ব্যাংকিং পেশার চ্যালেঞ্জ
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
আধুনিক যুগে মর্যাদাপূর্ণ পেশা হিসেবে যে কয়েকটিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়, ব্যাংকিং সেগুলোর মধ্যে অন্যতম। সামাজিক মর্যাদা ও আর্থিক নিরাপত্তার এটি সবচেয়ে স্ট্মার্ট ও যুগোপযোগী পেশাগুলোর একটি। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ, কর্মব্যস্ত দিন, কাজের মধ্যে নেই একঘেয়েমি- সব মিলিয়ে এখানে ক্যারিয়ার বিল্ডআপও করা যায় খুব সহজে।
লক্ষ্য নির্ধারণ
অনার্সে ভর্তি হওয়ার আগেই অনেকে ক্যারিয়ারের দিকচিহ্ন নির্ধারণ করে থাকেন। এর আগে বাবা-মা কিংবা মুরব্বিদের চাপে নিজে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। তাই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে পা রাখার কালেই তিনি ভেবে নেন- কী করবেন? এ ক্ষেত্রে বর্তমান সময়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীরই প্রথম পছন্দ ব্যাংকিং জব। কেন? কারণ বর্তমানে ব্যাংকিং অনেক বড় একটা সেক্টর। এখানে ক্যারিয়ার ক্ষেত্রটা অনেক বড়। এ পেশা যেমন চ্যালেঞ্জের, তেমনি এখানে শ্রমের ন্যায্যমূল্য পাওয়া যায়। ব্যাংক অন্য করপোরেট হাউসগুলো থেকে অধিক স্ট্মার্ট বেতন দেয়। এ ব্যাপারটাও অনেকের পছন্দ। তাই যদি আপনি সত্যিই এ সেক্টরে কাজ করতে চান, তাহলে আপনাকে আগেভাগেই লক্ষ্য ঠিক করতে হবে। নয়তো এই চ্যালেঞ্জিং জগতে টিকতে পারবেন বলে মনে হয় নাঙ্ঘ
চাহিদার অশেষ প্রান্তর
এই সেক্টর যেমন চ্যালেঞ্জিং তেমনি কঠিন পরিশ্রমের। তার পরও কেন এই সেক্টরে চাকরির চাহিদা বেড়েই চলেছে দিন দিন? হিসাবটা সহজ। ব্যাংকের চাকরি কঠিন হলেও এখানে প্রাপ্তি কম নয়। বিশেষ করে বেসরকারি ব্যাংকগুলোয় এখন যেমন খুবই ভালো মানের বেতন দেওয়া হয়ে থাকে, তেমনি এ পেশার সামাজিক মর্যাদাও বেশি। ব্যাংকের জব এখন যথেষ্ট সম্মানজনক। তা ছাড়া অন্য করপোরেট হাউসগুলো থেকে ব্যাংক তার কর্মীদের ভালো সুযোগ-সুবিধাও দিয়ে থাকে।
যাত্রা শুরুর গল্প
সাধারণত বাণিজ্য বিভাগের ছেলেমেয়েরাই এ পেশাতে বেশি আসেন। বর্তমানে দেখা গেছে, বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রছাত্রীরাও এখানে অনেক ভালো করছেন। তাই ব্যাংকগুলো এখন আর তেমন ধরাবাঁধা নিয়ম করে দেয় না। বরং চাকরির পরীক্ষাগুলোতে যারা ভালো করতে পারেন, তাদের প্রতি কর্তাব্যক্তিদের আগ্রহ বেশি।
সুতরাং আপনি যদি বাণিজ্য বিভাগের নাও হয়ে থাকেন, সমস্যা নেই। অবশ্য যদি আপনার বিবিএ বা এমবিএ সম্পম্ন করা থাকে তাহলে এ সেক্টরে সহজে প্রবেশ করতে পারবেন। কারণ বাংলা ও ইংরেজির পাশাপাশি পেশা সম্পর্কিত প্রশ্নও থাকে ব্যাংকের চাকরির লিখিত পরীক্ষাগুলোতে। তাই আপনি যে সেক্টর থেকেই আসেন না কেন, ব্যাংকিং খাত সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে স্বচ্ছ।
প্রস্তুতি পর্ব
যদি বিবিএ সম্পম্ন করা থাকে, তাহলে আপনি প্রস্তুত। কিন্তু যদি অন্যান্য বিষয়ে অনার্স করে থাকেন, তাহলে এমবিএ করে এই সেক্টরে প্রবেশ করতে যাওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। আর বিবিএর পর যদি এমবিএ সম্পম্ন থাকে- তাহলে তো কথাই নেইঙ্ঘ যেভাবেই হোক আপনি শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জন করার পর চাকরির প্রস্তুতি নিতে শুরু করবেন। এজন্য ‘ব্যাংকিং জব’ সংশ্নিষ্ট অসংখ্য বই বাজারে পাওয়া যায়। সেগুলোতে বিগত বছরের প্রশ্নমালা পাবেন। পুরনো কয়েক বছরের প্রশ্ন দেখলেই আপনি সহজে বুঝে যাবেন- কী কী পড়তে হবে, কীভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে, কোথা থেকে শুরু করতে হবে। এ ছাড়া চলতি বিষয়াবলি নিয়ে প্রতি মাসে কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স সংশ্নিষ্ট যত পত্র-পত্রিকা বের হয়, সেগুলো দেখতে পারেন। বর্তমানে দৈনিক পত্রিকাগুলো চাকরি নিয়ে নিয়মিত আয়োজন করে থাকে। সেগুলোতেও আপডেট থাকতে হবে।
পরের ধাপ
এই ধাপটা তখনই শুরু করবেন, যখন আপনি প্রথম ধাপে উত্তীর্ণ হবেন। অর্থাৎ পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য পড়াশোনা যথেষ্ট করেছেন, এ ধাপে পরিচিত কোনো ব্যাংকার খুঁজে বের করে ব্যাংকিং সেক্টরের কিছু বিষয়ে প্রাথমিক ধারণা মুখে মুখে বুঝে নিন। এটা আপনার খুবই কাজে দেবে। অনেকটা প্র্যাকটিক্যাল কাজের মতোই। সুতরাং এর গুরুত্ব বুঝতেই পারছেন।
ইন্টার্নের সুফল
যারা বিবিএ সম্পম্ন করেন, তাদের মধ্যে যারা ব্যাংকিং সেক্টরে চাকরি করতে আগ্রহী, সাধারণত ইন্টার্ন করেন কোনো ব্যাংকে। এটা খুবই চমৎকার। বিবিএ বা এমবিএর পর সম্ভব হলে ভালো কোনো ব্যাংকে ইন্টার্ন করুন। এটা আপনার জন্য খুবই কাজে দেবে এই সেক্টরে প্রবেশ করতে, টিকে থাকতে। তাই কষ্ট করে হলেও কোনো ব্যাংকে ইন্টার্ন করে ফেলুন।
যাচাই–বাছাই
কেবল পড়াশোনা করে গেলেই হয় না; সবসময় নিজেকে যাচাই করতে হয়। কতটা পড়াশোনা করলেন, কতদূর অগ্রসর হলেন- এটা সবসময় খেয়াল রাখবেন। কীভাবে? বিভিম্ন মডেল টেস্ট দেবেন। চাকরির ইন্টারভিউ দেবেন। লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন। এভাবে বারবার নিজেকে যাচাই করলে কাগ্ধিক্ষত স্থানে গিয়ে আর আপনি আটকাবেন না; বাড়বে আত্মবিশ্বাস, যা সবচেয়ে জরুরি চাকরি পেতে এবং চাকরি জীবনের সফলতা অর্জনে।
হোক জয়
ব্যাংকিং পেশা সুন্দর পেশা, ভালো পেশা। এর পেছনে রয়েছে কঠিন পরিশ্রম। সুতরাং শুরু করার আগেই ভেবে নিন- আসলেই এ পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে চান কি-না? যদি চান, তাহলে কোমর বেঁধে লেগে পড়ূনঙ্ঘ লক্ষ্য স্থির থাকলে সবশেষে আপনার জয় হবেই।
সঠিক লক্ষ্যে পৌঁছতে পরিশ্রম এবং সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী পড়াশোনা করে গেলে লক্ষ্যবিন্দুতে পৌঁছতে কোনো বাধা নেই। এই তো সব কথার শেষ কথা। আপনার সাফল্যের জয় হোক।