চাকরিটা পেয়ে গেছি বেলা… তারপর ?

চাকরিটা পেয়ে গেছি বেলা… তারপর ?

  • ক্যারিয়ার ডেস্ক

শেষ পর্যন্ত শেষ হয়ে গেল শিক্ষা জীবন। পড়াশোনার ঝামেলা আর নেই, নেই প্রতিদিন কলেজ-ভার্সিটিতে যাওয়ার চিন্তা। এখন কাজ একটাই; আর তা হলো চাকরি খোঁজা। সকালে ঘুম থেকে উঠলেই মনে হবে কখন চাকরি পাওয়া যায়। মনে করুন, অনেক খোঁজাখুঁজি করে মেধা আর ভাগ্যের জোরে একটা চাকরিও আপনি পেয়ে গেলেন। বেকারত্ব ঘুচলো আপনার। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল পরিবারের সবাই। মাস শেষে একটা ভালো টাকার অংক পাওয়া যাবে এটা কম কথা নয়। এ ছাড়া আপনিও এই ভেবে খুশি যে, এবার হাত খুলে খরচ করা যাবে। সারাজীবন তো শুধু কিপ্টেমিই করলেন। হ্যাঁ, চাকরি পাওয়ার পর অনেক ভাবনা এবং পরিকল্পনাই মনে আসতে পারে। কিন্তু একবারও কি ভেবেছেন, চাকরি তো পেলেন এর পরের কর্তব্য কী আপনার? প্রশ্ন শুনে হয়তো অবাক হচ্ছেন, হয়তো উত্তরও দিয়ে ফেলেছেন—কর্তব্য আবার কী। চাকরি পেয়েছি, এখন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত অফিস করব। বাড়ি ফিরব, বিশ্রাম নেব, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে আড্ডা মারব; ব্যস। আসলেই কি তাই? আপনার কর্তব্য কি এটুকুই? না, আপনার কর্তব্য এখানেই শেষ নয়। আসলে চাকরি পাওয়ার পর আপনার বিশেষ কিছু করণীয় রয়েছে, যে কাজগুলো সাহায্য করবে আপনাকে সঠিক পারফর্ম্যান্সে যেতে, কোম্পানির সঙ্গে আপনার বন্ধুত্ব বাড়াতে। জেনে রাখবেন, আপনি চাকরি পাওয়ার পর প্রথম যে দিন অফিসে যাবেন সেদিনের কিছু কাজ, কাজ করার প্রক্রিয়া, উদ্যোগ, অন্যদের সাথে আপনার কথাবার্তা, এমনকি হাঁটাচলা, নড়াচড়া সবই পরীক্ষকের চোখে লক্ষ্য করবে সবাই। এগুলোই আপনার সম্পর্কে আপনার বসকে ভালো অথবা মন্দ ধারণা দেবে। আপনার কলিগরা ভেবে নেবে আপনি মানুষটি কেমন। মনে রাখবেন, প্রথম দিনের কাজ চালচলন এবং আচার-আচরণের রেশ অনেক দিন ধরে থাকে। তাই প্রথম দিন নিজেকে সবার সামনে এমনভাবে উপস্থাপন করুন, যেন আপনার সম্পর্কে সবার মনে পজিটিভ ধারণার সৃষ্টি হয়। দেখবেন সবাই আপনার সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ করছে।

ভাল কিছু দিয়েই শুরু করুন

প্রতিটি অফিসেই বেশকিছু সুযোগ সুবিধা থাকে। এগুলো সবাই ভোগ করতে পারে না। তারাই ভোগ করতে পরে, অফিসে যারা ভালো কর্মদক্ষতা দেখাতে পারে। তাই প্রথম দুই-তিন মাস অফিসে নিজের ইতিবাচক প্রভাব তৈরিতে একটু বেশিই মনোযোগ দিন। আপনি নিজেকে এমনভাবে উপস্থাপন করুন যেন অফিসের কোনো কঠিন প্রজেক্টে বা অফিসের কোনো সুযোগের অফার আপনাকেই দেওয়া হয়। মন থেকে ঝেড়ে ফেলুন নেতিবাচক সব চিন্তা-ভাবনা। নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাস সঞ্চার করুন। সময় এবং সুযোগের সদ্ব্যবহার করুন। কঠিন পরিশ্রম করুন। আপনি যদি এই পরামর্শগুলো আত্মবিশ্বাসের সাথে মেনে চলেন, তাহলে দেখবেন অফিসে আপনার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়বে দ্রুত। প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘমেয়াদী কৌশল ও স্বল্প মেয়াদী পরিকল্পনা সম্পর্কে সঠিক এবং পরিষ্কার ধারণা থাকা দরকার। আপনি যখন ইন্টারভিউ ফেস করবেন তখন এ সম্পর্কে একটা সঠিক ছবি আপনার সামনে থাকা প্রয়োজন। এতে আপনার প্রতিদিনের ছোট ছোট কাজগুলোই তৈরি হবে দীর্ঘমেয়াদি কৌশলে পৌঁছবার সেতু। আপনার প্রতিষ্ঠান আপনার কাছ থেকে কতটুকু কর্মকৃতিত্ব আশা করে, সে ধারণা থাকা দরকার আপনার। আপনার কর্ম কতটুকু আপনি কৃতিত্বের সঙ্গে দেখাতে পারবেন, সে সম্পর্কেও আপনার নিজের সুস্পষ্ট ধারণা থাকা চাই। এ ধারণাগুলো যদি না থাকে, তাহলে পদে পদে হোঁচট  খেতে হবে আপনাকে। এক সময় হয়তো হারাতে হতে পারে চাকরিটাও!

কর্ণধারদের মেনে চলুন

চাকরি করবেন, অথচ বসের আদেশ-নিষেধ মেনে চলবেন না, তা তো কল্পনাই করা যায় না। চাকরিতে জয়েন করার প্রথম সপ্তাহেই আপনার বসের সঙ্গে প্রয়োজনীয় নানা ব্যাপারে খোলামেলা আলোচনা করুন। সেই সঙ্গে জেনে নিন কী করে আপনার বসকে সন্তুষ্ট রাখবেন। কারণ বস ইজ অলওয়েজ রাইট। সুতরাং আপনার বস কীভাবে তথ্য আদান-প্রদান করেন, তিনি কী ধরনের কর্মধারা মেনে চলেন, আপনার সঙ্গে কাজ করার সময় আপনার কাছ থেকে কী ধরনের অংশগ্রহণ তিনি প্রত্যাশা করেন ইত্যাদি বিষয় মাথায় রেখে তার সঙ্গে কাজ করুন। এমন কোনো কাজ করবেন না যার জন্য তিনি বিরক্ত হতে পারেন। মনে রাখবেন, তার বিরক্ত হওয়া মনে অফিসের পরিবেশটা আপনার জন্যে দুর্বিষহ হয়ে ওঠা। তখন আপনি কোনভাবেই অফিসে স্বাভাবিক হতে পারবেন না। চালিয়ে নিতে পারবেন না আপনার স্বাভাবিক কাজ কর্ম। এসব বিষয় মাথায় রাখলে অফিসটা সুন্দরই লাগবে।

সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাকদলে দলে কাজ

Sharing is caring!

Leave a Comment