অমঙ্গলজনক সাত আচরণ !
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা রাজ্যের ‘প্রটোকল স্কুল অব পাম বিচ’-এর প্রতিষ্ঠাতা জ্যাকুলিন উইটমোর। তিনি নিজের পরিচয় দেন লেখক ও শিষ্টাচার বিশেষজ্ঞ হিসেবে। কর্মক্ষেত্রের আদবকেতা নিয়ে নিয়মিত লিখে থাকেন উদ্যেক্তা বিষয়ক জনপ্রিয় ওয়েবসাইট এন্টারপ্রেনারে। জ্যাকুলিনের একটি নিবন্ধ ইংরেজি থেকে ভাষান্তর করেছেন মারুফ ইসলাম।
শিষ্টাচার সাফল্যের অন্যতম পূর্বশর্ত। কি ঘরে কি বাইরে, কি কর্মক্ষেত্রে কি পরিবারে-সবখানে আপনাকে শিষ্টাচার মেনে চলতে হবে। আদবকেতা কিংবা শিষ্টাচার একটি জীবনব্যাপী চর্চার বিষয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মাঝেমধ্যেই আদবকেতা বিষয়ে কর্মশালার আয়োজন করে থাকে আর সেখানে তাদের প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সামনে আমাকে কিছু না কিছু বলতে আমন্ত্রণ জানায়। এরকম অনেক কর্মশালায় অংশ নিয়েছি আমি। কর্মীরা নানা ধরনের প্রশ্ন করেন। বেশির ভাগই জানতে চান কী ধরনের আচরণ করা উচিত। কিন্তু এক কর্মশালায় এক কর্মী আমাকে জিজ্ঞিস করেছিলেন, কোন কোন আচরণ পরিত্যাগ করা উচিত। এই প্রশ্ন আমাকে প্রবলভাবে নাড়া দিয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে চাই সাত ধরনের আচরণ থেকে সারাজীবন দূরে থাকা উচিত।
১. আমিই সঠিক, আমিই সেরা
- আমিই সেরা, আমিই ঠিক, আমি যা করছি সেটাই সঠিক- এধরনের আচরণ শুধু কর্মক্ষেত্রে নয় জীবনের জন্যই ক্ষতিকর। তাই কর্মক্ষেত্রে ‘স্বতন্ত্র’ ও ‘আলাদা’ বৈশিষ্ঠ পরিত্যাগ করুন। সহকর্মীদের মাঝে নিজেকে ‘একক ও অনন্য’ দাবি করবেন না। চেষ্টা করবেন সবার সাথে সমানভাবে মিশতে।
২. দেখবো না শুনবো না শিখবো না
- কর্তৃত্ববাদী ব্যাক্তিরা চোখ কান বন্ধ রাখেন। তারা কিছু দেখতে চান না, শুনতে চান না, শিখতেও চান না। আবার আরেক ধরনের মানুষ আছেন যারা ভয়ানক নির্লিপ্ত। তারও চোখ-কান বুজে চলেন। এই দুই ধরনের মানুষই ক্ষতিকর। নিরবতা সব সময় দ্যুতিময় হয় না। মৌনতাও সব সময় সম্মতির লক্ষণ নয়। সময় বদলাচ্ছে। বদলে যাওয়া সময়ের সঙ্গে আপনার অচরণেরও পরিবর্তন আনা উচিত। তাই আজ থেকে সরব হোন, স্পষ্টবাদী হোন। চোখ-কান খোলা রাখুন। চারপাশকে চোখ মেলে দেখুন, চারপাশের আওয়াজ শুনুন এবং চারপাশ থেকে শিক্ষা নিন।
৩. একা থাকা নয় বেশ থাকা
- অনেকেই ভেবে থাকেন, একা আছি বেশ আছি। নিজের মতো খাচ্ছি দাচ্ছি কাজ করছি, কোনো ঝুট ঝামেলা নেই। এই তো বেশ আছি! না, এ ধরনের আচরণ কোনোভাবেই ভালো নয়। আপনার মুখের ওপর কেউ কিছু না বললেও নিশ্চিত জেনে রাখুন আড়ালে সবাই আপনাকে অসামাজিক বলে ডাকে। এ ধরনের বিচ্ছিন্নতাবাদী মনোভাব ও আচরণ আজই পরিত্যাগ করুন। কর্মক্ষেত্রে সফল হতে হলে সামাজিক হতে হয়। অনেক মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হয়। কে না জানে, যুগটাই এখন নেটওয়ার্কিয়ের যুগ। তাই যার সাথে যত মানুষের নেটওয়ার্ক তিনি তত বেশি শক্তিশালী। যোগাযোগ বাড়ায় দক্ষতা। তাই যত বেশি সম্ভব মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ান।
৪. শুধু চোখ বুলিয়ে যাওয়া নয়
- অফিসে কত ঘটনায় না ঘটে। সবকিছু শুধু চোখ মেলে ক্যামেরার মতো দেখলে চলবে না। অন্তর্দৃষ্টিকে শানিত করুন। ঘটনাগুলোকে পর্যবেক্ষণ করুন। একটি জরিপে দেখা গেছে যার পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা যত বেশি তিনি জীবনে তত বেশি সফল। তাই জীবনে সাফল্য পেতে হলে পর্যবেক্ষক হয়ে উঠুন। শুধু অফিসে নয়, আপনার চারপাশে কত ঘটনাই তো ঘটে সেসব অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে পর্যবেক্ষণ করুন। কোনো ঘটনাকেই শুধু চোখের দেখা হিসেবে দেখবেন না।
৫. বাচালতা পরিত্যাজ্য
- বাচালের মতো শুধু বকবক করবেন না। কথা বলার আগে ভেবেচিন্তে বলুন। প্রবাদ আছে, কথায় চিড়ে ভেজে। অতএব ভেবেচিন্তে এমন কথা বলুন যাতে আপনার কাজ উদ্ধার হয়। বেশি কথা বলা ব্যাক্তিত্বহীনতার জন্ম দেয়। ব্যাক্তিত্ববান হয়ে উঠতে চাইলে কথা কম বলুন, কাজ বেশি করুন। প্রয়োজনীয় কথার বাইরে কোনো কথা নয়। বাচালতা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
৬. না ভাবিয়া নয় কাজ
- প্রবাদ আছে, ভাবিয়া করিয়ো কাজ, করিয়া ভাবিয়ো না। অতএব কোনো কাজের আগে দশবার ভাবুন। বিশেষ করে কোনো চাকরিতে যোগ দেওয়ার আগে একাধিকবার ভাবুন। যে চাকরিতে যোগ দিতে যাচ্ছেন সেটা আপনি পছন্দ করেন কিনা। যে প্রতিষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছেন সেই প্রতিষ্ঠানের কাজের পরিবেশ কেমন, কর্মীদের সুযোগ সুবিধা কেমন, বেতন কেমন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে গবেষণা করুন, তথ্য জোগাড় করুন, তারপর চাকরিতে যোগ দিন।
৭. ভিন্নতাকে ভয় নয়
- প্রবীনরা নতুন কিছুকে গ্রহণ করতে ভয় পান। ভিন্নতা পছন্দ করেন না তারা। তারা গতানুগতিক জীবনকে ভালোবাসেন। এসব ব্যাক্তিরা জীবনে সফল হোন খুব কম। কর্মক্ষেত্রে সফল হতে হলে নতুনত্বকে গ্রহণ করুন। ভিন্নতাকে আলিঙ্গন করুন এবং মেনে নিন। মনে রাখবেন, নতুন মানেই নেতিবাচক নয়। আপনার যেহেতু পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা রয়েছে, অতএব নতুন এবং আলাদা যেকোনো কিছুকে পর্যবেক্ষণ করুন, তারপর মেনে নিন।
এন্টারপ্রেনার অবলম্বনে