সাফল্য আসবেই, যদি…

সাফল্য আসবেই, যদি…

  • ক্যারিয়ার ডেস্ক

আর কিছুদিন পরই শুরু হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ’ ইউনিট ভর্তিযুদ্ধ।। বাংলাদেশের অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীদের এখন দিন-রাত কঠোর পরিশ্রম করতে হচ্ছে। সঠিক পরিকল্পনাই শুধু পারে একজন শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষার লক্ষ্য পূরণে সহায়তা করতে। নতুনদের অনুপ্রেরণা জোগাতে কথা হচ্ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় গত বছরের দ্বিতীয় স্থান অধিকারী মো. ইমরুল হক এবং তৃতীয় স্থান অধিকারী নাবিলা নিশাত বিনতে জামানের সঙ্গে।


‘খ’ ইউনিটে ভর্তির পরামর্শ

ভর্তি পরীক্ষা হলো একধরনের ‘ Aptitude Test’, অর্থাৎ প্রাকৃতিকভাবে অর্জিত ক্ষমতা বা দক্ষতা। সে কারণে ভর্তি পরীক্ষায় এমন সব প্রশ্নই আসবে, যা উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে তোমাদের জানা উচিত।
পাবলো পিকাসোকে তার মা বলেছিলেন, If you are a soldier, you will become a general. If you are a monk, you will become the Pope.’ সৈন্য বা সম্ন্যাসী না হতে পেরে তিনি বলেছিলেন, ‘Insted, I was a painter and became Picasso. অনুরূপভাবে তোমাদের প্রস্তুতির মূল লক্ষ্যই হবে সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে সর্বোচ্চ সাফল্য অর্জন করা। মনে রাখবে, ‘Perfection is not attainable, but if we chase perfection we can catch excellence.

ভর্তি পরীক্ষার জন্য যে বিষয়গুলো মাথায় রাখবে:

প্রথমত, ভর্তি পরীক্ষার নির্ধারিত সিলেবাস নেই। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, প্রস্তুতিও হতে হবে অবাধ ও অনির্দিষ্ট। বরং বিগত বছরের প্রশ্ন দেখে তোমাকে গুরুত্বপূর্ণ টপিক শনাক্ত করতে হবে এবং এই বাছাইকৃত টপিকগুলো সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে অনুশীলন করতে হবে।

Untitled-5-59bd5c919f067
মো. ইমরুল হক ও নাবিলা নিশাত বিনতে জামান। ছবি: সংগৃহীত

দ্বিতীয়ত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্ন কঠিন হয় না, বরং Critical এবং confusing হয়। তাছাড়া প্রতিটি প্রশ্নই এমনভাবে করা হয় যেন তুমি বিভ্রান্ত হয়ে যাও। তাই ধৈর্য ধারণ করে প্রশ্নের ফাঁদ এড়িয়ে সঠিক উত্তর দেবে।
তৃতীয়ত, ভর্তি পরীক্ষা হবে MCQ পদ্ধতিতে। যেখানে চারটি অপশনের মধ্যেই সঠিক উত্তরটি লুকিয়ে থাকে। তাই তুমি অপশনের তুলনামূলক বিশ্নেষণ করতে পার, তাহলে খুব সহজেই সঠিক উত্তর দিতে পারবে।
চতুর্থত, পরীক্ষার হলে সময়ের যথোপযুক্ত ব্যবহার করতে হবে। ৬০ মিনিটে ১০০টি প্রশ্নের উত্তর করতে কোনোভাবেই সময়ের ব্যাপারে উদাসীন হওয়া যাবে না।

পরীক্ষায় এমন প্রশ্ন থাকে, যা তুমি ২০ সেকেন্ডে উত্তর করতে পারবে আর কিছু প্রশ্নে ২ মিনিটও লেগে যায়। কিন্তু ২০ সেকেন্ডে উত্তর করা যায় এমন প্রশ্নের জন্য তুমি ১ মিনিট ব্যয় করে ফেললে বিপত্তি ঘটতেই পারে।
পঞ্চমত, মনে রাখবে সহজ প্রশ্নের সঠিক উত্তরের জন্য ১.২ নম্বর বরাদ্দ থাকে, তেমনি কঠিন প্রশ্নের উত্তরের জন্য সমান নম্বর পাবে। তাই কোনো প্রশ্ন যদিও কঠিন এবং সময়সাপেক্ষ হয় তবে তা নিয়ে অযথা বসে না থেকে পরবর্তী প্রশ্নে দ্রুত চলে যাবে।

ষষ্ঠত, ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নে যথেষ্ট ভারসাম্য বজায় রাখা হয়। তাই তোমার প্রস্তুতিতে যদি ভারসাম্য না থাকে তবে সাফল্য অর্জন কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে বাংলা ও ইংরেজিতে শুধু ব্যাকরণ অংশে পড়ে না থেকে অধ্যয়নের ক্ষেত্র বিচিত্র ও বহুমুখী করতে হবে। তাই ব্যাকরণ অনুচ্ছেদ, শব্দভান্ডার এবং সাহিত্য পাঠ সমান গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে।

সপ্তমত, বাংলা ব্যাকরণে চারটি আলোচ্য অংশ থেকেই প্রস্তুতি সাজাতে হবে। কারণ প্রতিটি অংশ থেকেই একাধিক প্রশ্ন আসতে দেখা যায়। তাছাড়া ধ্বনি, সন্ধি, সমাস, শব্দের উৎস, উপসর্গ, পদ এবং বাক্য- এই অধ্যায়গুলো বারবার পড়বে।

অষ্টমত, ইংরেজিতে ভালো না করলে পুরো প্রস্তুতিই বৃথা যেতে পারে। তাই ইংরেজিতে ভালো করতে Grammar, Vocabulary, Comprehension- তিন অংশেই সমান দক্ষতা অর্জন করতে হবে। তাছাড়া Grammar অংশে Verb সম্পর্কিত প্রশ্ন সব সময়ই সর্বোচ্চ গুরুত্ব পায়। তাই Causative verb, Right form of verb, Subjective-Verb-Agreement, Tense, Subjective, Conditionals- এই বিষয়গুলো অনুশীলন করবে।
নবমত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং অংশ সাধারণ জ্ঞান। সাধারণ জ্ঞানে অজস্র তথ্যের সম্ভারে ছাড়িয়ে গেলে চলবে না। বরং সাধারণ জ্ঞানচর্চায় তথ্যের তুলনামূলক গুরুত্ব অনুধাবন করতে হবে। তাই বর্তমান সময়ের আলোচিত এবং সমালোচিত ঘটনা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখতে হবে।
দশমত, অসংখ্য তথ্য পড়া নয়, বরং অসংখ্য তথ্য থেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং পর্যাপ্ত তথ্য মনে রাখাটাই সাধারণ জ্ঞানচর্চার সার্থকতা। তাই সাধারণ জ্ঞানকে ভয় না করে শক্তিতে পরিণত করতে হবে। দেখবে সাফল্য মিলবে। সাধারণ জ্ঞানে তোমার মূলমন্ত্র হবে- Some information is to be tasted, others to be swallowed and some few to be chewed and digested.

সর্বোপরি প্রস্তুতির এ দীর্ঘ পথ চলায় নিরাশ হয়ে পড়বে না। বরং সাহস ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যাবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সবুজ প্রাঙ্গণে তোমাদের আগমণের প্রতীক্ষায় রইলাম।

সূত্র: সমকাল

Sharing is caring!

Leave a Comment