অভ্যাস গড়ুন সফল হোন
শামীম রিমু : সাফল্যের স্বর্ণশিখরে পৌঁছাবার ক্ষেত্রে মানুষ দক্ষতা এবং প্রতিভাকে সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দিয়ে থাকে। কিন্তু প্রতিভা বা দক্ষতার পাশাপাশি কিছু দৈনন্দিন অভ্যাস চর্চা আপনাকে সাফল্যের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে, সাফল্যের দিকে আপনার গতিকে করবে ত্বরান্বিত। এমনকি এসব অভ্যাস চর্চা না করে থাকলে, আপনার চেয়ে বেশী দক্ষ বা প্রতিভাবান ব্যক্তিরাও আপনার উচ্চতায় পৌঁছতে গিয়ে হিমশিম খাবে। জেনে নিন এমন কিছু অভ্যাস সম্পর্কে।
- আপনি যদি নিয়মানুবর্তী হন এবং সময়ের কাজ সঠিক সময়ে করে থাকেন, তবে অন্যের চোখে আপনি হয়ে উঠবেন নির্ভরযোগ্য এবং পরিশ্রমী। মানুষ আপনাকে বিশ্বাস করবে, শ্রদ্ধা করবে এবং ভেবে নেবে আপনি অন্যদের সময়ের মূল্যায়ন করতে জানেন। সফল মানুষেরা তাদের সময়কে সবচেয়ে মূল্যবান পণ্য বা পুঁজি মনে করে থাকে। আপনি যদি এমন কোনো ব্যক্তির সাথে সাক্ষাতের পূর্বনির্ধারিত সময়ের চেয়ে দেরীতে পৌঁছান, তাহলে তাঁদের মূল্যবান সময়ও অপচয় হবে। আপনি আস্থা হারাবেন। অন্যদিকে, সময়ের সাথে নিজেকে সুসংগঠিত করে তুললে আপনার মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে, আপনি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবেন।
২। কাজের ব্যাপারে নীতিরক্ষা করা
- গা বাঁচিয়ে, নামমাত্র পরিশ্রম করে আপনি যদি আপনার দক্ষতা বা প্রতিভার ওপর ভরসা করে থাকেন, তবে জেনে রাখুন, তা সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছাবার জন্য পর্যাপ্ত নয়। আপনার কার্যনীতি যদি আপনার রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে থাকে তবেই আপনি সফল হয়ে উঠবেন। আপনার কাজ, সহকর্মী ও কর্মদাতা, এসবের ওপর আপনার অপরিসীম শ্রদ্ধা থাকতে হবে। কার্যনীতির বেলায় আপনি যদি কখনোই ছাড় না দিয়ে থাকেন, তবে দেখবেন সেই গুণটি আপনাকে কর্মপরিসরের সকলের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করছে। দলগত কাজের ক্ষেত্রে প্রত্যেক ব্যক্তিকে মূল্যায়ন করুন। কঠোর দায়িত্ববোধের পাশাপাশি আপনার কাজের গুণমানের ওপর জোর দিন, এতে সবাই আপনার প্রতি আকৃষ্ট হবে, আপনার সিদ্ধান্ত ও পরামর্শগুলোকে মূল্যায়ন করবে।
৩। সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা করা
- প্রকৃত সাফল্যের জন্য আপনার সুপ্ত গুণাবলীকে কাজে লাগাতে কঠোর পরিশ্রম করুন। লক্ষ্য নির্ধারন করুন, নিয়মানুবর্তিতা গড়ে তুলুন, সঠিক পদক্ষেপে এগিয়ে যান, ধৈর্য হারাবেন না। মনে রাখবেন, কঠোর পরিশ্রম ও সর্বোচ্চ প্রচেষ্টার কোনো বিকল্প নেই। হেনরি ফোর্ড বলেছেন, ‘যতটা পরিশ্রম করবেন, ততোটাই ভাগ্যবান হয়ে উঠবেন।’ কঠোর পরিশ্রমকে উপভোগ করতে শিখুন, নির্ধারিত লক্ষ্যে পৌঁছে যাবেন। প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব গড়ে তুলুন, এটি আপনার কঠোর পরিশ্রমের জন্য শক্তির খোরাক হয়ে উঠবে। মেনে নিন, কোনো কিছুই এ পৃথিবীতে সহজে পাওয়া যায় না, সফলতা তো নয়ই!
৪। ইতিবাচক মনোভাব ধারন করা
- সাফল্যের পথে সবচেয়ে বড় অন্তরায় আপনার নেতিবাচক চিন্তা। নেতিবাচক চিন্তা ও ‘না’-ধর্মী বক্তব্য এড়িয়ে চলুন। শুধুমাত্র হাঁ-বোধক শব্দ ও বাক্য ব্যবহার করুন। সকল ঘটনা ও পরিস্থিতিকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে গ্রহণ করুন। যা ঘটে গেছে, তা দিয়ে নয়, ঘটনাটিকে আপনি কীভাবে নিচ্ছেন, সেই দৃষ্টিভঙ্গি আপনার মনোভাব নির্ধারণ করে। নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির চেয়ে বিষাক্ত আর কিছু নেই, তাই আপনার ইতিবাচক চিন্তা, অনুপ্রেরণা ও উদ্দীপনাকে কাজে লাগান, দেখবেন সফলতার গোপন চাবিকাঠি আপনার হাতের মুঠোয়।
- স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল, তাই শরীরের যত্ন নিন, নয়তো মানসিক দৃঢ়তাকে কাজে লাগাতে পারবেন না। ভাজা-পোড়া, ক্যাফেইন, নিকোটিন হয়তো আপনাকে দপ করে জ্বলে উঠতে সাহায্য করতে পারে, কিন্তু দ্রুত নিভে যাওয়া থেকে ঠেকাতে পারবে না। পর্যাপ্ত সুষম খাবার খান, পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন, প্রচুর পানি পান করুন, প্রতি ভোরে ব্যায়াম করুন। ভুলে যাবেন না, শারীরিক সুস্থতাই মানসিক বলের উৎস।
৬। কাজের প্রতি আবেগী হওয়া
- আত্মবিশ্বাসের মূলে থাকে আবেগ। আবেগ আপনার পথনির্দেশক, অন্যকে পথপ্রদর্শনেও সাহায্য করে আপনার আবেগ। এটি আপনাকে উদ্দীপ্ত করে তোলে, আপনার চারপাশে উদ্যমের বলয় তৈরি করে। তাই আপনার সহকর্মীরাও হয়ে ওঠে আত্মবিশ্বাসী, দলের কর্মক্ষমতা বেড়ে যায়, সবাই বিজয়ের স্বাদ লাভ করতে পারে। কর্মক্ষেত্রে আপনাকে সবাই আদর্শ হিসেবে ধরে নেয়। তাই কাজের ব্যাপারে আবেগী হয়ে উঠুন, কাজকে ভালোবাসতে শিখুন।
৭। শেখার চেষ্টা করা
- ব্যক্তিগত উন্নয়নের জন্য হোক বা দলগত, শিখতে কার্পণ্য করবেন না। যা জানেন তা জাহির না করে, মনোযোগ দিয়ে আবার শুনুন, হয়তো নতুন করে কিছু শিখতে পারবেন, নয়তো আপনার জ্ঞান আবার ঝালাই হবে। শেখার ক্ষেত্রে আত্মসম্মানবোধকে বিশ্রাম দিন। প্রয়োজনবোধে প্রশ্ন করুন। এতে আপনার দূর্বলতা প্রকাশ পায় না, বরং আপনার নিরহঙ্কারী চরিত্র ফুটে ওঠে। প্রতিদিন নতুন কিছু শেখার অভ্যেস গড়ে তুলুন।
৮। যে কোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকা
- আপনি কতটা প্রস্তুত তার ওপর আপনার সাফল্যের সম্ভাবনা নির্ভর করে। আপনার কর্মদাতা আপনার সর্বোচ্চটাই চায়, তারা চায় আপনার ওপর নির্ভর করতে। তাই নিজের কাছেই জানতে চান, আপনার প্রস্তুতিতে আপনি নিজে কী সন্তুষ্ট? প্রস্তুতির অভাব আত্মবিশ্বাসের ঘাটতির অন্যতম কারণ। তাই যতটা সম্ভব প্রস্তুত হয়ে থাকুন।
এই অভ্যাসগুলো সাফল্যের পথে আপনার যাত্রাকে গতি এনে দেবে, আপনাকে করে তুলবে অনন্য। তাই শুধুমাত্র প্রতিভা ও দক্ষতার উপর নির্ভর না করে এসব অভ্যাস চর্চা শুরু করে দিন, চালিয়ে যান জীবনভর। সাফল্য যে কোনো সময় আপনার দরজায় কড়া নাড়তে পারে, তাই প্রস্তুত থাকুন!