৫ বছরেই হয়ে উঠুন মিলিয়নার
রচনা : ড্যানিয়েল এ্যালি
অনুবাদ : শিমি আক্তার
আপনি চাইলে ৫বছরের মধ্যে মিলিয়নার হতে পারেন। তবে কাজটি সহজ নয়, এজন্য অনেক প্রতিবন্ধকতা দুর করতে হবে, ত্যাগ স্বীকার হবে এবং দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হতে হবে। আসুন জেনে নেই ৫ বছরে মিলিয়নার হতে হলে কি করতে হবে।
- জনগণের সাথে মিশে কাজ করা
আমি ছিলাম অদাহ্য, কোন কিছুই আমাকে পোড়াতে পারতো না। আর এভাবেই সাত অঙ্কের কোঠাঁয় পৌছাই। জনগণের সাথে মিশে কাজ করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাদের সাথে মিশে কাজ করতে না জানলে কেউই সফল হতে পারবে না। আপনার প্রতিবেশি, বন্ধুরা এমনকি পরিবার বৈরভাবাপন্ন ও বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে সে ব্যাপারে আপনাকে প্রস্তুত থাকতে হবে।
- মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল হওয়া
অস্কার উইল্ড বলেছেন ”ক্ষমাই বড় প্রতিশোধ”। সকলেই জানতো যে আমি জীবনে শুধু ঘুরে বেড়িয়েছি। একসময় আমার এক কাজিনকে সফলতার কিছু রহস্য বলেছিলাম, কিন্তু সে তা প্রকাশ করে দেয় এবং অপ্রত্যাশিতভাবে পরের সপ্তাহে মারা যায়। তার এমন আচরনে আমি দুঃখ পেয়েছিলাম। কিন্তু আমি যদি তাকে তার নীতিভ্রষ্টতার জন্য ক্ষমা না করতাম তাহলে পরবর্তী কয়েক বছর এগুলো ঘুরে ফিরে আমার মনে আসতো এবং এটি আমার স্বাভাবিক কাজকর্মে বাধাসৃষ্টি করতে পারতো।
- আর্থিক বিষয়াদি নিজ হাতে পরিচালনা করা
ব্যবসায়ের প্রথম বছরে, আমার আর্থিক সংকট ছিলো। ঐ একই বছরে, প্রায় সকল বিলেই আমাকে কয়েক ডজন ওভারড্রাফট ফিস ও বিলম্ব চার্জ দিতে হয়েছিল। এজন্য আমার গাড়ীটা বিক্রি করে দিয়েছিলাম। আমি শিখেছিলাম ব্যর্থতা এবং নিরুৎসাহ সত্ত্বেও আমার নিজ হাতে ব্যবসার আর্থিক দিকগুলি পরিচালনা করা উচিত। তারপর দ্রুতই বাজে পরিস্তিতি পাল্টে যেতে থাকে। আমি উন্নতি করতে শুরু করলাম এবং আমার আয় পরের বছর প্রায় ১০ গুণ বেড়ে গিয়েছিল।
- ত্যাগ স্বীকারের মনোভাব
এই অভিজ্ঞতাগুলো খুবই কঠিন। যে রাতের পূর্বে আমি ১০,০০০ ডলার গ্রহণ করলাম সেই রাতেই আমাকে ঠান্ডার মধ্যে গাড়ীর ভেতরে ঘুমাতো হলো!! কারণ ঐসময় আমাকে ২০০ ডলারের অধিক জমার অতিরিক্ত উত্তোলন করতে হয়েছিল। এ কারণে আমি হোটেলের খরচ বহনের সক্ষমতা হারাই। অভিজ্ঞতাই হলো বড় শিক্ষক কারণ সে প্রথমে পরীক্ষা নেয়, পরে শেখায়।
- অস্বস্তির লেনদেন
মুদির দোকান থেকে ১০০ ডলারের পণ্য কিনে যখন কার্ড সুইপ করলাম কার্ডটি প্রত্যাখিত হলো। অন্য কার্ডটির অবস্থাও যখন একই হলো বাসায় ফিরে গেলাম এবং ঐদিন টুনা খেলাম কোন রুটি ও মেনোইজ ছাড়াই। এবং ঐ রাতে পানিও প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিলো। সুতরাং আমি কয়েক চা চামচ পরিমান বৃষ্টির পানি দিয়ে খাবার ধুয়ে ছিলাম।
- সাহায্য চাওয়া
ব্যবসায়ের একটি নির্দিষ্ট সময়ে আমি কিছু গুরুত্বপূর্ণ লোকের সহায়তা ছাড়া বড় হতে পারতাম না। কারো সাহায্য চাওয়া আমার বিশেষ কোনো গুণ ছিলনা কিন্তু আমাকে তা করতে হয়েছিল। কয়েক মাসের মধ্যেই আমি আইনজীবী, এডিটর, ব্যক্তিগত ট্রেনার, পার্ট-টাইম সেফ এবং অন্যান্য লোকজন নিয়োগ করলাম। প্রথমে আমার অনেক অর্থ ব্যয় হলেও পরবর্তীতে আমাকে বিলিয়ন ডলারের মার্কে প্রবশে করিয়ে দিল। অনেক লোক তাদের ইগোর কারণে সাহায্য চায় না।
- ভয়কে জয় করা
আমি উচ্চ মাধ্যমিকের ইংরেজি ক্লাসে তিন বার ফেল করেছিলাম। এক কলেজের অধ্যাপক আমাকে বলেছিলেন আমার লেখা বিরক্তিকর এবং তাঁর ক্লাসে আমি পাশ করতে পারবো না। যাহোক একদা আমি বই ও পত্রিকায় রচনা লেখা শুরু করলাম, এটা আমার আত্নবিশ্বাস অনেক বাড়িয়ে দিল। আর আজ আমি আমার ভাষায় মিলিয়নার।
- মনোভাব নিবিষ্ট করা
অজুহাত তৈরী আমার অন্যতম বড় অন্তরায় ছিল। আমার পরিবেশ ও ছেলেবেলার শিক্ষাদীক্ষাকে দোষারোপ করতে আমি অভ্যস্ত ছিলাম । পরবতীৃতে অনেক সময় আমি আমাকে ’এটিটিউড শপ’-এ নিজেকে নিয়োজিত করেছি যেখান থেকে আমার মনকে নবায়িত করতে পেরেছি এবং আমার মনোভাব পরিবর্তন করতে পেরেছি।
- অপরের উপর বিশ্বাস
আমি যখন আবেগপ্রবণ হয়ে যাই, আমার আত্নবিশ্বাস যাচাই করার জন্য নির্মম সত্যগুলো কাছের লোকদের বলে দেই। আমি স্বাধিন হতে পারতাম, মিথ্যা চাপ ও দুশ্চিন্তাকে দুরে রেখে আমি আমাকে অরক্ষিত করে ফেলি । নিজেকে অন্যের সাথে শেয়ার করে আমার চেষ্টাকে সবোর্চ্চ ফলপ্রসূ করে আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিলাম।
- ঝুঁকি গ্রহণ
সাত সংখ্যার মার্কে পৌছানোর পূর্বে, আপনাকে অনেক ঝুঁকি নিতে হবে। ঝুঁকি নেয়ার জন্য আপনি যা করতে চান সেই ব্যাপারে অনেক বিশ্বাস থাকতে হবে এবং লক্ষ্য অর্জনে তা আপনাকে করতে হবে।
- লোক দেখানো কাজ করা বা শো আপ
আমি যদি শো আপ করতাম, আমার মূল কাজ বিলম্বিত হতো। আমি একদা ২ মিনিটের জন্য ফ্লাইট মিস করেছিলাম, খুব হতাশ হয়েছিলাম, আর ভেবেছিলাম জীবনে আর এমন ভূল করবো না। পরবর্তীতে আমি আমার এই প্রতিজ্ঞা পালন করেছি।
- পেশাদার হতে হবে
পেশাদার ও শৌখিনের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। আমি এখন আমার পাশে প্রয়োজনীয় বিজ্ঞ লোকদের স্থান দিয়েছি যাঁরা আমার শুধু ভালো কাজেই আসবে তার জন্য অবশ্য একটু বেশি ব্যয় করতে হয়। কিন্তু আমি এই অতিরিক্ত ” অর্থ পরিশোধে”-এর মূল্য শিখতে পেরেছি এবং জানতে পেরেছি পেশাদাররা কি করে।
- অবিশ্রান্ত
প্রতি বছর আমি ১০০টির ও বেশি বই পড়ি। প্রতিমাসে আরও প্রায় ডজনের মতো বই সংগ্রহ করি। জ্ঞান অর্জণের জন্য আমি আমার ব্যবসা সম্পর্কিত বিষয়ের উপর প্রতিদিন প্রায় ৪ ঘন্টা বিভিন্ন বই পড়ি । আমি যার সাথেই দেখা করি সকলের কাছ থেকে তাদের ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য ও অভিপ্রায় শিখতে চেয়েছি এবং বুঝতে চেয়েছি মানুষ্যপ্রকৃতির প্রবণতা।
- দক্ষতা অর্জন
বিল পরিশোধের জন্যও দক্ষতা দরকার। আমি সর্বদা আমার স্বকীয়তা চর্চা করি। আমি দিনে কমপক্ষে ৩০০০ শব্দ লিখি। প্রতি সপ্তাহে প্রায় ১০০ মেইল পাঠাই এবং আমার ব্যস্ত দিনেও কমপক্ষে এক ডজন ফোন করি।
- সুযোগ গ্রহণ
শুরুর দিকে আমি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছি, বিভিন্ন লোকের সাথে হাত মিলিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন ব্যবসা শিখতে পেরেছি। জনসেবামূলক ভ্রমণ থেকে বেশ কিছু ভালো সুযোগ এসেছে যা আমার প্রত্যাশার বাইরে ছিল।
- সুযোগ বর্জন
প্রতি সপ্তাহে শতাধিক অনুসন্ধানের মধ্যে খুঁজে নিতে হতো কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমার ১০,০০০ ডলারের সামর্থ্য থাকলে ১০,০০,০০০ ডলারের সুযোগ আসতো। কিছুই করার থাকেতো না। তখন এ অফারগুলো যাদের সামর্থ্য ছিল তাদের দিকে আমি এগিয়ে দিতাম।
- সদয় হওয়া
২০ বছরের শুরুর দিকে আমি আমার শহরের অন্যতম বড় একজন ভলেন্টিয়ার ছিলাম ! আমার জীবনের বড় পরিবর্তন হলো যখন আমি মানুষের সেবায় আমার সময়, শ্রম ও অর্থ ব্যয় করলাম। শিখলাম কিছু দিতে পারলে বিনিময়ে অনেক বেশি ফেরত পাওয়া যায়।
- বড় লক্ষ্য নির্ধারণ
বিচলিত না হয়ে বড় লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। আর এজন্য আপনাকে আপনার নির্দিষ্টের সীমানা ছাড়িয়ে যেতে হবে। ব্যবসায়ের শুরুতে লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য আমাকে অনেক রক্ত, ঘাম ও অশ্র“ ঝরাতে হয়েছিল । অনেক রাত নির্ঘুম কেটেছে। আজ আমি সফলতায় আমার কল্পনাকেও ছাড়িয়ে গেছি।
- উদ্দেশ্য অনুসরণ করে এগোতে হবে
আপনি যখন আপনার লক্ষ্যকে ছাড়িয়ে যাবেন, আপনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারবেন না। আপনার চেয়ে আপনার উদ্দেশ্য বড় হলে,তখন সবকিছুই সম্ভব। এর অর্থ আপনি যদি আপনার নিজের চেয়ে বড় কোন উদ্দেশ্যে অংশ নেন আপনি আপনার সব লক্ষ্যেই পৌছাতে পারবেন আপনার মন নিবিষ্ট করতে হবে !
আপনি ৫বছরের মধ্যে কিভাবে মিলিয়নার হতে পারেন তা সহজ করে দিচ্ছি; নিজের কাছে সৎ থাকুন। যেসব সুযোগ গ্রহণ করলে আপনার জীবনের ভালো উন্নতি হতে পারে সেই সুযোগ গ্রহণ করুন। বিক্রয়ের অবস্থা বা নিজস্ব ব্যবসা শুরুর জন্য সব সুবিধা সফল ভাবে গ্রহণ করতে হবে। যদি আপনার ইচ্ছা থাকে এবং এগুলো করার সম্ভাবনা থাকে, আপনি নিজে জানার আগেই মিলিয়নার হয়ে যাবেন।
Daniel Ally is an international business expert, three-time best-selling author and keynote speaker. As the founder of The Ally Way and Dignify Designs, he has helped business leaders establish their brands, authors develop and publish their books, and hundreds of audiences fill up their notebooks as they giggle their way to freedom and success. Ally became a self-made millionaire at 24 years old.