পেশা গড়ুন মেডিকেল টেকনোলজিতে
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
পৃথিবী সৃষ্টির আদিকাল থেকে মানুষের চাহিদা অনুযায়ী নানাবিধ পেশার উদ্ভব ঘটে। পেশা আবার পরিবর্তনশীল। যে পেশার কদর আজ আকাশচুম্বী কিছুদিন পর হয়তো এ পেশা মূল্যহীন। কোনও কোনও পেশায় উপপেশা সৃষ্টি হয়ে মূল পেশাকে করে ফেলে গুরুত্বহীন। পেশা নির্বাচনের পূর্বে সমসাময়িক প্রেক্ষাপট ও দৃঢ় দৃষ্টিভঙ্গি যুবকদের করতে পারে নির্ভাবনাময়, জীবনভর আনন্দময়।
তেমনই একটি অপার সম্ভাবনাময় পেশা মেডিকেল টেকনোলজি। ক্রমবর্ধনশীল জনসংখ্যার দেশ বাংলাদেশ। সমসাময়িক যে কোনও কার্যক্রম পরিচালনায় দক্ষতার মূল্যায়ন সহজে পরিমাপ করা যায়। দ্রুত বর্ধনশীলতার কারণে, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধতার ফলে মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েকগুণ। জীবনযাত্রার মানের সঙ্গে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা অঙ্গাঅঙ্গি জড়িত। বর্তমান চিকিৎসাব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল পরীক্ষা–নিরীক্ষার ওপর। নির্ভুল পরীক্ষা–নিরীক্ষা আর সঠিক চিকিৎসা পাওয়া একই বৃন্তে গাঁথা। বিভিন্নভাবে রোগ নির্ণয়ে পরীক্ষাগারসমূহে নির্ভরশীলতার প্রতীক হিসেবে নেপথ্যে যারা কাজ করেন, তারা মেডিকেল টেকনোলজিস্ট।
মেডিকেল টেকনোলজি প্রযুক্তি বিদ্যায় লেখাপড়া করে আগমন ঘটে এ পেশায়। বাংলাদেশ সরকার ১৯৮৫ সাল থেকে এ বিষয়ে তিন বছর মেয়াদী প্রাতিষ্ঠানিক ডিপ্লোমা কোর্স চালু করেছেন। ইতিপূর্বেও এ সংক্রান্ত লেখাপড়া ও প্রশিক্ষণ চালু ছিল। তৎকালীন পাকিস্তান সরকার ১৯৬৩ সালে ঢাকা ও রাজশাহীতে ২টি ইনস্টিটিউট স্থাপন করেছিল প্রথমে ৬ মাস, ১ বছর, ২ বছর প্রশিক্ষণ পরিচালনার পর বিশ্ব প্রেক্ষাপট ও জনস্বার্থ বিবেচনায় এ শিক্ষাকে মেডিকেল টেকনোলজি ও ৩ বছরমেয়াদী কোর্সে রূপান্তর ঘটানো হয়। বর্তমানে এ কোর্সের জনগুরুত্ব বিবেচনা করে ৪ বছরমেয়াদী করার চূড়ান্ত পরিকল্পনায় রয়েছে।
সরকারি পরিচালনাধীন ঢাকা, রাজশাহী, বগুড়ার পর চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে ৭ একর জায়গার ওপর মনোরম পরিবেশে একটি পূর্ণাঙ্গ ইনস্টিটিউট উদ্বোধনপূর্বক ছাত্র ভর্তির অপেক্ষায় রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গৃহীত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে প্রতি একজন গ্রাজুয়েট চিকিৎসকের বিপরীতে পাঁচজন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট প্রয়োজন হয়। সে মোতাবেক বাংলাদেশে ২ লাখ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট বর্তমানে প্রয়োজন। মেডিকেল টেকনোলজি শিক্ষা কোর্স কার্যক্রম পরিচালনার প্রধান দায়িত্বে থাকা স্টেট মেডিকেল ফ্যাকাল্টি অব বাংলাদেশ সরকারি–বেসরকারি মিলিয়ে এ পর্যন্ত ১০ হাজার মেডিকেল টেকনোলজিস্ট কোর্স সম্পন্ন করতে পেরেছে।
ব্যাপক চাহিদার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড এ পর্যন্ত বেসরকারিভাবে ৫৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এ সংশ্লিষ্ট কোর্স পরিচালনার অনুমতি প্রদান করেছে। এ ক্ষেত্রে স্টেট মেডিকেল ফ্যাকাল্টিও দ্রুত পদক্ষেপ হিসেবে বেসরকারিভাবে ৪০টি ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির অনুমতি প্রদান করেছে। গৌরবের কথা বাংলাদেশে একমাত্র চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পূর্ণাঙ্গ একটি ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি পরিচালনা করছে। চট্টগ্রামে বেসরকারিভাবেও আরো ৩টি ইনস্টিটিউট অনুমতি প্রাপ্ত হয়ে কোর্স কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি, জিপিএ ৩ পাওয়া সাপেক্ষে যে কোনও ছাত্র–ছাত্রী তার সুবিধামতো ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়ে সম্ভাবনার এ পেশা গ্রহণ করতে পারে। এখানে কোর্সের মেয়াদ–মান অভিন্ন হলেও কর্মক্ষেত্রে পদবি ভিন্নতা রয়েছে। যারা এক্সরে, সিটি স্ক্যান, এমআরআই ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার সঙ্গে জড়িত তারা মেডিকেল টেকনোলজিস্ট রেডিওলজি, যারা রক্ত, কফ, মল–মূত্র, বীর্য ইত্যাদি বিষয় নিয়ে পরীক্ষা করেন তারা মেডিকেল টেকনোলজিস্ট প্যাথলজি, যারা দাঁতের যাবতীয় চিকিৎসা ও সচেতনতা সৃষ্টিতে জড়িত তারা মেডিকেল টেকনোলজি ডেন্টাল, যারা বাত, ব্যথা, প্যারালাইসিস, স্পোর্টস ইনজুরি ইত্যাদি চিকিৎসা ও ব্যায়াম বিষয়ে জড়িত তারা মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ফিজিওথেরাপি, যারা ক্যান্সার চিকিৎসা নিরাময়ে সর্বাধুনিক থেরাপির সঙ্গে জড়িত তারা মেডিকেল টেকনোলজিস্ট রেডিওথেরাপি ইত্যাদি।
একজন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট প্রাথমিক চাকরি ক্ষেত্রে সরকারিভাবে বিসিএস কর্মকর্তা থেকে ২ গ্রেড নিচের বেতনভাতাদি প্রাপ্ত হন। বেসরকারি হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালনায় মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ বাধ্যতামূলক। কিন্তু মেডিকেল টেকনোলজিস্ট অপ্রতুলতার জন্য সরকারি এ নির্দেশ অনেকাংশে প্রতিপালন করা সম্ভব হয় না।
ডিপ্লোমা প্রাপ্তগণ তাদের মেধা, যোগ্যতা ও দক্ষতার সন্নিবেশ ঘটিয়ে উচ্চতর শিক্ষা যেমন বিএসসি ইন মেডিকেল টেকনোলজি গ্রহণ করতে পারে। এক্ষেত্রেও সরকারি, বেসরকারি পর্যায়ে সুযোগ রয়েছে।
এসএসসি পাস করার পর তিন বছরমেয়াদী মেডিকেল টেকনোলজি প্রযুক্তি বিদ্যা শিক্ষাকোর্স গ্রহণ শেষে ১৮/২০ বছর বয়সেই মর্যাদাপূর্ণ সেবাধর্মী সম্ভাবনাময় পেশা, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট হওয়ার সুযোগ যে কেউ গ্রহণ করতে পারে। 

 
	                
	                	
	             
	                       			                       	 
	                       			                       	 
	                       			                       	 
	                       			                       	