শিক্ষার্থীদের কর্পোরেট লড়াই
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
ব্যাটেল অব মাইন্ডস এমনই একটি প্ল্যাটফর্ম, যা চাকরি বা ব্যবসার জগতে যাত্রা শুরুর আগে তরুণরা এ আয়োজনে অংশগ্রহণ করে নিজেদের দক্ষতা প্রমাণের সুযোগ পায়। যা পৃথিবীর যেকোনো স্থানে যেকোনো চ্যালেঞ্জ নিতে তরুণদের আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। লন্ডনে শিক্ষাজীবন শুরু করা ব্যাটেল অব মাইন্ডস ১৬-এর চূড়ান্ত পর্বে অংশগ্রহণকারী এইআইইউবি-এর শিক্ষার্থী সাবাব আখতার বলেন, ‘ব্যাটেল অব মাইন্ডস এমনই একটি অভিজ্ঞতা, যা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ব্যবসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষেও দেওয়া সম্ভব নয়। এই আয়োজন অংশগ্রহণকারীদের সীমাবদ্ধতা ছাড়িয়ে নিযুত সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে যেতে উদ্যমী করে তোলে।’
এ বছরের আগস্টে স্ব-স্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইনে ব্যাটেল অব মাইন্ডসে অংশ গ্রহণের জন্য আবেদন করে ১৮টি প্রাইভেট এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। প্রাথমিক বাছাইয়ের পর শিক্ষার্থীদের বলা হয় নিজের সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত ভিডিও আপলোড করতে। বিষয়বস্তু ‘হোয়াট আর ইউ মেইড অফ?’। এখানেই নিজের উপর কতটা আস্থা তা যাচাই শুরু।
অংশগ্রহণকারী অনেক শিক্ষার্থীর মতো বুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী সিরাজুম মনিরার জন্য এই আয়োজন ছিল নিজেকে চ্যালেঞ্জ করার প্ল্যাটফর্ম। মনিরা বলেন, ‘আমি আসলেই কতটা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারি তা যাচাই করতেই আয়োজনে অংশ নিয়েছিলাম।’
নিজেকে উপস্থাপনের ভিডিও বার্তা যাচাই করেই সেরা ‘ইনোভেটিভ ২০০’ শিক্ষার্থীকে বাছাই করে নেওয়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে শুরু হয় মূল আয়োজন। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আফিয়া জাহিন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের শুরু থেকেই আমি এই আয়োজনে অংশগ্রহণের জন্য অপেক্ষা করেছি। যেন এই প্রতীক্ষিত ও মর্যাদাপূর্ণ আয়োজনে আমার বিশ্ববিদ্যালয়কে উপস্থাপন করতে পারি। আমি এ ধরনের আরও অনেক আয়োজনে অংশগ্রহণ করেছি। তবে এই আয়োজনের প্রতিটি পর্যায়ে ছিল নতুনত্ব। নিজেকে প্রমাণ করার নতুন সুযোগ। চাকরি হোক বা ব্যবসায়িকভাবে হোক স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সফলতার সঙ্গে যোগাযোগ শিখতে এর চেয়ে ভালো আয়োজন আর হয় না।’
২০০ শিক্ষার্থী থেকে পরবর্তী ধাপের শিক্ষার্থীদের বেছে নেওয়ার প্রক্রিয়ায় মেলে এমন সত্যতা। শিক্ষার্থীরা যখন আশা করছে কোনো ‘বিজনেস কেস’ সমাধান করে এগিয়ে যেতে হবে পরবর্তী ধাপে, তখন আয়োজকরা তাদের পাঠায় ভিন্ন এক অভিযানে। মাত্র দুই ঘণ্টা সময়ের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বিভিন্ন পণ্যের ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে তথ্য সংগ্রহ করতে হয় তাদের। আয়োজকরা বলেন, ‘এ পর্বে মূলত শিক্ষার্থীদের সহনশীলতা যাচাই করা হয়।’ প্রতিযোগিতামূলক বাজার ব্যবস্থায় এগিয়ে যাওয়ার অন্যতম মূলমন্ত্র এই সহনশীলতা। এ ধাপের যাচাই-বাছাইয়ে নির্ধারিত হয় ‘রেজিলিয়েন্ট ১২০’ শিক্ষার্থীর তালিকা। এই ১২০ শিক্ষার্থীর বিভিন্ন দল ভিত্তিক উপস্থাপন পর্যবেক্ষণ ও যাচাই করে ‘এজাইল ৪০’ বাছাই করা হয়। যাদের জন্য অপেক্ষা করছিল বাস্তবিক ব্যবসা পরিচালনার সূবর্ণ ও অভিনব সুযোগ।
২০০৪ সালে শুরু হওয়া ব্যাটেল অব মাইন্ডসে এবারের আসরেই প্রথমবারের মতো সরাসরি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ দেওয়া হয়।
প্রথম রানারআপ দলের বুয়েটের শিক্ষার্থী বুশরা বেহরোজ বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের বৈচিত্র্য ও বহুমুখীতা প্রকাশের জন্য এর চেয়ে ভালো আর কোনো আয়োজন নেই। আয়োজনের প্রতিটি ধাপে নিজের নতুন এক যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হয়েছে। এই আয়োজন বাস্তবিক অর্থেই ‘অলরাউন্ডার’দের খুঁজে বের করেছে। এই আয়োজন থেকে আমি যা শিখতে পেরেছি, তা আমার জন্য ‘জীবন পরিবর্তনকারী’ অনুঘটক। ব্যাটেল অব মাইন্ডস সব ধাপের সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আমার জন্য সবচেয়ে বড় অর্জন এই আত্মবিশ্বাস—কখনোই থামব না।’
গত ২৪ অক্টোবরে অনুষ্ঠিত চূড়ান্ত পর্বের উপস্থাপনার ভিত্তিতে ‘ব্যাটেল অব মাইন্ডস-২০১৬’-এ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ)-এর শিক্ষার্থীরা। ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশের কর্মকর্তা নিয়োগের আয়োজনে প্রথম রানারআপ হয়েছে বুয়েট এবং দ্বিতীয় রানার আপ নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
বিএটি বাংলাদেশের ১০৫ বছরের ইতিহাসে প্রথম বাংলাদেশি ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেহজাদ মুনিম বিশ্বাস করেন, কর্পোরেট নেতৃত্বের সক্ষমতায় পিছিয়ে নেই এদেশের তরুণরা। বাংলাদেশে বিশ্বমানের কর্পোরেট নেতৃত্ব তৈরিতে প্রয়োজন সুযোগ ও আত্মবিশ্বাস। তরুণদের জন্য এমনই একটি প্ল্যাটফর্ম ব্যাটল অব মাইন্ডস।