শিক্ষা নিয়েই উচ্চশিক্ষা
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
‘উন্মুক্ত বই আর দুই পাশে দুটি কলম’, দ্বারপ্রান্তের এই নকশাটিই যেন বলে দেয় শিক্ষার জগতে পা রাখতে চলেছেন সবাই। বলছিলাম শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের কথা, যা সবার কাছে আইইআর নামে পরিচিত। সেই ১৯৫৯ সালের নভেম্বরে এর যাত্রা শুরু। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বপ্রথম এই ইনস্টিটিউটটি যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সংস্থা USAID-এর সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত হয়।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সংখ্যার নিরিখে এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্ববৃহৎ ইনস্টিটিউট। বর্তমানে এখানে বিভিন্ন পর্যায়ে প্রায় এক হাজার ৩০০ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। ১৯৯৪-৯৫ শিক্ষাবর্ষে তিন বছর মেয়াদি সমন্বিত ব্যাচেলর অব এডুকেশন চালু করা হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য অনুষদ ও ইনস্টিটিউটের সাথে সঙ্গতি রেখে ১৯৯৮-৯৯ শিক্ষাবর্ষে এর মেয়াদ চার বছর করা হয়। শিক্ষাক্ষেত্রে দায়িত্বশীল বিশেষজ্ঞ তৈরি এবং শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ গবেষণায় অবদান রাখা এই ইনস্টিটিউটের প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের মূল উদ্দেশ্য থাকে শিক্ষার্থীদের বিশ্লেষণী ও সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতার বিকাশ। শিক্ষা ও শিক্ষার সাথে সম্পৃক্ত সমাজবিজ্ঞান গবেষণার প্রাণকেন্দ্র আইইআর। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দের সম্মিলনে প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ গবেষণা পরিচালিত ও প্রকাশিত হয়, যা পরিমাণগত দিক ছাপিয়ে গুণগতভাবেও গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের নিজস্ব জার্নাল ‘টিচার্স ওয়ার্ল্ড’ এই বিষয়ে বিশদ ভূমিকা রাখছে। আইইআর এর শিক্ষকদের বৃহৎ অংশ প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষাক্রম এবং পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
কেবল গুণগত দিক দিয়েই নয়, অবকাঠামোগত দিকেও আইইআর অনন্য। যুগোপযোগী এবং ভূমিকম্প প্রতিরোধ সম্পন্ন ভবনের স্থাপত্যশিল্প আইইআরের নান্দনিকতার পরিচয় দেয়। বিশাল সব ক্লাসরুম, নিজস্ব লাইব্রেরি আর ক্যান্টিন রয়েছে এখানে। ভবনের সামনের দিকের বাগান আর গাছগাছালিতে যেন এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এখানকার শিক্ষার্থীরা কেবল শিক্ষায় নয়, সব বিষয়ে মননশীল। এর স্পষ্ট নিদর্শন ভবনের দেয়ালগুলোতে। রংবেরঙের তুলির আঁচড়ে আইইআরের দেয়ালগুলোকে রাঙিয়ে নিতে যেন সদাব্যস্ত শিক্ষার্থীরা। কখনো ত্রিমাত্রিক সুড়ঙ্গ, কখনো সাইকেল আর কখনো বা পুরো মিসরীয় সভ্যতাটাকেই তুলে আনা হয়েছে দেয়ালে। অসম্ভব সুন্দর এসব চিত্রকর্ম দেখতে অন্যান্য অনুষদের শিক্ষার্থীরা প্রায়ই আড্ডা জমান এখানে।
এই ইনস্টিটিউটে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে সম্পর্ক সহজাত। বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের সাথে অংশ নেন তাঁরাও। বেশ কয়েকটি ক্লাব, ক্রীড়াদলে অংশগ্রহণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের বিভিন্ন কার্যক্রমের মধ্য দিয়েই শিক্ষকদের নির্দেশনায় শিক্ষার্থীরা শানিয়ে নিচ্ছে নিজেদের নেতৃত্ব, দক্ষতা ও আয়োজনক্ষমতা। কেবল শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক নয়, বিভাগের অনুজ-অগ্রজদের মধ্যেও সম্পর্ক দারুণ।
সারা দিন আড্ডা, গান-বাজনা আর পড়ালেখা-এই নিয়েই মেতে থাকে এখানকার বিদ্যার্থীরা। এ যেন এক উৎসবমুখর ইনস্টিটিউট। ফি-বছর পয়লা বৈশাখ, বসন্ত-বরণ, একুশে ফেব্রুয়ারিসহ নবীনবরণ ও বিদায়ী শিক্ষার্থীদের অনুষ্ঠান জানান দেয়, উচ্ছলতাই এর অনুপ্রেরণা।
জনহিতকর ও সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডে আইইআর অগ্রগামী ভূমিকা পালন করে। সাভার রানা প্লাজায় দুর্ঘটনাকবলিতদের সাহায্য থেকে শুরু করে শীতার্তদের শীতবস্ত্র সংস্থান পর্যন্ত কার্যক্রমে এই ইনস্টিটিউটের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাজ করেছেন একসাথে। আইইআরের জনহিতকর কাজের এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ ‘পাঠশালা’, যা মূলত আইইআরের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে পরিচালিত। নিরক্ষরতামুক্ত বিশ্ব গঠনের আহ্বান নিয়ে ক্যাম্পাসের সুবিধাবঞ্চিত কর্মজীবী শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষাদানের কাজ করে চলেছে পাঠশালা।
আইইআরের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের অনেকেই রয়েছেন বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে, যেগুলোর অধিকাংশই ঈর্ষণীয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ থেকে শুরু করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থায় এই ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা কাজ করছেন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে। শিক্ষার মানোন্নয়নে কাজ এবং সফল ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে আইইআর হতে পারে আপনার উপযুক্ত স্থান।

 
	                
	                	
	            
 
	                       			                       	 
	                       			                       	 
	                       			                       	 
	                       			                       	