মেডিকেল কলেজ ভর্তি পরীক্ষা: সব বিষয়ে সমান গুরুত্ব দাও
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
২০১৭-১৮ সেশনের মেডিকেল ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের জানাই অনেক শুভকামনা। ‘মেডিকেল কলেজ’ হাজারো শিক্ষার্থীর আজন্ম লালিত স্বপ্ন। আমাদের মতো উম্নয়নশীল দেশের দরিদ্র মানুষের স্বাস্থ্যসেবা দিতে দরকার সৎ, পরিশ্রমী ও মেধাবী ডাক্তারের। তোমাদের মধ্য থেকেই দেশ খুঁজে পাবে এমন ডাক্তারদের। ১ ঘণ্টার একটি পরীক্ষার মাধ্যমে আগামী অক্টোবর মাসেই রচিত হবে তোমাদের স্বপ্ন পূরণের ইতিহাস। ভয় পাওয়ার কিছুই নেই। জীবনে কত পরীক্ষাই দিলে, এ আবার এমন কীঙ্ঘ শুধু বলছি, ১ ঘণ্টা মাথাটা ঠান্ডা রাখা। সুস্থ মস্তিস্ক অনেক অসাধ্য সাধন করতে পারে।
পরীক্ষার বাকি আছে এক মাস। এবার প্রিপারেশন নিয়ে কিছু কথা বলি- ১০০ (একশত) নম্বরের ১০০টি এমসিকিউ প্রশ্নের ১ (এক) ঘণ্টার লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। লিখিত পরীক্ষায় বিষয়ভিত্তিক নম্বর- জীববিদ্যা ৩০, রসায়নবিদ্যা ২৫, পদার্থবিদ্যা ২০, ইংরেজি ১৫, সাধারণ জ্ঞান : বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ৬, আন্তর্জাতিক ৪। লিখিত পরীক্ষায় ১০০ নম্বরের মধ্যে ন্যূনতম ৪০ নম্বর পেতে হবে। লিখিত পরীক্ষায় ৪০ নম্বরের কম প্রাপ্তরা অকৃতকার্য বলে গণ্য হবে।
তোমাদের পরীক্ষা হবে পাঁচটি বিষয়ে-জীববিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞান। ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞান ছাড়া বাকি বিষয়গুলো কলেজের দুই বছরে অনেক পড়েছ তোমরা। আশা করি, এই বিষয়গুলোতে তোমাদের তেমন সমস্যা হবে না। রসায়ন দ্বিতীয়পত্র নিয়ে সবার কমবেশি ভয় থাকে। সবার অভিযোগ, মনে থাকে না। তাই বলব, প্রতিদিন রসায়ন দ্বিতীয়পত্রের জন্য একটা নির্দিষ্ট সময় বের করো। নতুন পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আগের দিন যা পড়েছিলে আর একবার পড়ে দেখ, দেখবে অনেক সহজ মনে হবে আগের চেয়ে। ভর্তি পরীক্ষায় পদার্থবিজ্ঞান আর রসায়ন থেকে দু-চারটা অঙ্ক থাকে সাধারণত। তাই বলব, বইয়ের এক সূত্রের যে অঙ্কগুলো আছে, সেগুলো সমাধান করো। বইয়ের ছক, পার্থক্য, বোল্ড অক্ষরে লেখা লাইনগুলো ভালোমতো দেখবে। পাঠ্যবইয়ের সংখ্যা এখন অনেক বেড়ে গেছে। একটি বই-ই ফলো করো। আর অন্য বই থেকে গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো এই বইয়ে লিখে রাখ।
ইংরেজি আর সাধারণ জ্ঞান নিয়ে খুব ভয় পাওয়ার দরকার নেই। বিসিএস আর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার বিগত বছরের প্রশ্নগুলো বারবার করে পড়। আর হ্যাঁ, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞান তুলনামূলকভাবে সহজ হয়। মনে রাখবে, ৭৫ নম্বর আছে তোমার গ্রুপ সাবজেক্টগুলোতে। তাই এখানে যদি ৬৫-৭০ নম্বর আশা করা যায়, তাহলে ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞান নিয়ে বেশি মাথাব্যথা করতে হবে না। পরীক্ষার অন্তত চার দিন আগে টেক্সট বুক পড়ে শেষ করবে। আর বাকি দিনগুলোতে নিজেকে যাচাই করার জন্য বেশি করে প্রশ্ন সমাধান করো।
প্রশ্নপত্রের উত্তর করার সময় যে উত্তরগুলো করতে কম সময় লাগবে, সেগুলো অবশ্যই আগে উত্তর দেবে। মনে রাখবে, ১০০টি প্রশ্নের জন্য সময় হলো ৬০ মিনিট। কঠিন প্রশ্নের পেছনে সময় নষ্ট করতে গিয়ে যেন সহজ প্রশ্ন বাদ দিয়ে আসতে না হয়। এই একটি মাস ফেসবুক, মোবাইল ফোন, ঘোরাঘুরি বাদ দিয়ে শুধু পড়াশোনার সঙ্গেই সখ্য রাখ। সফল হলে সবকিছু আবার ফিরে পাবে। ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করো, ঘুম ঠিক রাখ আর বেশি বেশি ধৈর্য ধারণ করো। সফল হওয়ার জন্য খুব বেশি মেধাবী হতে হয় না, হতে হয় অনেক বেশি ধৈর্যশীল, পরিশ্রমী আর আত্মবিশ্বাসী।
অনেকে পরীক্ষার হলে ঢোকার আগে বিশাল জনসমুদ্র দেখে ঘাবড়ে যায়। মনে রাখবে, তুমি ভালো পরীক্ষা দিলে তোমার সফলতা আসবেই, হোক না পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১ লাখের কাছাকাছি। আবারও বলছি, ১ ঘণ্টার পরীক্ষার সময়টাতে মাথা ঠান্ডা রাখার কোনো বিকল্প নেই। অনেক শুভকামনা মেডিকেল কলেজগুলোর ভবিষ্যৎ জুনিয়র মোস্ট ‘ডাক্তারদের’।
জীববিজ্ঞান: প্রাণিবিজ্ঞান থেকেই যেহেতু বেশি প্রশ্ন করা হয়, তাই প্রাণিবিজ্ঞানের মূল বইয়ের সংজ্ঞা, বইয়ের সব ছক, বৈশিষ্ট্য, পার্থক্য খুবই ভালো করে আয়ত্ত করতে হবে। বিশেষ করে মানবদেহ-সম্পর্কিত খুঁটিনাটি সব তথ্য ঝালিয়ে নাও বারবার। প্রতিটি তন্ত্র ও প্রক্রিয়ার ওপর পরিস্কার ধারণা রাখার সঙ্গে সঙ্গে নতুন বইয়ে যে ক্লিনিক্যাল বিষয়গুলো সংযুক্ত করা হয়েছে, সেখান থেকে প্রশ্ন আসার সম্ভাবনা রয়েছে। উদ্ভিদবিজ্ঞানের প্রশ্নগুলো হয়ে থাকে উদ্ভিদের বিভিম্নতা, অণুজীব, জৈবনিক প্রক্রিয়া, অর্থনৈতিকভাবে উপকারী উদ্ভিদ এসব বিষয়ের ওপর। কোন বিজ্ঞানী কোন মতবাদের জন্য বিখ্যাত, কোন সূত্রটি কত সালে আবিস্কৃত হয়েছে এসব তথ্য নখদর্পণে থাকতে হবে।
রসায়ন: রসায়ন দ্বিতীয় পত্র থেকে প্রশ্ন সাধারণত বেশি হয়ে থাকে। কোন বিক্রিয়ার সঙ্গে কোন বিজ্ঞানীর নাম জড়িত, কোনটি উপকারী, আবিস্কারের সাল সেসব বিষয় খেয়াল রেখ। জৈব রসায়ন, পরিবেশ রসায়ন, তড়িৎ রসায়ন, মৌলের পর্যাবৃত্ত ধর্ম, ডি বল্গক মৌল, রাসায়নিক বন্ধন ও অর্থনৈতিক রসায়নের বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে।
পদার্থবিজ্ঞান: পদার্থবিজ্ঞানে পরিচিত সূত্র এবং যেসব সূত্র ব্যবহার করে সহজে ছোট অঙ্ক কষা যায়, সেসব প্রশ্নই দেওয়া হয়। পার্থক্য, একক মান ইত্যাদি যত ছক আছে ভালোভাবে মনে রেখ, চর্চা করো। মনে রেখ, পরীক্ষার হলে কিন্তু ক্যালকুলেটর নিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।
ইংরেজি: এই অংশে বেশি নম্বর পাওয়ার জন্য Vocabularyতে ভালো হতে হবে। তাহলে Synonym-antonym নিয়ে বাড়তি কষ্ট হবে না। Right forms of verb, tense, parts of speech থেকে প্রতিবছরই প্রশ্ন করা হয়। Narration, voice, phrases and idioms, preposition নিয়ে একটু বাড়তি মনোযোগ দাও।
সাধারণ জ্ঞান: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক তথ্য, বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ঘটে যাওয়া আলোচিত ঘটনা সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখার জন্য দৈনিক পত্রিকাগুলোয় প্রতিদিন চোখ বুলাও। এ ছাড়া ক্ষুদ্রতম, বৃহত্তম, প্রথম ও একমাত্র এ ধরনের বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব দাও। বিসিএস পরীক্ষার গত কয়েক বছরের প্রশ্নগুলো সমাধান করলে তা কাজে দেবে।
জরুরি কিছু কথা: মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় প্রতি চারটি ভুল উত্তরের জন্য একটি সঠিক উত্তরের নম্বর কাটা যায়। তাই একটু কৌশলী হতে হবে সর্বোচ্চ সঠিক উত্তর দেওয়ার জন্য। কখনোই আগে পড়া হয়নি, সেসব নতুন করে এখন আর পড়তে যেয়ো না। বিগত বছরগুলোতে বারবার এসেছে এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাদ দিয়ে থাকলে সেসব আয়ত্ত করে ফেলাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।