কত্ত রকম ব্যবস্থাপনা!

কত্ত রকম ব্যবস্থাপনা!

  • রোজালিন্ড কার্ডিনাল

যখন কোনো প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার তথা ব্যবস্থাপককে জিজ্ঞেস করি, কোন কোন বিষয় একজন ব্যবস্থাপককে ‘ভালো ব্যবস্থাপকে’ পরিণত করে তার একটা তালিকা দিতে পারবেন? তখন বেশিরভাগ ব্যবস্থাপকই উত্তর দেন, ‘তালিকা করার কিছু নেই, এটা যার যার আচরণের ওপর নির্ভর করে।’

আচরণ, মানে যাকে ইংরেজিতে বলে স্টাইল? তারা হেসে বলেন, ‘হ্যাঁ, স্টাইল।’

তাহলে দেখা যাচ্ছে, ব্যবস্থাপনাও এক ধরনের স্টাইল। এবং ব্যাক্তিভেদে স্টাইল যেহেতু আলাদা হয় সেহেতু ম্যানেজমেন্ট স্টাইলও ভিন্ন ভিন্ন হওয়াই স্বাভাবিক। আমি বেশ ক’জন ব্যবস্থাপকের সঙ্গে কথা বলে অন্তত ৬ ধরনের ব্যবস্থাপনার রীতি খুঁজে পেয়েছি।

category-leadership-management-6১. দাদাগিরি স্টাইল

২. স্বপ্নদর্শী স্টাইল

৩. সংযুক্তকরণ স্টাইল

৪. গণতান্ত্রিক স্টাইল

৫. গতিময় স্টাইল

৬. প্রশিক্ষণ স্টাইল

এই ছয় স্টাইলের ওপর আমি একটা অনুষ্ঠান করেছিলাম। অংশগ্রহণকারীদের ছয়টি দলে ভাগ করেছিলাম এবং প্রত্যেক দলে একজন অধিনায়ক নির্বাচিত করেছিলাম যিনি কোনো একটি স্টাইল ব্যবহার করবেন। আমি তাদের হাতে একসেট প্রশ্ন ধরিয়ে দিয়েছিলাম আর বলেছিলাম, ৩০ থেকে ৪০ মিনিটের মধ্যে উত্তর দিতে হবে। প্রশ্নগুলো ছিল খুবই সহজ। তারপর কী ঘটল তাই দেখুন:

দাদাগিরি স্টাইলের অধিনায়ক তার দলের সদস্যদের নির্দেশ দিতে শুরু করলেন কীভাবে নিয়ম মেনে কাজ করতে হবে এবং কাজের সর্বোচ্চ মান ধরে রাখতে হবে। ঠিক এই মুহুর্তে আমি দলপতির ফোনে একটি কল করি। তিনি ফোন রিসিভ করতে ঘর থেকে বাইরে আসেন। আর তিনি যখন ঘর থেকে বাইরে আসেন তখনই দলের অন্য সদস্যরা কাজ থামিয়ে দেন। চল্লিশ মিনিট পর দেখা গেল, দলের প্রত্যেকেই ভীষণ হতাশ এবং রাগান্বিত। সবশেষে অধিনায়ক বললেন, ‘এই স্টাইল অতিমাত্রায় তদারকিপ্রবণ। অর্থাৎ প্রত্যেক কর্মীর ওপর সবসময় নজরদারী করতে হয়। সব জায়গায় সব সময় নজরদারী অত্যন্ত বিরক্তিকর একটা ব্যাপার!’

এবার স্বপ্নদর্শী অধিনায়কের পালা। তিনি প্রথমেই তার দলের সদস্যদের পুরো বিষয়টি পরিষ্কার বুঝিয়ে দিলেন। তারপর পেছনে গিয়ে বসে থেকে তাদের কাজ দেখতে থাকলেন। এবং সবশেষে তিনি প্রতিবেদন দাখিল করলেন এই বলে, ‘এটা খুব সহজ একটি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি। আমাকে তেমন কিছু করতে হয়নি। আমাকে শুধু একটি কৌশল বের করতে হয়েছে যে কৌশলের মধ্য দিয়ে কর্মীদের কাছ থেকে কাজ আদায় করে নেওয়া যায়।’

সংযুক্তকরণ স্টাইলের নেতা নিজেই বিভন্ন বিষয় তার দলকে সাহায্য করতে লাগলেন। প্রায়ই তিনি এক কাপ চা নিয়ে কর্মীদের চেয়ারের পাশে বসেন এবং গল্প করতে থাকেন। মাঝে মাঝে দলের সদস্যরা অন্যদের দিকে তাকাচ্ছিলেন এবং উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছিলেন এটা দেখে যে, সবাই তো কাজ করছে! চল্লিশ মিনিটের সময়সীমা অতিক্রান্ত হওয়ার পর দলের সদস্যরা জানালেন যে তারা পরষ্পরের গল্প বেশ উপভোগ করেছেন। ভয়ডরহীন এবং ভাবনাহীন পরিবেশ তাদেরকে আনন্দ দিয়েছে বলেও জানান। কিন্তু দলপতি প্রতিবেদনে বললেন, ‘দলের একাগ্রতা ধরে রাখাই এই স্টাইলের প্রধান চ্যালেঞ্জ। আমার মনে হয়েছে একটা সময় গিয়ে এরা সবাই আমাকে অসুস্থ করে তুলবে।’

এবার গণতান্ত্রিক অধিনায়কের কাছে যাওয়া যাক। তিনি শুরু করেছিলেন একটি প্রশ্নের মাধ্যমে। বলেছিলেন, আপনারা কী করতে পছন্দ করেন? অনেকই অনেক ধরনের পছন্দের কথা বলেছেন। লং ড্রাইভে থেকে কফি পান পর্যন্ত। শেষে তারা অবিষ্কার করলেন, তারা সময়টা উপভোগ করেছেন বটে তবে কাজ করেছেন অন্যদের তুলনায় ধীর গতিতে। তাদের কাজের অগ্রগতি সঠিকভাবে হয়নি। সবশেষে দলপতি বললেন, ‘এই স্টাইল খুবই, খুবই, খুবই সহজ। আমাকে কোনো সিদ্ধান্তই নিতে হয়নি।’

গতিময় স্টাইল। নাম দেখেই বোঝা যাচ্ছে, এই স্টাইলে ব্যবস্থাপনা করতে গেলে থামা যাবে না কিছুতেই। দলকে পরিচালিত করতে হয় অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে এবং অনুপ্রেরণার সঙ্গে। এই স্টাইলের দলনেতা বলেন, ‘কখনোই একা একা পারফর্ম করতে যাবেন না। কাজ করতে হয় সব সময় দলগতভাবে।’ দলপতি আরও বলেন, ‘এটা সত্যিই দারুণ এক পদ্ধতি। তবে দলের গতি এবং লক্ষ্য ধরে রাখাই চ্যলেঞ্জ।’

প্রশিক্ষণ স্টাইলের দলনেতা প্রথমেই গুরুত্ব দিলেন শিখন অভিজ্ঞতার ওপর। যখন দলের কেউ একজন সঠিকভাবে কোনো একটি অনুশীলনী আয়ত্ব করতে পারে তখন দলপতি বলেন, এই শিক্ষার্থীর প্রশিক্ষণ সম্পূর্ণ হয়েছে। অতএব অন্য একজনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হোক। এভাবেই তিনি দলের প্রত্যেক সদস্যকে দক্ষ করে তুলতে চাইলেন। কিন্তু চল্লিশ মিনিট পেরিয়ে যাওয়ার পর তিনি প্রতিবেদন দাখিল করলেন এই বলে যে, ‘এটা দুর্দান্ত এক স্টাইল। তবে মনে রাখা প্রয়োজন, এই স্টাইলটি নির্ভর করে পরিস্থিতির ওপর।’

ছয় ধরনের স্টাইল-ই তুলে ধরা হলো আপনার কাছে। এবার বেছে নিন আপনার স্টাইল!

X6whf_Sgরোজালিন্ড কার্ডিনাল : অস্ট্রেলীয় লেখক। প্রধান পরামর্শক, শেপিং চেঞ্জ।

অনুবাদ : মারুফ ইসলাম

সূত্র : হাফিংটন পোস্ট।

Sharing is caring!

Leave a Comment