যেসব শর্তে গুগলে চাকরি মেলে

যেসব শর্তে গুগলে চাকরি মেলে

কোনো প্রতিষ্ঠান যখন কোনো কর্মী নিয়োগ দেয় তখন সেই প্রতিষ্ঠান কর্মীর মাঝে কী খুঁজে থাকে? এই প্রশ্নের উত্তরে বেশিরভাগ চাকরিপ্রত্যাশীর উত্তর-‘অবশ্যই ভালো রেজাল্ট।’ সত্যিই কী তাই? বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান গুগলের মানবসম্পদ বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট লাজলো বক কিন্তু বলছেন ভিন্ন কথা। নিউইয়র্ক টামিসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে লাজলো বলেছেন, ‘গুগলের কিছু কিছু টিমে ১৪ শতাংশ কর্মীর প্রাতিষ্ঠানিক কোনো ডিগ্রি নেই! ’ তাহলে গুগলে চাকরি পেতে কী কী যোগ্যতা থাকতে হয়? লাজলোর সাক্ষাৎকার অবলম্বনে জানাচ্ছেন মারুফ ইসলাম


Laszlo-Bock1গুগলে চাকরির জন্য পাঁচটি বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়।

  • যদি চাকরির পদটি কোনো কারিগরি বিষয় হয়, তবে জোর দেওয়া হয় কোডিং দক্ষতার ওপর। গুগলে চাকরির প্রায় অর্ধেকই কারিগরি শ্রেণিতে পড়ে। প্রতিটি চাকরির ক্ষেত্রেই যে মূল বিষয়টি বিবেচনায় রাখা হয় তা হচ্ছে সাধারণ জ্ঞানের দক্ষতা। এ বিষয়টিতে আইকিউয়ের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলা ঠিক হবে না। এখানে সাধারণ জ্ঞান বলতে বোঝানো হচ্ছে, কোনো বিষয় শেখার দক্ষতা, দ্রুত শেখার ক্ষমতা এবং তা কাজে লাগানোর ক্ষমতা। এই দক্ষতা হচ্ছে অতিসূক্ষ্ম জিনিসের মধ্যে পার্থক্য করার ক্ষমতা। গুগলে চাকরির জন্য সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় আচরণগত এ বিষয়গুলো খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়।
  • দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে নেতৃত্ব গুণ। প্রচলিত নেতৃত্বের পরিবর্তে প্রয়োজনীয় মুহূর্তে সমস্যা সমাধান করার নেতৃত্ব গুণকে গুরুত্ব দেয় গুগল। বক উদাহরণ দিয়ে বলেন, দাবা ক্লাবের আপনি একজন প্রেসিডেন্ট ছিলেন কিংবা বিপণন বিভাগের প্রধান ছিলেন? আপনি কত দ্রুততার সঙ্গে সেই পদে উন্নীত হয়েছেন, গুগল সে বিষয়টি দেখে না, বরং প্রয়োজনের মুহূর্তে আপনার টিমকে আপনি কতটা সমর্থন দিয়েছেন এবং আপনার কাজ কতটা টেনে নিয়েছেন, সেটি দেখে। সমস্যায় পড়লে নেতৃত্ব গুণে সমাধান করার বিষয়টি বিবেচনা করে গুগল। সমস্যা জটিল হলে আপনার ভূমিকা কী হয়, সে বিষয়টিও পর্যবেক্ষণ করে গুগল।
  • তৃতীয় গুণ নম্রতা।গুগলে উগ্র স্বভাবের মানুষের চাকরি পাওয়া কঠিন। লাজলো বলেন, দায়িত্বজ্ঞানসম্পন্ন হতে হবে এবং প্রতিষ্ঠানের কাজকে নিজের কাজ ভাবতে হবে, নিজের প্রতিষ্ঠান ভাবতে হবে। কোনো কিছুতেই রেগে যাওয়া চলবে না। কোনো কাজ নিজে সমাধান করতে না পারলে ভদ্রভাবে অন্যকে তা ছেড়ে দিতে হবে। অন্যদের ভালো পরামর্শগুলো গ্রহণ করতে হবে। গুগল সব সময় কাজের শেষে কী অর্জন করা হলো, সে বিষয়টি দেখে। কীভাবে একত্রে বা দলগতভাবে সমস্যা সমাধান করা যাবে এ বিষয়টিকেই গুগল গুরুত্ব দেয়। গুগলে ভদ্রতা বলতে অন্যকে কাজের সুযোগ করে দেওয়া নয়, বরং এটিকে বলা চলে বুদ্ধিবৃত্তিক নম্রতা। এই নম্রতা বা অন্যকে সম্মান দেখানোর মানসিকতা তৈরি না হলে কর্মীদের পক্ষে নতুন কিছু শেখা সম্ভব নয়।
  • একটুখানি অভিজ্ঞতা। হ্যাঁ, এটিই গুগলে চাকরি পাওয়ার চতুর্থ গুণ।লাজলো বক বলেন, গুগলে চাকরি পাওয়ার জন্য আরেকটি গুণ থাকতে হবে আর তা হচ্ছে কোনো কাজের ওপর ন্যূনতম অভিজ্ঞতা। ন্যূনতম অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কাউকে কাজে নেওয়া হলে তার শেখার আগ্রহ, যোগাযোগ দক্ষতা, নেতৃত্ব দেওয়ার আগ্রহ থাকে।
  • পঞ্চম গুণের নাম শেখার আগ্রহ।বক বলেন, আপনি কতটুকু জানেন এবং আপনার জানার পরিধি কাজে লাগিয়ে কী করতে পারেন, বর্তমান বিশ্ব সে বিষয়টিকেই গুরুত্ব দেবে এবং আপনার সেই মেধার মূল্য শোধ করবে। বর্তমান উদ্ভাবনী বিশ্বে শিখতে ভালো এবং বারবার শিখতে চাওয়ার মতো দক্ষতাগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। আর এ বিষয়গুলো শুধু গুগলে চাকরি পেতেই নয়, যেখানেই কাজ করতে যান না কেন সেখানেই কাজে লাগবে।

তথ্যঋণ : নিউইয়র্ক টাইমস favicon5

Sharing is caring!

Leave a Comment