গ্রাফিক্স ডিজাইনিংয়ে ক্যারিয়ার
- ক্যারিয়ার ডেস্ক :
পেশা নির্বাচনের ক্ষেত্রে এ সময়ের তরুণরা একটু অন্যভাবে চিন্তাভাবনা করেন। তারা আজকাল এমন কোনো পেশায় যুক্ত হতে চায় যেখানে শুধু অর্থ নয় পেশাগত চ্যালেঞ্জও উপভোগ করার সুযোগ রয়েছে। শুধু তাই নয়, তারা চায় পেশাগত ক্ষেত্রটি নিজের ভবিষ্যতকে সম্ভাবনাময় করে তুলবে। এমন পেশায় যুক্ত হতে হলে সাধারণ পড়াশোনার গণ্ডির বাইরে কিছু বিষয় শিক্ষাজীবনেই নির্বাচন করতে হয়। তাই আপনি আপনার সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে নিজের জীবনকে সাজিয়ে তুলতে ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নিতে পারেন অফুরান সম্ভাবনাময় পেশা গ্রাফিক্স ডিজাইন। আত্মবিশ্বাস ও নান্দনিক শিল্পবোধসমৃদ্ধ যে কেউ এ পেশার মাধ্যমে নিজেকে সাফল্যের দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে পারেন। দিন দিন গ্রাফিক্স ডিজাইনারদের চাহিদাও বাড়ছে।
গ্রাফিক্স সফটওয়্যার কী?
কম্পিউটারের মাধ্যমে যেসব সফটওয়্যার ব্যবহার করে ডিজাইনের কাজ করা হয় সেগুলোই হলো গ্রাফিক্স সফটওয়্যার। আমাদের দেশে বেশি ব্যবহৃত হয় এমন কয়েকটি সফটওয়্যার হলো_ এডব ফটোশপ, এডব ইলাস্ট্রেটর, এডব ইমেজ রেডি, কোয়ার্ক এক্সপ্রেস, পেজমেকার ইত্যাদি। এসব সফটওয়্যার বিভিন্ন কাজের জন্য বিশেষ উপযোগী। এডব ফটোশপ ও এডব ইমেজ রেডি ছবি সম্পাদনা ও ইফেক্ট সংযোজন করার কাজে পারদর্শী। কোয়ার্ক এক্সপ্রেস ও পেজমেকার ব্যবহার করে প্রেসে প্রিন্ট করার প্রিন্টিং ফরম্যাট সাজানো হয়।
কী কী সফটওয়্যারের কাজ শিখতে হবে:
গ্রাফিক্স ডিজাইন করার জন্য অনেক সফটওয়্যার রয়েছে। তবে কাজের ধরন অনুযায়ী সফটওয়্যার প্রয়োজন হয়। দক্ষ গ্রাফিক্স ডিজাইনার হতে হলে অনেক ধরনের সফটওয়্যার সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে আপনাকে। নির্দিষ্ট কোনো সফটওয়্যার নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করলে চলবে না। যত বেশি গ্রাফিক্স সফটওয়্যার জানা থাকবে কাজের পরিধিও তত বাড়বে। সঙ্গে সঙ্গে উপার্জনও বাড়বে অনেকগুণ। গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে কাজ শুরু করার জন্য প্রথমে ন্যূনতম তিনটি সফটওয়্যার শিখতে হবে। আমাদের দেশে বিভিন্ন পাবলিকেশন অ্যাড ফার্ম রয়েছে। পত্রিকায় কাজ করার জন্য প্রধানত এডব ফটোশপ, এডব ইলাস্ট্রেটর ও কোয়ার্ক এক্সপ্রেস এ তিনটি সফটওয়্যার ব্যবহার করা যায়।
শিক্ষাগত যোগ্যতা:
গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে কাজ করতে হলে একজন নারী বা পুরুষের শিক্ষাগত যোগ্যতা কমপক্ষে স্নাতক কিংবা সমমানের হতে হবে। সেইসঙ্গে গ্রাফিক্স ডিজাইনের ওপর জ্ঞান অর্জন করতে হবে। তবে এ পেশায় শিক্ষাগত যোগ্যতার চেয়ে গ্রাফিক্স সংশ্লিষ্ট কাজের অভিজ্ঞতা অনেক বেশি প্রয়োজন।
কোথায় কোর্স করবেন:
গ্রাফিক্স ডিজাইন কাজের একটি বড় ক্ষেত্র। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ইউনিভার্সিটিতে গ্রাফিক্স ডিজাইনের ওপর একাডেমিক কোর্স রয়েছে। সেগুলো অবশ্য অনেকটা ব্যয়বহুল এবং কোর্সগুলোও দীর্ঘমেয়াদি। যারা উচ্চ পর্যায়ের গ্রাফিক্স ডিজাইনার হতে আগ্রহী, তারা এসব প্রতিষ্ঠানে কোর্স করতে পারেন আর যাদের হাতে সময় কম তারা বিভিন্ন গ্রাফিক্স ডিজাইন ট্রেনিং সেন্টার থেকে তিন বা ছয় মাসের কোর্সও করতে পারেন। এছাড়া যুব উন্নয়ন অধিদফতর এ ধরনের কোর্স পরিচালনা করে, সেখান থেকেও প্রশিক্ষণ নেওয়া যেতে পারে।
স্বল্পমেয়াদি কোর্স :
গ্রাফিক্স ডিজাইন এবং মাল্টিমিডিয়ার উপর ৬ মাস মেয়াদি ট্রেড করতে পারবেন বাংলাদেশ স্কিল ডেভলপমেন্ট ইনষ্টিটিউট থেকে। যোগাযোগ : বাংলাদেশ স্কিল ডেভলপমেন্ট ইনষ্টিটিউট, বাড়ি নং-২/বি, রোড নং-১২, ধানমন্ডি, মিরপুর রোড, ঢাকা-১২০৯ ।
পেশা হিসেবে মর্যাদা:
গ্রাফিক্স ডিজাইনার একটি সম্মানজনক পেশা। এ পেশায় বেতনটা নির্ভর করে দক্ষতার ওপর। এ সেক্টরে মাসে পাঁচ থেকে দশ হাজার টাকা আয় করা যায় সহজেই। আর প্রথম সারির দৈনিক, টিভি চ্যানেল, অ্যাড ফার্মগুলোতে চাকরি হলে বেতন অনেক বেশি। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে ডিজাইনারদের বেতন দশ থেকে ত্রিশ হাজার টাকা। এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে এক লাখ টাকা। এছাড়া অন্যান্য পেশার চেয়ে এখানে ঝামেলা কম। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত অফিসে ঠায় বসে থাকতে হয় না।
কর্মমুখী শিক্ষায় স্বল্পমেয়াদি বিভিন্ন কোর্স করে আপনিও গড়তে পারেন স্বপ্নের ভবিষ্যত্। অন্যের অধীনে চাকরি না করেও গড়ে তুলতে পারেন স্বতন্ত্র সেবাধর্মী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আর এসব কর্মমুখী শিক্ষার মধ্যে বর্তমানে চাকরির বাজারে এগিয়ে গ্রাফিক্স ডিজাইন। তবে যদি কাজে স্বকীয়তার প্রকাশ না থাকে তাহলে টিকে থাকাটাই কষ্টকর। একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনারের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও আইডিয়া লেভেল ভালো না হলে তিনি হয়তো কাজ করতে পারবেন, তবে চ্যালেঞ্জে টিকে থাকতে পারবেন না। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, বিজ্ঞাপনী সংস্থা, প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বড় বড় কোম্পানিগুলোতে আকর্ষণীয় ডিজাইন তৈরিতে গ্রাফিক্স ডিজাইনারের বিকল্প নেই। সুতরাং, সৃষ্টিশীল এ বিষয়েও যে কেউ গড়তে পারেন নিশ্চিত ক্যারিয়ার।