মানসিক ফাঁদ
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
আপনাকে সবচেয়ে বেশী ভালোবাসে কে? নিশ্চয়ই আপনি নিজেই? কিন্তু আপনি কি জানেন আপনার সবচেয়ে বড় শত্রুও আপনি? আপনার মন সারাক্ষণ এমন সব ভাবনায় ব্যস্ত থাকে যা আপনাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার তুলনায় ক্রমশই ফেলছে পেছনে। সারাক্ষণ মানসিক দ্বন্দে ভুগছেন আপনি, জীবনে আসছে শত শত জটিলতা। সবই আপনার নিজের মানসিক ফাঁদ। কীভাবে? আসুন জেনে নিই-
অনুমান
আপনি একটা বিষয়কে সত্য বলে ধরে নিচ্ছেন যার ভিত্তি আপনার নিজের চিন্তা। আপনি বাস্তবে দেখেন নি, পুরোপুরি নিশ্চিত নন। কিন্তু আপনি ধরে নিচ্ছেন, ঘটনা এটাই। যেমন- সে আমার সাথে এভাবে কথা বলল, তার মানে সে এরকম বা সে কথা বলল না অর্থাৎ সে অহংকারী। আপনার কাছে কোন প্রমান হয়, পুরোটাই অনুমান। এভাবে একটা সম্পর্ক শুরু আগেই নষ্ট করছেন আপনি। সবসময় অনুমানের ভিত্তিতে কাজ করা যদি আপনার নিয়ম হয় তাহলে অন্যদের সাথে যম্পর্ককেও ঝুঁকিতে ফেলছেন একইসাথে কল্পনাপ্রসূত বিষয় নিয়ে ভাবিত হয়ে নিজের জটিলতা বাড়াচ্ছেন।
বিশ্বাস
আপনি মনে করছেন সত্য, কিন্তু তা সত্য নাও হতে পারে। কিন্তু আপনি বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন যে এমনটাই হবে। অতিরিক্ত বিশ্বাস আপনার জীবনকে কঠিন করে তুলতে পারে। আপনি আপনার বিশ্বাসের সাথে অমিল আছে এমন কোন কিছুই আর গ্রহণ করতে পারবেন না। যাদের সাথে আপনার বিশ্বাস মেলে না তাদেরকে আপনার শত্রু মনে থাকবে। প্রমাণ ছাড়া বিশ্বাস করার এই প্রবণতা ছড়িয়ে পড়বে আপনার সমগ্র জীবনে। যেমন- আপনি যাকে অনেক বিশ্বাস করেন তিনি কোন একদিন বলে বসলেন- তোমার স্টাইল অনেক পুরনো ধাঁচের। আপনার এতদিনকার আত্মবিশ্বাস টলে উঠবে সাথে সাথে। আপনার নিজেকে বিশ্রী মনে হতে শুরু করবে।
তুলনা
তুলনা কখনো সন্তুষ্টি দেয় না। আপনার মন সারাক্ষণ অন্যের সাথে নিজেকে তুলনা করতে থাকে। ‘সে আমার চেয়ে বেশি সুন্দর, সে বেশী ভাল কাজ করে, সে বেশী বড়লোক, আমার চেয়ে তার অনেক কিছুই ভাল…’ এরকম অসংখ্য তুলনা আমরা প্রতিনিয়তই করতে থাকি। কিন্তু কেন? কোন মানুষই তো একেবারে নিখুঁত হতে পারে না, তাই না? সারাক্ষণ সবচেয়ে নিখুঁত হওয়ার চেষ্টায় আপনি জীবনের অনেক সময় নষ্ট করছেন। কারও চেয়ে ভাল হওয়া জরুরি নয়, নিজের অবস্থানে নিজে ভাল কাজটি করুন।
চাহিদা
এটি আপনার আরেকটি শত্রু। আপনার যা নেই আপনি সারাক্ষণ তার পেছনে ছোটেন।সেটি আপনার প্রয়োজনও নয়। কিন্তু আপনি সবসময় অনুভব করেন আপনার আরও পাওয়ার কথা, আরও থাকার কথা। আপনি নিজেকে নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগেন, নিজেকে অভাবী, দুঃখী ভাবতে শুরু করেন। এই ভাবনা আপনাকে কখনো আপনার লক্ষ্য স্পষ্ট করে দেখতে দেবে না। কুয়াশার মত ঢেকে রাখবে আপনার মস্তিষ্ককে। প্রকৃত লক্ষ্যের পরিবর্তে আপনি ছোট ছোট বিষয় নিয়েই কাটিয়ে দিতে থাকবেন অজস্র সময়।
প্রত্যাশা
মানুষ মাত্রই আবেগপ্রবণ। নানান রকম প্রত্যাশা তার মনে। ভালবাসার মানুষদের কাছে প্রতিনিয়তই আপনি তুলে ধরছেন এই প্রত্যাশার দীর্ঘ তালিকা। কিন্তু পূরণ হচ্ছে না, বাড়ছে অভিমান। প্রত্যাখ্যান তৈরি করছে অপমানবোধ, বিক্ষুব্ধতা। জীবন জটিল হতে আর কী লাগে বলুন তো?
আদর্শ
মানুষের জীবনে একজন আদর্শ থাকবে যার মত সে হতে চাইবে এটাই স্বাভাবিক। আমরা আমাদের প্রিয় উপন্যাসের চরিত্রকে নিজের আদর্শ মনে করি। অনেকের আদর্শ থাকেন তার বাবা-মা। অনেকের প্রিয় শিক্ষক, অনুস্মরনীয় নেতা। কিন্তু এই আদর্শ আপনার জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে যখন আপনি নিজের স্বত্ত্বাকে বিলীন করে হলেও তার মত হতে চান।