সফল হতে চাইলে…
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পুরস্কারপ্রাপ্ত একজন কোরিয়ান-আমেরিকান শেফ মি. চ্যাং। টরেন্টো থেকে সিডনি, তিনি মোমোফুকু গ্রুপের ৮টি রেস্টুরেন্টের মালিক। এ ছাড়াও বেকারি এবং বার রয়েছে তার। এই শেফ এইচবিও’র ‘ট্রিমি’ এবং ফুডি ম্যাগাজিনের তারকা।
নিউ ইয়র্কের সেরা রেস্টুরেন্টগুলোতে অনেক বছর ধরে রান্না করেছেন তিনি। জাপানের অনেক নুডলস শপে কাজ করেছেন। অবশেষে ছোট্ট মোমোফুকু নুডল বারে দিনে ১৮ ঘণ্টা শ্রম দেন। চ্যাং কোনমতে নিজের বেতনটা নেন। কর্মী নিয়োগে তার নানা সমস্যা রয়েছে। সব সময় মানসিক চাপে থাকেন তিনি।
স্মৃতিচারণ করেন, একবার তার কর্মীদের নিয়ে একটি রেস্টুরেন্টে বারগার খাচ্ছিলেন। ওই রেস্টুরেন্টটি সফলতা দেখেছে। বেশ কামিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু তাদের বারগার খেয়ে হতাশ তিনি। এর চেয়ে ভালো তো আমরাই রাঁধতে জানি। কিন্তু আমাদের রেস্টুরেন্ট কেন দাঁড়াচ্ছে না, মনে মনে ভাবলেন তিনি। কোথায় ভুল হচ্ছে?
এ বিপদের জন্য অন্য কারো ঘাড়ে দোষ চাপাতে পারতেন চ্যাং। কিংবা আরো বেশি শ্রম ঢালতে পারতেন। কিংবা তার মেনুতে পরিবর্তন আনতে পারতেন। কিন্তু এর কিছুই না করে তিনি নিজের প্রতি খেয়াল দিলেন। নিজের যোগ্যতা যাচাই করতে থাকলেন। কাজটি বেশ নিষ্ঠুরভাবেই করতে থাকলেন তিনি। তার এই নুডলসের দোকানটি কি অর্থনৈতিকভাবে দাঁড়াতে পারবে না? একটি ছোট নুডলসের দোকান অবশ্য চলে যাবে কোনমতে। কিন্তু মূল ধারায় আসতে হলে এর বিশেষ রেসিপি থাকতে হবে।
দিক বদলালেন চ্যাং। একটি নুডল বারে কি থাকবে তাতে মন না দিয়ে তারা বাজারের তরতাজা উপকরণ আনার চেষ্টা করলেন। তারা এসব নিয়ে এমন সব রেসিপি প্রস্তুত করতে থাকলেন যেন এটাই তাদের শেষ খাবার। রীতিমতো পাগলাটে সব মেনু। এগুলো সত্যিই মানুষের খেতে মন চায়। কিন্তু সবাই রান্নার সাহস করেন না। অনেক ধরনের খাবার নিয়ে পরীক্ষ চালাতে থাকলেন ঝুঁকি নিয়ে। ক্রেতা আসতে থাকলো। ভালো-মন্দ মন্তব্যের ঝড় বয়ে গেলো। লাভ আসতে থাকলো এবং সুযোগের অবারিত দুয়ার খুলে যেতে থাকলো।
প্রতিষ্ঠান এবং মানুষের মধ্য কি ঘটে যাখন মানুষগুলো বাধার সম্মুখীন হন? এ নিয়ে ১৯৭০ এর দশকে গবেষণা শুর করেন হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের বিজনেস থিওরিস্ট ক্রিস আর্গাইরিস। তিনি চ্যাংয়ের মতো মানুষগুলোকে নিয়েই গবেষণা শুরু করলেন। এ পরিস্থিতিতে মানুষের সাধারণ প্রবণতাকে ‘সিঙ্গেল লুপ লার্নিং’ বলে অভিহিত করেন ক্রিস। এটা এমন এক মানসিক পরিস্থিতি যখন বাইরের এবং কৌশলগত দিক বিবেচনা করে মানুষ সামনের বাধা শনাক্ত করে।
প্রফেসর ক্রিস ‘ডাবল-লুপ লার্নিং’ এর কথাও বলেন। এটা সাধারণত দেখা যায় না। কিন্তু অনেক প্রভাবশালী মস্তিষ্কের প্রতিক্রিয়া। এই অবস্থায় মানুষ তার প্রতিটা চিন্তা, কার্যক্রম, তত্ত্ব, প্রভাব এবং ধারণার কথা বিবেচনা করেন। ঠিক যেমনটি করেছিলেন চ্যাং। নিজেকে যাচাই করার এই মানসিক অবস্থা সততার সঙ্গে নিজের বিশ্বাস ও সাহসকে চ্যালেঞ্জ করে। ফলে মানুষ সতেজ মনে পরিষ্কারভাবে চিন্তা করতে পারে। সামনে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
ব্যবসা, বিনোদন, ক্রীড়া এবং শিল্প জগতের আজ যারা সফল, বাধার সম্মুখীন হলে তারা এই পদ্ধতিতেই অতীতে নিজেকে সামলে নিয়েছেন। গবেষণায় এমনটাই দেখা গেছে। আত্ম-পরীক্ষার ক্ষেত্রে তারা কোনো কার্পণ্য করেন না। নিষ্ঠুরভাবে নিজের ভুল-ত্রুটি তুলে আনেন।
অনেক সফল মানুষই আত্ম-পরীক্ষার কথা বলেছেন। মার্টিনা নার্ভাতিলোভা ১৯৮১ সালে ক্রিস ইভার্টের কাছে পরাজিত হন। আর পর তিনি নিজের যোগ্যতা নিয়ে পরীক্ষা চালান। তিনি তার খেলাকে সম্ভাব্য সব দিক থেকে বিবেচনা করার চেষ্টা করেন। সেই পরীক্ষার ওপর ভিত্তি করে প্রশিষক্ষণ নিতে থাকেন তিনি। এক সময় যুগের সেরা নারী টেনিস খেলোয়াড়ে পরিণত করেন নিজেকে।
ব্যর্থতার পেছনে নিজের অক্ষমতা পরীক্ষার জন্য কেউ-ই সামনে এগোতে চান না। তারা বুঝে ওঠেন না, বাইরের পরিবেশ ছাড়াও নিজের অনেক কিছুই ব্যর্থতার জন্য দায়ী থাকে। নিজেকে বুঝতে গেলেই বেরিয়ে আসে অজানা তথ্য। আর এসব তথ্য মানুষকে সফলতার পথ দেখায়। তারকার পথে তারাই এগিয়ে যান যারা নিজের পরীক্ষাটা নিয়ে ফেলেন।