স্নাতক পাশ করে ছোট জব যেভাবে মানসিক প্রভাব ফেলে
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থায় একজন চাকরিজীবীর তুলনায় একজন বেকারের অবস্থা খুবই খারাপ – এটাই ভাবা হয় তাইনা? কিন্তু এটি সব সময় সত্যি না। নতুন একটি গবেষণায় এমনটাই বলা হয়েছে যে, বেকারত্বের চেয়ে নিম্নমানের চাকরি মনের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে বেশি। গবেষণাটির বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নিই চলুন।
গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয় অকুপেশনাল এন্ড এনভায়রনমেন্টাল মেডিসিন নামক জার্নালে। অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা বলেন, চাকরি না থাকার চেয়ে যারা নিম্নমানের চাকরি করেন (যেমন- উচ্চ চাহিদার কাজ, সিদ্ধান্ ??? গ্রহণের উপর কম নিয়ন্ত্রণ, নিরাপত্তাহীনতা, প্রচেষ্টার ভারসাম্যহীনতা এবং পুরস্কৃত না করা ইত্যাদি) তাদের এই ধরণের অভিজ্ঞতা মানসিক স্বাস্থ্যের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে বেশি।
সাত বছরের গবেষণার ফলাফলে দেখানো হয় যে, যদিও চাকরিহীন বেকার মানুষদের মানসিক অবস্থা উল্লেখযোগ্য হারেই খারাপ থাকে চাকরিজীবীদের তুলনায়। তবে যারা খুবই নিম্নমানের চাকরি করেন তাদের তুলনায় বেকার মানুষদের মানসিক অবস্থা উন্নত থাকে। এছাড়াও কম পরিতৃপ্তির কাজ করেন যারা তাদের মানসিক অবস্থা সময়ের সাথে সাথে অবনতি হতে থাকে।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা খুব দৃঢ় ভাবেই এই বিবৃতি দেয় যে, “আমি আমার চাকরির ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত” এবং “আমার চাকরিটি খুবই জটিল এবং কঠিন”।
গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে, কীভাবে কাজের মান কর্মচারীদের মানসিক স্বাস্থ্যের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর মেন্টাল হেলথ রিসার্চ এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো এবং এই গবেষণার প্রধান লেখক পিটার বাটারওরথ এর মতে, “আসলে বেকার থাকাটা মানসিক স্বাস্থ্যের অনেক বেশি ক্ষতিকর, কিন্তু বেকারত্ব থেকে সরে নিম্নমানের কাজ নিলে মানসিক স্বাস্থ্যের উপকার হয় না”।
তিনি বলেন, সার্বিকভাবে যারা চাকরি পাননা তাদের মানসিক অবস্থা যারা নতুন চাকরি পেয়েছেন বা কাজের চাপ বেশি যাদের বা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন যারা তাদের চেয়ে ভালো থাকে।
বেকারত্ব কোন মজার বিষয় নয়। যদি আপনার পরিবার আপনার সার্টিফিকেটগুলোকে মূল্যহীন বলেন, তাহলে আপনার কাছে এখন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে যেকোন চাকরি না করার। যে কোন চাকরিই ভালো এটা একটি ভ্রান্ত ধারণা। সাইকোলজিক্যাল ক্ষেত্রে একমত প্রকাশ করা হয়েছে যে, আয় এবং চাকরির নিরাপত্তা সুখের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
ভালো একটি কাজ পাওয়া বেকার থাকার চেয়ে অবশ্যই অনেক ভালো। বাটারওরথ তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেন যে, মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে – আপনার চাকরি প্রয়োজন বলে আপনাকে চরমভাবে অসুখি করে তুলে এমন কাজে যোগ দেয়া কখনোই ভালো ধারণা হতে পারেনা।
আসলে খারাপ চাকরি কোনগুলো? বেশিরভাগ মানুষই তার চাকরি নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে পারেন না। বরং তারা তাদের চাকরিকে অপছন্দ করেন কোন না কোন দিক দিয়ে।Mashable এর মতে, “কোন কাজ ভালো না খারাপ তা নির্ভর করে নিয়ন্ত্রণ, স্বায়ত্তশাসন, চ্যালেঞ্জ, বিভিন্নতা এবং কাজের বিচক্ষণতা ইতাদির মাত্রার উপর। ভালো চাকরির ক্ষেত্রে কর্মীরা থাকে যোগ্য এবং তারা কাজকে উপভোগ করেন। নিম্নমানের কাজের ক্ষেত্রে বিরক্তিকর রুটিন বা কর্মীর দক্ষতার চেয়ে নিম্নমানের কাজ করানো হয়”।
আপনার পিতামাতা বা শিক্ষক হয়তো আপনাকে বলে থাকবেন যে, নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো। অর্থাৎ যেকোন একটা চাকরি থাকা ভালো, তা সে যত কষ্টকর বা বিপদজনকই হোকনা কেন। কিন্তু যেকোন পদক্ষেপ নেয়ার আগে এটা স্মরণ করবেন যে, মানসিক সুস্থতা শারীরিক সুস্থতার মতোই গুরুত্বপূর্ণ। তাই আপনি যদি আপনার বর্তমান চাকরি নিয়ে অসুখি থাকেন তাহলে এখনই সময় তা থেকে বেড়িয়ে আসার এবং নতুন কিছু খুঁজে নেয়ার।