তিন মেধাবীর পরামর্শ
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
নতুনদের অনুপ্রেরণা জোগাতে কথা হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় অনিক, তাসনিম এবং নাতিকের সঙ্গে। নতুনদের জন্য থাকলো তিন মেধাবীর পরামর্শ।
কিছুদিন পর শুরু হয়ে যাবে একটি যুদ্ধ। যুদ্ধ শব্দটি শুনলেই বন্দুক, গোলাবারুদ, ট্যাঙ্ক, কামান ইত্যাদি সহকারে অপরের প্রাণনাশের ছবি মনে ভেসে ওঠে। কিন্তু এর বাইরেও যে আরেকটি যুদ্ধ আছে! যার গুরুত্ব কোনো অংশে কম নয়। এই যুদ্ধের নাম ‘ভর্তিযুদ্ধ’। আর এই ভর্তিযুদ্ধের সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা বলতে গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় যারা প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়েছেন, প্রিয় ক্যাম্পাসের আমন্ত্রণে সেই তিনজন এক হয়েছিলেন গত ৯ সেপ্টেম্বর। তাদের তিনজনের মধ্যে প্রথম হয়েছিলেন মো. অনিক ইসলাম, দ্বিতীয় হয়েছেন তাসনিম এবং তৃতীয় হয়েছিলেন নাতিক মাহমুদ।
তিনজনকে নিয়ে আমরা আড্ডায় বসেছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে। ইতিমধ্যে তারা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের আট মাস পার করেছে। টিএসসির আড্ডা, ক্যাম্পাসের সজীবতার সঙ্গে এখন অনেকটা মিশে গিয়েছে। নিজেদের মধ্যে পরিচয় পর্ব শেষে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে কথা শুরু হয়।
তিন মেধাবীর পরামর্শ
অনিক, তাসনিম, নাতিকরা পরীক্ষা দিয়েছেন প্রায় এক বছর হয়ে গেল। আবার আসছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা। এ বছর যারা খ-ইউনিটের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তাদের জন্য গতবারের সেরারা কী পরামর্শ দেবেন? প্রশ্ন শুনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই তিন মেধাবী মৃদু হেসে একে অপরের দিকে ইঙ্গিত দিলেন। প্রথমেই মুখ খুললেন বরিশালের মেয়ে তাসনিম, ‘যেহেতু খ ইউনিটের পরীক্ষার খুব বেশি দিন বাকি নেই। এই সময়টা সর্বশেষ প্রস্তুতির সময়। এখন পড়াশোনাটা ঘুচিয়ে নিতে হবে। এই সময়ে পড়াশোনার ব্যাপারে বলতে গেলে বলব, নতুন জিনিস খুব বেশি পড়ার দরকার নেই। এতদিন যা যা পড়েছ তাই আবার রিভাইজ দেওয়াই ভালো হবে। আর বেশি বেশি প্র্যাকটিস করতে হবে এখন। যতই প্র্যাকটিস করবে ততই তুমি ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার যোগ্য হিসেবে গড়ে উঠবে। আর সাবজেক্টের কথা বলতে গেলে বলব- বাংলা পাঠ্যবই খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তবে এখন পুরো বই পড়ে সময় নষ্ট না করে বিশেষ বিশেষ অধ্যায়ের ওপর নজর দিতে হবে। আর বাংলা ব্যাকরণের ক্ষেত্রে বলব সন্ধি, উপসর্গ, সমাস- এগুলোর ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। সাধারণ জ্ঞানের কিছু বাছাই করা বিষয় না পড়ে সব বিষয়েই চোখ বোলানো উচিত। আর সাম্প্রতিক বিষয়গুলোর ওপর বিশেষ নজর রাখতে হবে। তাসনিমের পরামর্শ শুনে অনিক বলে উঠলেন, তাসনিম একাই আমাদের তিনজনের পরামর্শ দিয়ে দিলেন। কাজ শেষ। তৎক্ষণাৎ আবার হাসতে হাসতে অনিক তাসনিমের কথার সঙ্গে ইংরেজির ব্যাপারটা যোগ করলেন, ‘ইংরেজি ভালো করতে হলে মূল বই ফলো করা উচিত, কারণ এই ইউনিটে ইংরেজির অনেক প্রশ্ন মূল বই থেকে এসে থাকে। আর গ্রামার সাইটগুলো একটু ভালোভাবে জ্বালিয়ে নিতে হবে। এই দু’জনের কথার সঙ্গে নাতিক মাহমুদ বিগত বছরের প্রশ্নগুলো সমাধানের ওপর জোর দিলেন। কারণ হিসেবে তিনি বললেন, খ আর ঘ ইউনিটে বিগত বছরের প্রশ্নগুলো থেকে অনেক প্রশ্ন এসে যায়, বিশেষ করে সাধারণ জ্ঞানে তো অনেক প্রশ্নই কমন পড়ে।
কত ঘণ্টা পড়ব?
শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা ধারণা প্রচলিত আছে, ভর্তি পরীক্ষার আগে পরীক্ষার্থীদের একটাই কাজ নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দিন-রাত শুধু পড়া আর পড়া। সত্যিই কি তাই? তিনজন সমস্বরে বলেন, ‘মোটেই না।’ পুরো আড্ডায় ‘মৃদুভাষী’ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া অনিক ইসলাম বললেন, ‘এখন কত ঘণ্টা পড়ব সেই চিন্তা না করে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে হবে এবং তার সমাধানে আত্মনিয়োগ করতে হবে।’ আর নাতিক মাহমুদ বলেন, ‘এখন কত ঘণ্টা পড়ব সেটির ওপর গুরুত্ব না দিয়ে রুটিন মাফিক পড়ার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। আর হ্যাঁ, সেই রুটিনটা নিজের তৈরি করা রুটিন হতে হবে, অন্যের দেওয়া রুটিন নয়। যেমন- আমি এই সময়ের মধ্যে এই অংশটা শেষ করব। এভাবে রুটিন অনুযায়ী পড়লে আশা করি ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করা যাবে।’
৪ পেয়ে টপ ৫০-এ অবস্থান
এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অনেক শিক্ষার্থীই আশানুরূপ ফল পাননি। জিপিএ-৫ না পেয়ে মন ভেঙে গেছে কারও কারও। তাদের জন্য এই তিন মেধাবীর কী বলার আছে? প্রশ্নটি শূনই রাজশাহী কলেজের প্রাক্তন ছাত্র নাতিক মাহমুদ দৃঢ়কণ্ঠে বলে উঠলেন, ‘গত বছর খ ইউনিটে যিনি ৫০তম হয়েছিলেন, তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৪ সামথিং পেয়েছিলেন।
সুতরাং জিপিএ নিয়ে দুশ্চিন্তা করার কোনো কারণ দেখছি না।’ নাতিকের সঙ্গে আরেকটু যোগ করে তাসনিম বলেন, ‘তারপরও যারা জিপিএ নিয়ে দুশ্চিন্তা করছ তোমাদের এটা মাথায় রাখা উচিত যে, তোমাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী যারা তারাও তোমাদের অনুরূপ জিপিএ নিয়ে আসবে। সুতরাং জিপিএ নিয়ে চিন্তা না করে এখন শেষ প্রস্তুতির দিকে মনোযোগ দেওয়াটাই হবে যুক্তিযুক্ত।’
নওগাঁর মেধাবী ছাত্র মো. অনিক ইসলাম খ ইউনিটের পরীক্ষার্থীদের জন্য বিষয়টি আরও খোলাসা করলেন। তিনি বলেন, মানবিক বিভাগ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে প্রতি বছর যারা জিপিএ-৫ পান, তাদের সংখ্যা গড়ে পাঁচশর একটু বেশি। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মানবিক বিভাগে প্রায় আড়াই হাজার আসন আছে। অতএব বোঝাই যাচ্ছে, জিপিএ-৫ না পেয়েও এই বিভাগে পড়ার সুযোগ হতেই পারে। সুতরাং জিপিএ নিয়ে হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই।