সাতে সাফল্য
- শিমি আক্তার
আপনার যদি মনে হয় মানসিক চাপের কারণে আপনার স্বাভাবিক কাজ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে, আপনার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুখ-সমৃদ্ধির উপর প্রভাব পড়ছে, মনে রাখবেন এ সমস্যা আপনার একার নয়। আজ আমাদের মধ্যে প্রায় সকলেই অল্প সময়ের মধ্যে অধিক কাজ করতে চায়। আমরা প্রতি মূহূর্তে স্বল্প সময়ে সবদিক দিয়ে আরো অধিক চাহিদা পূর্ণ জীবন যাপন করতে চাই, কাজের ক্ষেত্রে, পরিবারে ক্ষেত্রে, সমাজের ক্ষেত্রে, স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে ইত্যাদি। এর ফলে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যে, আমাদের সুস্থতায় এবং কাজের নৈপূণ্য প্রদর্শনে চাপ পড়ে। কিন্তু আপনার নিজেকে নিজেই সাহায্য করার অনেক উপায় রয়েছে। সফল ব্যাক্তিরা তাদের চাপ কমাতে সাতটি রীতি অনুসরণ করে যা এখানে দেয়া হলো।
১. নিজস্ব সীমা নির্ধারণ
- গতিশীল বিশ্বের এই দিনে চাপ অনুভব করা খুবই সহজ একটা ব্যাপার, কিন্তু কোন দায়িত্ববান ব্যক্তিই জীবন চলার পথে সব নিয়ম মেনে চলতে পারে না। আপনার কর্মজীবনে রীতিনীতির সীমারেখায় উন্নতি সাধন করতে হবে। আপনার সীমানা নির্ধারণ করতে হবে কয়েকটা জিনিস মাথায় রেখে। যেমন: আপনি কখোনোই রাত আটটার পর ফোন কল চেক করবেন না, এর দুই-এক ঘন্টা পর ই-মেইল করবেন না, পরিবার বা বন্ধু-বান্ধব পাশে থাকলে আপনার নির্ধারিত সময়ের বিঘ্ন ঘটাবেন না।
২. অভিযোগেই প্রশান্তি
- আপনি যদি প্রতিদিন এককাজ থেকে অন্যকাজে, এক প্রকল্প থেকে অন্য প্রকল্পে, এক ডাকে থেকে অন্য ডাকে, এক সভা থেকে অন্য সভায় ছুটে বেড়ান, ব্যস্ততা শব্দটি তখন বোঝা যায়। বেপরোয়াভাবে আমরা যখন কোন কিছু করতে যাই তা ভালো ফল বয়ে আনে না। এমনকি আপনি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে যদি সামান্য কয়েক সেকেন্ডের জন্য কোনো অভিযোগ করেন– সেটা গাড়িতে হোক বা আপনার ডেস্কে বা ফোন কলের মাধ্যমে, এটা আপনার মানসিক চাপমুক্ত হতে সহায়তা করবে, এবং শান্ত ও শিথিল হতে পথ নির্দেশনা দেবে।
৩. গভীর ধ্যানে মগ্ন হওয়া
- আপনি যদি একটু সময় নিয়ে নিয়মিত ধ্যান করেন আপনি শারীরিক ও মানসিক উভয় দিক দিয়েই উপকৃত হবেন। অভিজ্ঞতার আলোকে দেখা যায় যাঁরা নিয়মিত ধ্যান করেন তাঁরা তুলনামূরক বেশি সুখি হন, দুশ্চিন্তা কমে যায় এবং মনোসংযোগ ও উদ্দেশ্য অর্জনের সুখানুভুতি বেড়ে যায়। এমনকি কিছু গবেষণায় পাওয়া যায় আমাদের সামর্থ্যরে সাথে ধ্যানের যোগসুত্রতা রয়েছে যা অসুস্থতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।
৪. কর কম, পাবে বেশি
- যে কোনো পরিকল্পনা সহজেই করতে পারবেন কিন্ত তার বাস্তবায়ন করা কঠিন। আপনি পরিকল্পনা করে সময় কাটালেন কিন্তু সেই মোতাবেক কোনো কাজ করলেন না তাহলে আপনার সময়ই শুধু অপচয় হবে। প্রথম ও প্রধান কথা হলো আমরা মানবজাতি, যন্ত্র নই। বহুমুখী ও অতিরিক্ত কাজ উত্তেজনা, হতাশা ও অন্যান্য কঠিন সমস্যা বাড়িয়ে দেয়। নিজেকেই নিজের পথপ্রদর্শক হতে হবে, একটু ধীর গতিতে এগোতে হবে এবং নিয়মিত কিছু আলাদা সময় বের করতে হবে যা আপনাকে প্রশান্তি দেবে, স্বাচ্ছন্দ ও সুখি করবে।
৫. চারদিকে ঘোরাফেরা করুন
- চলাফেরা বা কর্র্মচাঞ্চল্য হলো এমন একটি জিনিস যা প্রতিদিনই দরকার। এছাড়া চলাফেরা করলে মানসিক চাপ দুর হবে, যা শরীরে শক্তি ছড়িয়ে দেয়ার আরও অন্যতম ভালো একটা পথ। যখন আপনি দ্রত হাঁটাচলা করবেন অথবা অন্য ধরনে ব্যয়াম করবেন, আপনার শরীর নির্দেশনা স্নায়ুতে প্রেরণ করবে , যাঁর ফলে আপনার মানসিক অবস্থার উন্নতি হবে এবং ভালো করার জন্য আপনার ইন্দ্রিয় অধিকতর কাজ করবে। গবেষণায় বলা হয় যে যে, এটা মস্তিস্কে রক্ত সঞ্চালনেও উন্নতি ঘটায়। নিয়মিত ব্যয়াম করলে এমনকি যখন আপনি কোন সমস্যা নিয়ে গভীরভাবে ভাবছেন তখন নিরিবিলি পরিবেশে ১৫মিনিট হাঁটতে থাকুন আর চিন্তা করতে থাকুন দেখবেন ভালো ফল পাবেন।
৬. ঘুম আবশ্যক
- একদিনে অনেক কাজ সম্পন্ন করার জন্য, ঘুমকে একটা যৌক্তিক যায়গায় রাখা হয়েছে এবং এর জন্য আপনাকে যথেষ্ট সময় দিতে হবে। কিন্তু ঘুমের ঘাটতির কারণে শরীরের অনেক ধরনের খারাপ প্রভাব পড়ে, শরীরের ওজন বৃদ্ধি করে স্ট্রোক ও হার্ট এ্যাটেকর ঝুঁকি বাড়ায়। অন্যদিকে, ভালো ঘুম আপনাকে যোগান দেবে অধিকতর ভালো ও নিয়ন্ত্রিত আবেগের, রোগব্যাধি থেকে নিরাপত্তা এবং অধিক কর্মশক্তি। নিজেকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য চোখের পাতা বন্ধ করুন এবং বিশ্রামের যায়গা তৈরি করুন।
৭. জীবনে নিয়ন্ত্রণ আনুন
- ব্যক্তিগত সাফল্যের সারকথা হলো লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য আপনাকে জানতে হবে কী কী কার্য সম্পাদন করা দরকার এবং একই সাথে তা নিশ্চিত করতে হবে। সতেজতা ও নব উদ্যেমি অবস্থায় ফিরে আসার জন্য প্রয়োজনে নিজেকে বিনোদোনে ব্যস্ত রাখুন।
উল্লেখিত এই সাতটি রীতি মেনে চললে আপনার শক্তিকে পূনরায় কর্মক্ষম করতে এবং সবকাজে নিজেকে উৎসাহিত করতে পারবেন।