- ১১:০০ মিনিট পড়া
রাত ১১:০০- ১১:৩০ মিনিট মেডিটেশন
রাত ১১:৩০- ৫:৩০ মিনিট ঘুম
রুটিনের ক্ষেত্রে মনে রাখুন :
বাস্তববাদী হোন। রুটিন করার ক্ষেত্রে এমন লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করবেন না, যা আপনি বাস্তবভিত্তিকভাবে অনুসরণ করতে পারবেন না। প্রথমদিকে বিষয়টি বুঝতে একটু সময় লাগতে পারে। কিন্তু কয়েকদিন চেষ্টা করলেই এটি আপনি আয়ত্ত করতে পারবেন এবং অনুভব করবেন শৃঙ্খলার আনন্দকে।
দিনের শুরুটা করুন পরিকল্পিতভাবে। তাহলে সারাদিনই বজায় রাখতে পারবেন সুন্দর কর্মছন্দ।
লক্ষ্য করুন দিন-রাতের কোন সময়ে আপনি বেশি মনোযোগী ও সক্রিয়। রুটিনের কঠিন, অপছন্দনীয় এবং একঘেয়ে বিষয়গুলোকে সেভাবে সাজান।
রুটিনে একই ধরনের বিষয় পর পর না রেখে বিষয়ের বৈচিত্র্য রাখুন। এতে মনোযোগ ধরে রাখা সহজ হবে।
আপনি কত ঘণ্টা পড়লেন সেটা মূখ্য নয়, বরাদ্দকৃত সময়ে আপনি কতটা পড়লেন রুটিন পর্যালোচনায় এটাই গুরুত্বপূর্ণ।
রুটিন অনুসরণে কখনো ছেদ পড়লেও হতাশ হবেন না। পরের ঘণ্টাগুলোর জন্যে ফিরে আসুন রুটিনে। কারণ রুটিনের ৮০% অনুসরণ করতে পারলেও গড়পড়তা ছাত্র-ছাত্রীদের চেয়ে আপনি এগিয়ে আছেন।