কেন চাকরি পাচ্ছেন না, ভেবে দেখেছেন?

কেন চাকরি পাচ্ছেন না, ভেবে দেখেছেন?

  • মো. ইকরাম

মামা-চাচা ছাড়া চাকরি হয় না, কিংবা ঘুষ ছাড়া চাকরি হয় না- এ অভিযোগটি বর্তমান তরুণ ও বেকার সমাজের মধ্যে বহুল প্রচলিত একটি ভ্রান্ত ধারণা। ভ্রান্ত ধারণা শব্দটি পড়ার পর পুরো লেখাটি লেখার আগেই হয়ত লেখককে গালি দিচ্ছেন। কিন্তু চাকরিদাতা হিসেবে বেশিরভাগের মনের হতাশার কথাগুলো এ লেখাটিতে লেখার চেষ্টা করেছি।

বেকারদের হতাশা, চাকরি নাই, কিন্তু চাকরিদাতার হতাশা চাকরি করার উপযুক্ত লোক নাই। এ লেখাটি পড়ার পর প্রতিটি পয়েন্ট অনুযায়ী নিজেকে প্রস্তুত করলে দুই দিকের হতাশা অনেকটাই কমে আসবে।

মিলিয়ে দেখুন, আপনি কতটুকু প্রস্তুত চাকরি পাওয়ার জন্য:

– আপনার কি আধুনিক প্রফেশনাল স্ট্যান্ডার্ড সিভি প্রস্তুত রয়েছে?

– আপনার টেকনিক্যাল নলেজ কি বর্তমান যুগের চাহিদার সাথে যথেষ্ট?

– আপনার কি যুগের চাহিদা পূরণে অন্যান্য যোগ্যতা রয়েছে, যা আপনার সিভিকে সমৃদ্ধশালী করবে?

– পূর্বের চাকরির অভিজ্ঞতা না থাকলেও সিভিতে উল্লেখ করার মত এমন কোন অতীত কর্মকাণ্ডের অভিজ্ঞতা কি রয়েছে যা দেখে চাকরিদাতা আপনার যোগ্যতার ব্যাপারে হালকা ধারনা পাবে?

– কমিউনিকেশন দক্ষতা এ যুগের সবচেয়ে চাহিদা সম্পন্ন যোগ্যতা। এ যোগ্যতার ব্যাপারে আপনি নিজেকে কত মার্ক দিতে পারবেন?

চাকরিদাতাদের কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা

– বেকারদের হতাশাভরা গল্প শুনে থাকলেও জব পোস্টের বিপরীতে সিভি পাওয়া যায় ১০-১২টা

– সিভি পাঠানোর ধরন দেখলেই প্রথমেই বাদ পড়ে যায় ৮০% (মেইলের সাবজেক্টে মেইল করার কারণ উল্লেখ নাই। মেইলে ঢুকলে কভার লেটার নাই। অনেকে মেইল না করে ফেসবুকে সিভি দেয়।)

– সিভি পড়ার পর বাকি ১০% বাদ পড়ে যায়। সিভির ফরম্যাট দেখে অফিসের পিয়ন পদের জন্যেই শুধুমাত্র তাকে বিবেচনা করা যায়।

– এতগুলো বাদ পড়ার পর যে ভাগ্যবানরা ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাক পায়, তাদের ইন্টারভিউ নিতে গিয়ে ইন্টারভিউ বোর্ডে উপস্থিত কর্তাব্যক্তিদের কণ্ঠে সময় নষ্ট করার জন্য হতাশার কথা শোনা যায়।

চাকরি পাওয়ার যোগ্য হিসেবে প্রস্তুতিতে কয়েকটি পরামর্শ

– অনলাইনে সার্চ দিলে প্রফেশনাল সিভি ফরম্যাট পাওয়া যায়, সেগুলোর কোনটাকে অনুসরণ করে নিজের সিভি তৈরি করে রাখুন।

– যত চাকরির অফার দেখবেন, আপনার যোগ্যতার সঙ্গে মিললে সবগুলোতে সিভি সেন্ড করুন।

– সিভি পাঠাতে অবশ্যই মেইলের সাবজেক্টে মেইল করার কারণটি উল্লেখ করুন।

– মেইলের ভিতরে অবশ্যই কভার লেটার লিখুন, সেটি আপনার ব্যাপারে পজিটিভ ধারণা তৈরি করবে।

– সিভিতে একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ডের চেয়ে দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা চাকরিদাতাকে আকর্ষিত করে। তাই ছাত্রজীবনেই দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা অর্জনের টার্গেট নির্ধারণ করুন।

– টেকনিক্যাল নলেজ বর্তমান যুগের যেকোনো চাকরির জন্য অত্যাবশ্যকীয় যোগ্যতা। তাই এ দক্ষতা অর্জনে সময় দিন।

সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করার পর ৪০-৫০টা চাকরির অফারে আবেদন করুন। আশা করি, তখন চাকরি না পাওয়ার হতাশাকে ঢাকতে সান্ত্বনাবানী হিসেবে পরিবারকে কিংবা কাছের মানুষকে বলতে হবে না, মামা-চাচা নাই দেখে চাকরি হচ্ছে না।

মো. ইকরাম  প্রধান সমন্বয়ক, বইবাজার ডটকম

সূত্র: যুগান্তর

Sharing is caring!

Leave a Comment