বেতন : কত চাই, কেন চাই
- শামীম রিমু
চাকরির সাক্ষাৎকারে প্রার্থীকে তার প্রত্যাশিত বেতন সম্পর্কে প্রশ্নের সম্মুখীন করা এখন একটি নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন কথাও প্রচলিত আছে যে, এই একটি প্রশ্নের উত্তরেই প্রকাশ পেয়ে যায় প্রার্থীর চিন্তা, দৃষ্টিভঙ্গি, অভিজ্ঞতা ও দূরদর্শীতা। তাই এমন সব প্রশ্নের উত্তরে চটপটে, বুদ্ধিদীপ্ত ও চিত্তাকর্ষক জবাব দিতে কিছু বিষয় মাথায় রাখুন।
১. এক কথায় জবাব দেবেন না
- প্রশ্নকর্তা যদি জানতে চান, মাসিক বেতন কত হলে আপনার সন্তুষ্টি-তবে উত্তরটা একটু বর্ণনামূলক হওয়াটাই ভালো। এক কথায় জবাব দেবেন না, নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা বলবেন না। চাকরিদাতার লক্ষ্য থাকবে সবচেয়ে কম বিনিয়োগে বেশী লাভ তুলে নেওয়ার। তাছাড়াও প্রার্থী আপনি একা নন। সবচেয়ে ভালো হয় আপনি যদি আপনার চাহিদা অনুযায়ী প্রত্যাশিত বেতনের একটা সীমানা নির্ধারণ করে দেন।
২. তুলনাভিত্তিক জবাব দিন
- অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে একই কাজের জন্য কত বেতন দেওয়া হয়, সে ব্যাপারে জ্ঞান রাখুন। আপনার চাকরিজীবী বন্ধুটিকে জিজ্ঞেস করুন, এ ব্যাপারে আলোচনা করুন। প্রশ্নের উত্তরে উৎসরিত জ্ঞান থেকে এসব তথ্য প্রকাশেও আপনার জবাব দেওয়া হয়ে যেতে পারে।
৩. এক লাফে আকাশ ছুঁতে চাইবেন না
- চাকরিতে যোগ দেয়ার শুরুতে বেতন তুলনামূলক কম থাকাটা স্বাভাবিক। সময়ের বিবর্তনে, প্রতিষ্ঠানের জন্য যদি আপনি অত্যাবশ্যক হয়ে ওঠেন তবে প্রতিষ্ঠানও আপনার চাহিদার উর্ধ্বগতির দিকে খেয়াল রাখবে।
৪. যোগ্যতা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অনুযায়ী আকাঙ্ক্ষা করুন
- আপনার চাহিদার ব্যাপারে যৌক্তিকতার পরিচয় দিন। নিজের যোগ্যতা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অনুযায়ী চাহিদা প্রকাশ করুন।
৫. পরিষ্কার হতে প্রশ্ন করুন
- চাকরিদাতা কী মূল বেতন নিয়ে প্রশ্ন করছেন নাকি বেতনের অন্যান্য শাখা ও বাড়তি সুবিধাসহ মোট অংক জানতে চাইছেন, সে ব্যাপারে পরিষ্কার হতে প্রয়োজনে পাল্টা প্রশ্ন করুন।
৬. প্রশ্নের মাঝেই উত্তর খুঁজুন
- ঝটপট উত্তর না দিয়ে প্রশ্নকর্তাদের আলাপচারিতা, বাচনভঙ্গি এবং প্রশ্নের ধরন লক্ষ্য করুন। আপনার কী জবাব হওয়া উচিৎ- সে ব্যাপারে তাঁদের প্রশ্নের মাঝেই একটি স্বচ্ছ ধারণা পেয়ে যেতে পারেন।
৭. পরিস্থিতিভেদে এড়িয়ে চলুন
- হতে পারে আপনি সচ্ছল, কাজটিকে আপনি ভালোবাসেন অথবা প্রতিষ্ঠানের সুনাম আপনি নিজের কাজে ব্যবহার করতে চান। বিশেষ কোনো চাহিদা না থাকলে এসব প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। যোগদানের পর অদূর ভবিষ্যতেও এ ব্যাপারটি নির্ধারিত হতে পারে।
৮. দূরদর্শীতার পরিচয় দিন
- ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে জবাব দিন। আপনি আসলে কাজটি করবেন কি না, কতদিনের জন্য করবেন, আপনার চাহিদা বৃদ্ধি পেতে পারে কি না এসব ব্যাপারে আগেই ভেবে নিন। বর্তমান চাহিদার কাছাকাছি বেতন হলে আপনি যোগদান করে ফেলতে পারেন, কিন্তু বর্তমান চাহিদা পূরণ হবার পর আপনার চাহিদা বৃদ্ধি পেতে পারে কি না সে ব্যাপারেও ভাবুন।
তবে কোনো পন্থাকেই আপনার বিশেষত্ব ধরে নিয়ে মনে গেঁথে নেবেন না। কাজের ধরন, প্রতিষ্ঠানের ধরন এবং প্রশ্নকর্তার মনোভাব অনুযায়ী নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবেন। সাক্ষাৎকার কক্ষের চলমান পরিবেশকে প্রাধান্য দিন, সফলতা আসবেই।