ওয়ারেন বাফেটের কাজের বাইরে কাজ
- মেহেদী তারেক
আলুথালু পোশাকের জন্য পরিচিত ওয়ারেন বাফেটকে প্রথম দর্শনে মনে হবে না এই ব্যক্তি ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি সম্পত্তির মালিক। অবশ্যই, তিনি বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে নামে একটি বহুজাতিক কোম্পানি পরিচালনা করেন এবং তাকে বিংশ শতকের সবচেয়ে সফল বিনিয়োগকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
বিপুল ধনসম্পদের মালিক হওয়া সত্ত্বেও ওয়ারেন বাফেট অত্যন্ত মিতব্যয়ী। তিনি চেরি কোক পান করতে পছন্দ করেন, ওমাহায় একই বাড়িতে বসবাস করেন যেটা তিনি ১৯৫৮ সালে ৩১ হাজার ৫০০ ডলার দিয়ে কিনেছিলেন। তিনি তার সম্পদের ৯৯ ভাগ জনকল্যাণমূলক কাজের জন্য দান করবেন বলে অঙ্গীকার করেছেন।
এখানে ৫ টি বিষয় উল্লেখ করা হল যা ওয়ারেন বাফেট প্রতিদিন দৈনন্দিন জীবনে করে থাকেন এবং আমরা তার কাছ থেকে শিখতে পারি।
১. প্রতিদিন ৫০০ পৃষ্ঠা পড়ুন
একবার তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল কীভাবে স্মার্ট হওয়া যায়, তখন এই ওরাকল তার হাতে থাকা কাগজপত্র থেকে একটি পৃষ্ঠা তুলে ধরলেন ও বললেন, “প্রতিদিন এমন ৫০০ পৃষ্ঠা পড়ুন। এভাবেই জ্ঞান বৃদ্ধি পায় চক্রবৃদ্ধিহারে সুদের মতো।
অনুমান করা হয় যে বাফেট দিনে ৮০ শতাংশ সময় কর্মক্ষেত্রে (আর্থিক বিবৃতি, পত্রিকা, প্রতিবেদন) এবং বাড়িতে (সংবাদপত্র ও বই) পড়াশুনা করে ব্যয় করেন। আমাদের মধ্যে অনেকেই প্রতি বছর এতগুলো পৃষ্ঠাগুলি পড়ে না।
তিনি বলেন, ‘আমি বেশী পড়ি এবং বেশী চিন্তা করি এবং অধিকাংশ ব্যবসায়ীদের থেকে কম আবেগী সিদ্ধান্ত নেই।’ সুতরাং আপনি যত বেশী পড়বেন তত বেশী জ্ঞানী হবেন এবং কম আবেগী ভুল সিদ্ধান্ত নিবেন।
২. সামান্য ব্যায়াম
বাফেট তার তরুণ থাকার গোপন রহস্য সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘একটি ছয় বছর বয়েসী বাচ্চার মত খাওয়া।’ এর মধ্যে দিনে ৫ টি কোক অন্তর্ভুক্ত। জেনে রাখা ভালো যে ৮৫ বছর বয়েসী বাফেট হ্যামবার্গার, স্টেক, হ্যাশ ব্রাউন এবং রুট বিয়ার ফ্লোট খেতে পছন্দ করেন।
২০০৭ সালে (৭৭ বছর বয়সে) তিনি প্রকাশ করেছিলেন যে, তার ডাক্তার তাকে একটি সহজ পছন্দ দিয়েছিলেন। হয় আপনি ভালো খাবার খান অথবা ব্যায়াম করুন। বাফেট ব্যায়াম বেছে নিয়েছেন। ২০১৫ সালে প্রস্টেট ক্যান্সার থেকে আরোগ্য লাভ করার পরও তাকে এখনও সুখী এবং সুস্থ দেখায়।
৩. কৃতজ্ঞ হোন
তার নায়ক, চাক ফ্রেনি (যিনি গোপনে তার সমগ্র সম্পত্তি দান করে গিয়েছেন) এর পদাঙ্ক অনুসরণ করে বাফেট বিশ্বের সর্ববৃহৎ দাতাদের অন্যতম। এছাড়া তিনি বিল গেটস সহ ১২ জন বিলিনিয়রকে তাদের সম্পত্তির অর্ধেক দাতব্য কাজে দান করার অঙ্গীকার করতে উৎসাহিত করেন। বাফেট তার জীবদ্দশায়ই তার সম্পত্তির ৯৯ শতাংশ দান করার অঙ্গীকার করেছেন।
‘আপনি যদি মানবতার ভাগ্যবান ১ শতাংশ হন, তাহলে আপনার বাকি ৯৯ শতাংশ মানবতার বাকি অংশের জন্য, তিনি মনে করেন।’
তিনি বিখ্যাত একজন মিতব্যয়ী, তাই এটি তার জন্য সহজ। বাফেট ১৯৫৮ সালে ৩১ হাজার ৫০০ ডলারে কেনা একই বাড়িতে বাস করেন (হাস্যকর ভাবে, তার পাশের বাড়িতে বাস করার খরচ তার থেকে বেশী)। তার সাথে দেখা করতে আসা বিনিয়োগকারীদের আপ্যায়ন করতে পছন্দ করেন।
৪. এমন একটি খেলা খেলুন যার জন্য ধৈর্য প্রয়োজন
চাক ফ্রেনির মতো বাফেট স্বীকার করেছেন যে তিনি তার সদা বর্ধমান ভাগ্যকে একটি খেলার মতো পরিচালনা করেছেন। এটি বিস্ময়কর নয়। তিনি খেলাধুলা পছন্দ করেন এবং নিয়মিতভাবে মাইন্ড গেম খেলেন যা তার বিনিয়োগ দর্শনে প্রয়োগ করেন।
তার মস্তিষ্ককে ধারালো রাখার জন্য তিনি ব্রিজ (যা মনোপলির মত দীর্ঘ সময় লাগে শেষ করতে) খেলেন। বস্তুত, বাফেট ব্রিজ এতটাই পছন্দ করেন যে কখনও কখনও তাকে ওমাহার মলে অবসরপ্রাপ্তদের সাথে ৭ ডলারের বিনিময়ে ব্রিজ খেলতে দেখা যায়।
তার দাবি ব্রিজ একটি বুদ্ধির ব্যায়াম ‘আপনি সেখানে দশ মিনিট পর পর নতুন পরিস্থিতি দেখছেন। আপনি সব সময় গণনার মধ্যে থাকছেন।’
৫. শুধু মজার জন্য একটি শখ বেছে নেয়া
ওয়াল স্ট্রিট বিশ্লেষকরা যারা প্রায়ই সপ্তাহে ১০০ ঘণ্টার বেশী কাজ করেন তাদের কাছে জাগতিক কোনো শখ মূল্যহীন। কিন্তু ওয়ারেন তার শখ পূরণ করতে পছন্দ করেন। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, তিনি অনেক ভালো হাওয়াই গিটার বাজান এবং এমনকি তার নিজের গাওয়া গান নিজে লিখেছেন। এমনকি কোকা কোলার বিজ্ঞাপনে জন বন জভির সাথে তার ডুয়েট গানের ভিডিও ইউটিউবে আছে।