পড়ার বিষয় লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং
- ক্যারিয়ার ডেস্ক :
বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের একটি বড় অংশ ধরে রেখেছে চামড়াশিল্প। গত অর্থবছরে চামড়াশিল্প থেকে প্রায় ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। আয়ের হিসাবে রপ্তানিযোগ্য পণ্যের তালিকায় চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের অবস্থান চতুর্থ। সারা পৃথিবীর মোট চামড়াজাত পণ্য বাজারের মাত্র শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ এই আয়। বাংলাদেশের জন্য অর্থকরী এই শিল্পের উন্নতির জন্য চাই প্রচুর দক্ষ প্রকৌশলী ও কর্মী। লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়ালেখার মাধ্যমে আপনি হয়ে উঠতে পারেন এ সেক্টরের একজন দক্ষ পেশাদার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (আইলেট) ও খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) রয়েছে লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতক পর্যায়ে পড়ালেখার সুযোগ। ইনস্টিটিউট অব লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজিতে পড়ানো হয় মোট তিনটি বিষয়—লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং, লেদার প্রোডাক্ট ইঞ্জিনিয়ারিং ও ফুটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং। প্রতিবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে এই তিনটি বিভাগে ছাত্র ভর্তি করা হয়। তবে কুয়েটে শুধু লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়ানো হয়।
লেদার সম্পর্কিত বিষয়গুলোতে মূলত পড়ানো হয় কাঁচা চামড়া থেকে লেদার তৈরির কলাকৌশল, বিভিন্ন ব্যবহার উপযোগী লেদার উৎপাদন এবং বিভিন্ন চামড়াজাত পণ্যের ডিজাইন ও নির্মাণকৌশল। চার বছরের স্নাতক কোর্সে অন্তর্ভুক্ত থাকে বিভিন্ন ভৌত ও ফলিত বিজ্ঞান কোর্স। সঙ্গে মৌলিক প্রকৌশলের বিভিন্ন কোর্স, যেমন—ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ইত্যাদি। এ বিষয়গুলো থেকে স্নাতক সম্পন্ন করার পর উচ্চশিক্ষার্থে শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন বিষয়ে পড়ার সুযোগ।
দেশের বাইরেও উচ্চশিক্ষার সুযোগ রয়েছে শিক্ষার্থীদের জন্য। যুক্তরাজ্যের নর্দাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়, ডেমনফন্ট বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে লেদার সম্পর্কিত বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি ও গবেষণার সুযোগ। তা ছাড়া অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও তুরস্কের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েও সুযোগ রয়েছে উচ্চশিক্ষার। শুধু লেদার সম্পর্কিত বিষয় নয়; ফ্যাশন ডিজাইন, ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংসহ বিভিন্ন বিষয়ে রয়েছে স্নাতকোত্তর ও অন্যান্য ডিগ্রি নেওয়ার সুবিধা।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিষয় হিসেবে লেদার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের গুরুত্ব তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহকারী অধ্যাপক সবুর আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে রয়েছে উন্নতজাতের কাঁচা চামড়ার সহজলভ্যতা, যা বহির্বিশ্বে বেশ সমাদৃত। আর এই চামড়াজাত পণ্যের ভ্যালু অ্যাড হয়ে থাকে ৯০ থেকে ২০০ শতাংশ। সম্ভাবনাময় এই শিল্প খাতকে এগিয়ে নিয়ে যেতে তাই দক্ষ প্রকৌশলী ও গবেষকের কোনো বিকল্প নেই।’
মালিহা মাসতুরাত খান পড়ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেদার প্রোডাক্ট ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। তিনি জানালেন তাঁর বিষয় নিয়ে ভাবনা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা। তাঁর ভাষায়, ‘বিভিন্ন জিনিসপত্রের ডিজাইন ও নির্মাণকৌশলের মধ্য দিয়ে সৃজনশীলতা এবং স্বকীয়তা প্রকাশের সুযোগ রয়েছে এ বিষয়ে। ছোটবেলা থেকেই ডিজাইনে আগ্রহ ছিল। এখন যেহেতু সুযোগ পেয়েছি, উচ্চশিক্ষা আর ক্যারিয়ার সেদিকেই সাজাতে চাই।’
পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে চামড়াশিল্পকে দায়ী করা হয়। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, দক্ষ কলাকৌশল ও বর্জ্য শোধনাগারের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবেশের এই ক্ষতি অনেকাংশেই দূর করা যেতে পারে। তখন এই শিল্প দেশের অর্থনীতিতে অনেক বেশি অবদান রাখতে পারবে। আর সে জন্য যে লেদার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ুয়াদের চাই বেশি বেশি করে, তা তো বলার অপক্ষো রাখে না।