বন্ধুত্ব হোক বইয়ের সঙ্গে
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
বই মানুষের সবচেয়ে ভালো বন্ধু। মানব জীবনের সুন্দর অভ্যাসগুলোর মধ্যে পাঠ্যাভাস অন্যতম। আপনার মন খারাপ? কিছুই ভালো লাগছে না। নিঃসঙ্গতার করাল গ্রাসে নিমজ্জিত? প্রচণ্ড মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে জীবন কাটাতে হচ্ছে। জীবনে যখন এ ধরনের সমস্যা এসে হাজির হয়, যখন কোনো সমাধান পাওয়া যায় না। তখন আপনার পাশে বন্ধু হয়ে দাঁড়াতে পারে বই। এছাড়া আপনার ক্যারিয়ার গঠনেরও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বই।
অভ্যাস হোক পরিবার থেকেই
পরিবারই হলো মানুষের জীবনে প্রথম এবং গুরুত্বপূর্ণ স্কুল। নৈতিক-সামাজিক যত ধরনের গুণাবলি আছে সবকিছুর শিক্ষাই হতে হবে পরিবার থেকে। খেলাধুলা, পারিবারিক বিনোদনের পাশাপাশি মনের বিকাশের জন্য বইয়ের বিকল্প নেই। প্রতিদিনই কিছু না কিছু পড়ার চেষ্টা করুন। পড়ার জন্য এমন কোনো বিষয় বেছে নিন যা আপনার ভালো লাগবে। একটা গল্প বা উপন্যাস পড়ে আপনার ভালো না লাগার মানেই কি দুনিয়ার সব বই একই রকম একঘেয়ে বিরক্তিকর? কাজেই বই পড়াকে অর্থহীন বলার আগে কয়েক রকম বই পড়ে দেখতে পারেন। পড়ার কোনো বিকল্প নেই। পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি অন্যান্য বিষয় জ্ঞানবিজ্ঞান, সাহিত্য, রাজনীতি, সমাজ, বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনী, বিষয়ভিত্তিক বই পড়তে ধীরে ধীরে আগ্রহী হয়ে উঠুন।
প্রয়োজন পাঠাগার এবং পাঠচক্র
বইয়ের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করতে পাঠাগার এবং পাঠচক্র বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। আজকাল দেখা যায় পাঠাগার মানেই শুধু চুপচাপ বই পড়া। বই পড়ার পাশাপাশি তরুণদের একটু আড্ডার ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে আরও ভালো হতে পারে। এতে তরুণ-তরুণীরা পড়ার পাশাপাশি বই নিয়ে মুক্ত আলোচনা করার সুযোগও পাবে। বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার অন্যতম একটি মাধ্যম হতে পারে পাঠচক্র। পাঠচক্রগুলো স্কুল-কলেজ, সংগঠন বা মহল্লাভিত্তিক হতে পারে। পাঠচক্রের মাধ্যমে বই পড়া এবং বই নিয়ে আলোচনা দুটিই হয় বলে বেশ কাজে দেয়।
উপহারে বই
প্রিয়জনের প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে আমরা উপহার দিয়ে থাকি। বিশেষ কোনো দিন, ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসবেও আমরা একে অপরকে উপহার দিই। এসব উপহারের মাধ্যমে একদিকে যেমন সম্পর্কের বন্ধন দৃঢ় হয়, তেমনই বাড়ে পরস্পরের প্রতি আন্তরিকতা ও শ্রদ্ধাবোধ। আর তাই বর্তমানে এ উপহার দেয়া-নেয়ার রেওয়াজকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে হাজারও উপহার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। তবে উপহার হিসেবে প্রথমে আমরা বইয়ের কথা ভাবি না। কিন্তু বইয়ের চেয়ে শ্রেষ্ঠ উপহার আর কিছু আছে কি? সচেতন ও জ্ঞানী মানুষের কাছে বই হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার। উপহার হিসেবে যদি বইকে প্রাধান্য দেয়া হয় তাহলে তা যেমন রুচিশীল মানুষের জন্য হবে সবচেয়ে আনন্দের, তেমনি হবে স্থায়ীও। অন্যান্য উপহার সামগ্রীর প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলেও একটি ভালো বইয়ের প্রয়োজন কখনও ফুরাবে না।
জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, ‘মানুষের মননশীল, চিন্তাশীল, সৃষ্টিশীল চিন্তার যাবতীয় সূচনার বিস্ফোরণ একমাত্র বইয়ের মাধ্যমে হতে পারে। দুর্ভাগ্যের বিষয় দিন দিন মানুষের মাঝে বই পড়ার আগ্রহ কমে যাচ্ছে। মানুষ এখন বইয়ের পরিবর্তে ফেসবুক, টিভি, সিনেমা আর আড্ডা দিয়েই অবসর কাটায়। বই কেনা ও পড়ার অভ্যাসে ভাটা পড়ছে। প্রযুক্তিনির্ভর মানুষ বইকে সময়ক্ষেপণ বলেই মনে করে। ছাত্রছাত্রীরা নিতান্ত বাধ্য হয়েই পাঠ্যবই পড়ে। বই পড়ার প্রতি যে অনীহা সৃষ্টি হয়েছে তা আমাদের ব্যক্তি ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের অন্যতম একটা কারণ। আমাদের জীবসত্তা জাগ্রত থাকলেও মানবসত্তা জাগ্রত করার সিঁড়ি হচ্ছে বই। তাই বই পড়ুন, জীবন গড়ুন।’