পশু-পাখি নিয়ে পড়ি
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার আমিষের চাহিদা পূরণে ভেটেরিনারি (পশুচিকিৎসাবিদ্যা) ও অ্যানিমেল হাজব্যান্ড্রির (পশুপালন) স্নাতকেরা অবদান রেখে চলেছেন। দেশের পোলট্রিশিল্পসহ পশুখাদ্য উৎপাদন ও পশুর ওষুধ উৎপাদনে কাজ করছেন ওই স্নাতকেরা। পশুচিকিৎসা ও পশুপালন দুটি আলাদা ক্ষেত্র। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদাভাবে পশুপালনের ওপর ডিগ্রি রয়েছে। অন্য বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্স নামে সমন্বিত ডিগ্রি দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য চাকরির ক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্নতাও রয়েছে। দেশে তো বটেই, দেশের বাইরেও চাকরির ক্ষেত্র আছে অনেক। ফলে এই পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে আকৃষ্ট হচ্ছেন তরুণেরা।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুপালন অনুষদের পশুপুষ্টি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আল-মামুন বলেন, এ অনুষদের স্নাতকেরা অনেক ভালো অবস্থানে আছেন। বিভিন্ন দেশে কাজ করছেন। অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে স্নাতক চাওয়া হলেও স্বল্পতার কারণে দিতে পারা যায় না। মোদ্দা কথা এই বিভাগ থেকে পাস করে কেউ বসে থাকেন না। ভেটেরিনারি অনুষদের প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক মো. আবু হাদী নূর আলি খান বলেন, ভেটেরিয়ানরা শুধু পশু চিকিৎসাতেই সীমাবদ্ধ না, পশু-পাখির মাধ্যমে যেসব রোগ মানুষের মধ্যে ছড়ায় সেগুলো নিয়েও গবেষণা করছেন। বিদেশে ভেটেরিনারিদের চাহিদা ব্যাপক। অনেক বিদেশি শিক্ষার্থী এ বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন পড়াশোনা করছেন।
চাকরির ক্ষেত্র
এ ক্ষেত্রে ভালো ফল করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার সুযোগ রয়েছে। আর বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে উপজেলাগুলোতে ভেটেরিনারি সার্জন হিসেবে যোগ দেওয়ার সুযোগ তো আছেই। একই পরীক্ষায় পশুপালন অনুষদের স্নাতকেরা উপজেলাগুলোতে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, পশু উৎপাদন কর্মকর্তা কিংবা পোলট্রির উন্নয়ন কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন, যা পরবর্তী সময়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হিসেবে পদোন্নতি পান। বিভিন্ন ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে লেকচারার হিসেবে যোগ দেওয়া যায়। এ ছাড়া বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (বিএলআরআই) বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেওয়া যায়। এ প্রতিষ্ঠানের অধীনে বিভিন্ন সরকারি ফার্ম ও গবেষণা কেন্দ্রে নিয়োগ পেয়ে থাকেন ওই স্নাতকেরা।
সরকারি প্রতিষ্ঠান মিল্ক ভিটা, সাভারের বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় গো প্রজননকেন্দ্র ও দুগ্ধ খামার, কক্সবাজারের হরিণ প্রজননকেন্দ্র, সিলেটে ছাগল প্রজননকেন্দ্র, বাগেরহাটে মহিষ প্রজননকেন্দ্র, বেশ কয়েকটি জায়গায় কুমির প্রজননকেন্দ্র এবং বন্য প্রাণী প্রজননকেন্দ্রে শুধু ভেটেরিনারি ও পশুপালন গ্র্যাজুয়েটরা চাকরি করছেন। বিভিন্ন চিড়িয়াখানায় ক্যাডারে কিউরেটর এবং নন-ক্যাডারে অফিসার হিসেবে কাজ করছেন তাঁরা। এ ছাড়া যুব উন্নয়ন কেন্দ্র ও যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রেও চাকরি করছেন অনেকে। অনেকেই এসব বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করে ব্যক্তিগত পর্যায়ে পোলট্রি ও ডেইরি খামার দিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তবে বেসরকারি পর্যায়ে কাজের ক্ষেত্র অনেক বেশি ব্যাপক। বেসরকারি দুধ ও পোলট্রির খামার, ব্র্যাক, ফিড মিল, এনজিও এবং আন্তর্জাতিক সংস্থায় চাকরির সুযোগ আছে। এগুলোর মধ্যে আড়ং ডেইরি, কাজি ফার্মস, আফতাব বহুমুখী ফার্ম, মিল্ক ভিটা, সিপি ফুড উল্লেখযোগ্য।
কোথায় পড়বেন
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদে রয়েছে ভেটেরিনারি সায়েন্স বিভাগ এবং ঝিনাইদহে রয়েছে সরকারি ভেটেরিনারি কলেজ।