জুবায়েরের আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন
- ক্যাম্পাস ডেস্কঃ
হাসান আল জুবায়ের পড়ালেখা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা অনুষদে। স্নাতকোত্তর শেষ করে এখন চলছে তাঁর বৈমানিক হওয়ার অভিযান।
একটু কি খটকা লাগল? শিক্ষা ও গবেষণা অনুষদে পড়া ছেলেটা বিমানের ককপিটে বসতে মরিয়া হয়ে উঠল কেন? আমরা ভ্রু কুঁচকে তাকালেও হাসান আল জুবায়েরের কাছে এটা খুব স্বাভাবিক। তিনি বরং মুখে পাল্টা বিস্ময় ফুটিয়ে তুলে বলেন, ‘আমার তো বৈমানিকই হওয়ার কথা ছিল। পথ ভুলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে গিয়েছিলাম।’
ব্যাপারটা খোলাসা করতে তিনি বললেন ২০০৮ সালে নটর ডেম কলেজ থেকে সদ্য উচ্চমাধ্যমিক পেরোনো জুবায়েরের গল্প। বিমানবাহিনীতে যোগ দেওয়ার স্বপ্নে যে বুঁদ হয়ে ছিল। বলছিলেন, ‘আইএসএসবিতেও টিকে গিয়েছিলাম। কিন্তু মেডিকেলে আটকে গেলাম। খুব ভেঙে পড়েছিলাম। স্বপ্ন পূরণের কাছাকাছি গিয়েও ফিরে আসাটা মানতে পারছিলাম না।’
একরকম মুখ ভার করেই তিনি ভর্তি হন ঢাবিতে। পড়ালেখার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্ক দলের হয়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সৌভাগ্যও হয়েছে কয়েকবার। কিন্তু বৈমানিক হওয়ার ভূত মাথা থেকে তখনো নামেনি। বিমান নিয়ে আকাশের কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ হয়নি, এই দুঃখ ঘোচাতেই কি না কে জানে, হাসান আল জুবায়ের পর্বতারোহণ শুরু করলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাউন্টেনিয়ারিং অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ক্লাবের সঙ্গে শুরু হয় তাঁর আরেক অভিযান। দেশে-বিদেশে বেশ কিছু সুউচ্চ পর্বতশৃঙ্গ জুবায়েরের দেখা হয়ে গেছে। কয়েক দিন আগে ‘স্বপ্ন নিয়ে’র সঙ্গে আলাপে এই অভিযানপ্রিয় তরুণ বলছিলেন, ‘বাংলাদেশ বিমানের বৈমানিক ইনাম তালুকদার ছিলেন আমাদের মাউন্টেনিয়ারিং প্রশিক্ষক। তাঁর উৎসাহেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার পাশাপাশি যোগ দিই আরিরাং ফ্লায়িং স্কুলে। ২০০৮ সালে বাবাকে হারিয়েছি। বেসরকারি ফ্লায়িং স্কুলে পড়ার খরচ জোগানোটা সহজ ছিল না। তবু মা, ভাই, বোনের সহায়তা আর উৎসাহেই ঘুরেফিরে আমার স্বপ্নটা পূরণ হতে চলেছে। এখন প্রশিক্ষণ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আশা করছি কিছুদিনের মধ্যেই আমি কমার্শিয়াল পাইলটের লাইসেন্স পাব।’
উড়োজাহাজ যে তাঁর কতটা প্রিয়, বোঝা যায় তাঁর স্নাতকোত্তরের শেষ পর্যায়ে করা গবেষণাপত্রে চোখ বোলালেও। রিসার্চের বিষয় হিসেবে তিনি বেছে নিয়েছিলেন বাংলাদেশের ‘অ্যাভিয়েশন এডুকেশন’। গবেষণার সুবাদেও বিমানচালনার নানা খুঁটিনাটি দিক তাঁর জানা হয়েছে। আলাপের একদম শেষে জুবায়ের দিলেন সুখবর, ‘সম্প্রতি আমি যুক্তরাজ্যের ক্র্যানফিল্ড ইউনিভার্সিটিতে সেফটি অ্যান্ড হিউম্যান ফ্যাক্টর্স ইন অ্যাভিয়েশন কোর্সে পড়ার সুযোগ পেয়েছি। এই কোর্স শেষ করে আশা করছি ভবিষ্যতে আমি বাংলাদেশে “অ্যাভিয়েশন সেফটি” নিয়ে কাজ করতে পারব। এখন বৃত্তি পাওয়ার চেষ্টা করছি।’