পরিবেশ নিয়ে পড়ি
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
হলিউড তারকা এমা ওয়াটসন থেকে শুরু করে মাইক্রোসফটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা কিংবা মার্কিন সংগীতশিল্পী অ্যাকন—সবাই বলছেন জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সচেতনতার কথা। অভিনয়শিল্পী লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও তো গত বছর অস্কারের মঞ্চেও পরিবেশ রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন। সামনের দিনগুলোতে আমাদের জন্য আরও কত দুর্যোগ অপেক্ষা করছে, কে জানে! কোন ক্ষেত্রে কোন প্রযুক্তির ব্যবহার হবে কিংবা হবে না—এসব জানতে আমাদের প্রয়োজন সঠিক দিকনির্দেশনা। এই প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা যদি প্রস্তুত না হয়, সামনের দিনগুলোতে আমাদের পথ দেখাবে কে?
আগামীকাল ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস। কাল পৃথিবীজুড়ে নানা রকম কার্যক্রম পালিত হবে। পরিবেশবিদেরা কী বলছেন, ইন্টারনেট ঘেঁটে শিক্ষার্থীরা জেনে নিতে পারেন। বুঝবেন, বিশ্বজুড়ে চলছে পরিবেশ-বিপ্লব। এই বিপ্লবে অংশ নিয়ে পৃথিবীকে রক্ষা করতে চাইলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কিছু পড়ালেখাও প্রয়োজন। পরিবেশ রক্ষায় সচেতন হচ্ছে মানুষ, তৈরি হচ্ছে কাজের সুযোগ। তাই পরিবেশ নিয়ে পড়ালেখা করে ক্যারিয়ার গড়ার কথাও ভাবতে পারেন।
পরিবেশ নিয়ে পড়ালেখা কেন দরকার? এ প্রসঙ্গে কথা হলো বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এম আশরাফ আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জনসংখ্যা এখন এতই বেশি যে আবহাওয়াগত যেকোনো পরিবর্তনের সঙ্গে এই বিশাল জনগোষ্ঠীর ওপর তার একটা বিরূপ প্রভাব পড়ে। আবার এই আবহাওয়া পরিবর্তনের জন্য আমাদের বিশাল জনগোষ্ঠীও দায়ী। এখন রাতারাতি তো আমরা জনসংখ্যা কমাতে পারব না। আমরা যেটা পারি তা হলো এই বিশাল জনগোষ্ঠীর মাধ্যমে আবহাওয়ার নিয়ন্ত্রণ করতে।’
বিরূপ আবহাওয়ার উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে দিনকে দিন প্রচুর পরিমাণে “সলিড ওয়েস্ট” তৈরি হচ্ছে, যেটা একই সঙ্গে বাতাস এবং পানিদূষণের কারণ। এ রকম বেশ কিছু কারণ আছে। সঙ্গে আছে ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে প্রকৃতিসৃষ্ট সমস্যা। আমাদের দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ততা, প্রতিদিনই নদী শুকিয়ে যাওয়া, বুড়িগঙ্গার মতো নদীগুলোর হারিয়ে যাওয়া কিংবা হুটহাট “মোরা”র মতো ঝড় আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, আমরা প্রকৃতির কাছে কতটা অসহায়। সঙ্গে আমরা এটাও বুঝতে পারি, কেন এই বিষয়গুলোতে আমাদের শিক্ষার্থীদের আরও পড়াশোনা করা দরকার।’
পরিবেশ নিয়ে পড়াশোনার সুযোগ আছে কোথায়? অধিকাংশ সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েই পরিবেশ-সংক্রান্ত কোনো না কোনো বিষয় আছে। ভূগোল ও পরিবেশ, পরিবেশবিজ্ঞান, বন ও পরিবেশ…এমন ভিন্ন ভিন্ন নামে ভিন্ন ভিন্ন বিষয় চালু আছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বা খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন সরাসরি পরিবেশসংক্রান্ত বিষয় না থাকলেও পুরকৌশল বিভাগে মেজর হিসেবে ‘এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং’ বেছে নেওয়া যায়। ওদিকে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিবেশ প্রকৌশল নিয়ে পড়ার সুযোগ আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স নামে আলাদা একটি ফ্যাকাল্টিই আছে। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে চালু আছে এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট নামে একটি বিভাগ, আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পুরকৌশল বিভাগের আওতায় এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়া যায়।
শুধু পড়াশোনার অবাধ সুযোগই যে আছে তা নয়; প্রতিবছর দেশ-বিদেশে পরিবেশ নিয়ে আয়োজিত হচ্ছে বিভিন্ন সভা, কর্মশালা ও সম্মেলন। জ্ঞান অর্জনের সুযোগ আছে সেখানেও। বাংলাদেশ থেকে এখন অনেক ছেলেমেয়েই এসব সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন। নিজেদের মতামত, ভাবনা জানাচ্ছেন। ভিনদেশের তরুণদের ভাবনা সম্পর্কেও তাঁদের জানার সুযোগ হচ্ছে। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তাঁরা ভাবছেন, কীভাবে আমাদের প্রিয় পৃথিবী ও পৃথিবীর মানুষকে রক্ষা করা যায়। আল গোরের ক্লাইমেট রিয়েলিটি প্রজেক্টের আওতায় প্রতিবছর ক্লাইমেট রিয়েলিটি লিডারশিপ সম্মেলন হয়। এ ছাড়া ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, সিবিএটেন ইয়ুথ কিংবা ক্লাইমেট লাঞ্চপ্যাডের মতো আয়োজনগুলোও ভাবনার জগৎটা আরও সমৃদ্ধ করে।
জাতিসংঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) বা এসডিজিতে মোট ১৭টি লক্ষ্যের মধ্যে ৭টি লক্ষ্যই দেখানো হয়েছে পরিবেশ নিয়ে। আর এ নিয়ে কাজও হচ্ছে প্রচুর। গবেষণামূলক বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান বর্তমানে বাংলাদেশে চালু আছে, যে প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে তরুণদের পরিবেশ নিয়ে কাজ করার সুযোগ করে দিচ্ছে। গবেষণার পাশাপাশি সরকারি এবং এনজিওভিত্তিক বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে কর্মক্ষেত্রের এক বিস্তৃত সুযোগ তৈরি হয়েছে। তাই শিক্ষার্থীদের জন্য পরিবেশ বাঁচানোর বিপ্লবে অংশ নেওয়ার এখনই সময়।