সাত ধাপ পেরিয়ে…
- যোসেফ লিউ
পেশা বা ক্যারিয়ার চক্রের গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজের পর এবং ক্যারিয়ারের ক্রান্তিকালে শতাধিক পেশাদারী লোকদের প্রশিক্ষণ দেয়ার মাধ্যমে আমি যে জিনিসগুলো অনুধাবন করতে পেরেছি তা হলো, মানুষ কেবল তার পেশা পরিবর্তনের ৭টি ধাপ অতিক্রম করেই সফল হতে পারে। আমার নিজের ক্যারিয়ারের আলোকিত ও গুরুত্বপূর্ণ ধাপগুলোর গল্প আপনাদের শোনাতে চাই।
এই ধাপগুলো আমার ক্যারিয়ারের ভিত্তি গড়ে দেয়। ২০০৬ সালে উপসাগরীয় অঞ্চলে কনজুমার প্যাকেজ গুডস ইন্ড্রাসট্রিতে আমি প্রথম কর্পোরেট মার্কটিংয়ের কাজ শুরু করি। তখন আমি ভালো বেতন পেতাম, প্রকল্পকে উদ্দীপ্ত করার উপর আমাকে কাজ করতে হতো, কর্পোরেট জীবনের কঠিন শিক্ষা সেখান থেকে অর্জন করেছিলাম, সহকর্মীদের সাথে কাটানো সময়টা বেশ উপভোগ করতাম এবং পরিচিতির দিক দিয়ে এক নম্বর ব্রান্ডের কোম্পানীতে কাজ করতে পেরে গর্ব বোধ করতাম।
প্রথম ধাপ : অনিশ্চয়তা
আমার পেশায় কিছুর ‘ঘাটতি’ অনুভব করতে শুরু করলাম। লন্ডনে আমার বাজারজাতকরণ বা মার্কেটিং পেশায় কয়েক বছরে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করার পর আমি নিজেকে একজন শীর্ষ বাজারজাতকারক বা মার্কেটিং কর্মকর্তা হিসেবে দেখতে পেলাম। প্রথমে, ‘কুল’ ব্রান্ডের মার্কেটিংয়ে কাজ করে আমি খুব উত্তেজনা বোধ করতাম, কিন্তু অতিরিক্ত সময় বা ওভার টাইম কাজ করার কারণে আমার নিকট এর রং হারাতে থাকে। নিজেকে প্রশ্ন করতে শুরু করলাম আমি সত্যিই যদি জনগণের পণ্যদ্রব্য ক্রয়ের ব্যাপারে আরো অধিক সতর্ক থাকতাম।
দ্বিতীয় ধাপ : হতাশার অনুভুতি বা আতঙ্ক
ক্যারিয়ার নিয়ে আমার মনে অসন্তোষ দেখা দিল।ওভার টাইমের কারণে কোম্পানীর প্রফিট বা লাভের প্রতি আমার অনুভুতি ও আর্কষণ কমে যাচ্ছিল এবং কোম্পানীর কাজের পরবর্তী ধাপে ব্রান্ড চেঞ্জিং ক্যাম্পেইনের প্রতিও মনোযোগ কমতে থাকে। সকল কাজকর্মই অর্থহীন মনে হতো এবং আমি অনুভব করতে শুরু করলাম যে মার্কেটিং কনজুমার প্রডাক্ট আর আমাকে আকৃষ্ট করতে পারছে না। আমার পরিবর্তন দরকার।
তৃতীয় ধাপ: বেদনা উপশম করা
আমি কিছু করার চেষ্টা করেছিলাম। হতাশার সাথে সমঝোতা করতে ও অবসর সময়ে ক্রোধের যায়গা থেকে অন্য কিছু করতে শুরু করলাম। আমি পেশাদার কোচিং সনদ পেতে পারি সেইজন্য সর্বদা নতুন নতুন চিন্তা করতাম। তারপর সন্ধ্যার সময়ে ও সপ্তাহের শেষে, আমি বিভিন্ন ক্লাইন্টদের ব্যক্তিগতভাবে পেশা পরিবর্তনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কোচিং করিয়েছি । আমি আসলে চেষ্টা করেছি বাজে বিষয় গুলোর সাথে সমতা বিধান করতে। আমার কাজের মাধ্যমে পজিটিভ বা ভালো কিছু খুঁজে পেতে ও ভালো কিছু অনুভব করতে চেষ্টা করলাম।
চতুর্থ ধাপ: সম্পূর্ণ ব্যয় বা খালি করে ফেলা
আমার শক্তি কমে যেতে শুরু করল। বৈশ্বায়িক ভুমিকা রাখার কাজে আমার পদোন্নতি হলো, যা ছিল অধিক তাৎপর্যপূর্ণ। একই সাথে, দাপ্তরিক কাজের বাইরে অবসর সময়ে যে কোচিং করাচ্ছিলাম তা বেশ সফল ভাবো এগিয়ে চলছিল। প্রতিদিন সীমিত যে কয়েক ঘন্টা পেতাম, তাতে আমার স্বাভাবিক শক্তির মাত্রা ঠিক রাখতে না পারায় আমি উক্ত কাজে শতভাগ দিতে পারছিলাম না। আমি চেষ্টা করতাম প্রতিদিন এভাবে পরিশ্রম করে যেতে কিন্তু আমি ক্লান্ত হয়ে যেতাম।
পঞ্চম ধাপ: প্রস্থান বা পরিবর্তন
আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম আমার করণীয় কী তা নিয়ে। যেহেতু ওভার টাইমের কারণে প্রতিষ্ঠানের প্রতি আমার আকর্ষণ কমে যায়, তাই উক্ত প্রতিষ্ঠানের কাজে শতভাগ দিতে পারছিলাম না এবং শারীরিক ভাবেও ক্লান্তবোধ করতাম। আমার ব্যক্তিগত ব্যবসা সফলতার সাথে এগিয়ে চলছিল কিন্তু ব্যবসার জন্য পর্যাপ্ত সময় ও শ্রম দিতে পারছিলাম না। তাই ঘটনাক্রমে একদিন আমি চাকরী ছেড়ে দিলাম ও আমার ব্যবসায়ে পুরোপুরি মনোনিবেশ করলাম আর মানুষকে নতুন করে তাঁদের ক্যারিয়াম শুরুর জন্য দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে সহায়তা করলাম।
ষষ্ঠ ধাপ : প্রতিফলন
নিজেকে একটু অনুমতি দিলাম বিশ্রামের জন্য। ওই কোম্পানি ছেড়ে আসার পর, তাৎক্ষণিক ভাবেই নিজের ব্যবসায় কাজ সম্পূর্ণরুপে শুরু করি নাই। নিজেকে একমাস ছুটি দিলাম ব্যবসা সম্পর্কীত কিছু বাকি কাজ করার জন্য। আমার মা ও বন্ধুদের সাথে সময় কাটানোর জন্য আমেরিকা গেলাম। যদিও ব্যবসার জন্য টাকা পয়সার একটু ঘাটতি ছিল তবু পূরোদমে ব্যবসা এগিয়ে নিতে দৃড় প্রতিজ্ঞ ছিলাম। আমি কিছু সময় নিজেকে শ্লথ করে রাখলাম এবং আরও নতুন নতুন ধারণা জড়ো করলাম যাথে নতুন এই যাত্রা শুরুর জন্য পর্যাপ্ত রসদ আমার হাতে থাকে।
সপ্তম ধাপ : পুনরায় শুরু করা
আমার ক্যারিয়ারের পরবর্তী অধ্যায় শুরু হলো। ফুলটাইম জব বা পূর্ণ সময়ের কাজ হিসেবে ‘ক্যারয়ার কনসাল্টিং ওর্য়াকে’ আমর গাড়ী চলতে শুরু করল। আমি কনসালটেন্সি, ক্যারিয়ার কোচিং এবং পাবলিক স্পিকিংয়ের উপর মিশ্র পরিচিতি নিয়ে কাজ শুরু করলাম যার স্লোগান ছিল ‘টেডেক্স টক অন ক্যারিয়ার চেঞ্জ’। সৌভাগ্যক্রমে আমি প্রত্যেকটা বিষয়ের উপর একের পর এক সফলতা লাভ করতে থাকি এবং আমার কাজ আমকে জানান দেয় আমি কে এবং আমি কি প্রয়াস চালাতে পারি।
প্রত্যেকটা ধাপই অনন্য ও গুরুত্বপূর্ণ
পেছনের একটা জিনিসের দিকে ফিরে তাকাতে চাই, আমি জানতাম না যে উল্লিখিত ধাপগুলোর মধ্যে কোন একটা বাদ দিতে পারতাম কিনা। আমি জানি না আপনি আরো সংক্ষেপে আপনার ক্যারিয়ারের যাত্রা শুরু করতে পারবেন কিনা । তবে এর প্রত্যেকটা ধাপই নিজস্ব বৈশিষ্টে অনন্য। কিছু ধাপ আপনার ভুল জায়গা সম্পর্কে জানতে পরিস্কার ধারণা দেবে। কিছু আপনার সফলতা অর্জণে নতুন করে আত্মবিশ্বাস যোগাবে। অবশিষ্ট ধাপগুলো পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে একত্রে সাহস যোগাবে। আপনার দরকার প্রকৃত অর্থে স্পষ্টতা, আত্মবিশ্বাস এবং সাহস যা ক্যারিয়ারের পরবর্তী লাফটা দেয়ার জন সঠিক নির্দেশনা দেবে।
যথেষ্ট দৃঢ়তা, ধৈর্য এবং কঠোর পরিশ্রম করতে পারলে আপনার ক্যারিয়ার নতুন রুপে শুরু করতে পারবেন। আপনার উত্থান-পতনে সব সময়েই মানসিকভাবে শক্ত থাকতে হবে। কঠিন সময়ের কথা গভীরভাবে ভাবতে হবে এবং আপনি যে সঠিক লক্ষ্য নিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করেছেন সে কাজে নামার জন্য নিজেকেই নিজের অনুমতি দিতে হবে।