আমি কি আত্মমূল্যায়ন করতে পারি

আমি কি আত্মমূল্যায়ন করতে পারি

  • কে এম হাসান রিপন

আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করি তখন একদিন আমার এক অত্যন্ত প্রিয় শিক্ষক আমাদের ক্লাশের সবাইকে কাজ দিলেন যেন আমরা আমাদের আত্মমূল্যায়ন করি। যেখানে আমরা ১০০% সৎ মন্তব্য করবো। আমাদের সবার হাতে একটি করে কাগজ ধরিয়ে দিলেন। যেখানে অনেকগুলো প্রশ্ন ছিল এবং সবগুলো প্রশ্নের পাশে হ্যা/না লেখা ছিল। যেহেতু আমরা অনেকে মিলে আত্মমূল্যায়ন করছিলাম তাই আমরা একজন আরেকজনের টা মিলিয়ে ফরমটা পূরণ করছিলাম। আসলে সেটা আত্মমূল্যায়ন কোনভাবেই হচ্ছিলনা। কারন মোটামুটি সবগুলো প্রশ্নের উত্তর হ্যা আসছিল। যাই হোক আমাদের স্যার খুব হতাশ হলেন এবং হালকা মোটিভেশন দিয়ে চলে গেলেন আর আমরা বেচে গেলাম। আমাদের সবার কাছেই মনে হচ্ছিল এই কাজটা করার কি দরকার ছিল। পরের বার কোন একটা ওয়ার্কশপে আমি অংশগ্রহন করি এবং সেখানেও এরকম একটি আত্ম মূল্যায়ন কিছু করতে দিয়েছিল এবং যথারীতি আগেরবারের মতোই কাজ হলো। তৃতীয়বার আরেকটি ওয়ার্কশপে আমাদের ফ্যাসিলিটেটর ড. রনজীৎ সিং মালহী ঐরকম একটি আত্ম মূল্যায়ন টাইপের ফরম ধরিয়ে দিয়ে বললেন সবাই বাসায় যান এবং দরজা-জানালা বন্ধ করে একদম একা বসে পূরণ করবেন। যাই হোক ততদিনে যেহেতু ক্যারিয়ার জিনিসটি বুঝতে পেসেছি তাই বাসায় এসে অনেকরাতে একা বসে নিজের কাছে ১০০% সৎ থেকে ফরমটি পূরণ করলাম। এবার দেখলাম বেশীরভাগ প্রশ্নের উত্তর ‘না’ আসছে। একটি বিষয় নিশ্চিত হলাম যে নিজের ক্যারিয়ারকে মজবুত করতে হলে এখনও ‍অনেক কাজ নিজের উদ্দ্যোগেই করতে হবে, সময় ও অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে আশানুরূপ ফলাফলের জন্য। সেই থেকে ব্যক্তিগত এবং কর্মক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন ওয়ার্কশপ, সেমিনার, সর্ট কোর্স, বিভিন্ন ক্লাব/এ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হতে শুরু করলাম। আমি একটি কথা বিশ্বাস করি “God helps only people who work Hard” আমি অনেক পরিশ্রম করলাম এবং ফলাফলও পেয়ে গেলাম। এবং আমি এও বিশ্বাস করি এই পরিশ্রমের কোন নিদৃষ্ট সময়সীমা নেই, যতদিন বেচে থাকবো এটা চলতেই থাকবে।

ছাত্রজীবন থেকেই আসলে আমাদের আত্ম মূল্যায়ন করা উচিত। আত্ম-মূল্যায়নের মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি আমরা কি কি জানি, কি কি জানিনা, আমাদের কি কি জানা উচিত ইত্যাদি।    

নিন্মে ২০টি প্রশ্ন দেয়া হলো এবং অনুরোধ থাকবে একদম সচেতন হয়ে প্রশ্নগুলো উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবেন এবং যদি আপনার অন্তত ১৬টি প্রশ্নের উত্তর যদি হ্যা হয় তাহলে আপনার ব্যক্তিগত গুনাগুণ অত্যন্ত শক্তিশালী।

কুইজ হ্যাঁ না
আমি নিজেকে ভালোবাসি    
আমার দক্ষতা সম্পর্কে অবগত    
আমি একজন Pro-Active মানুষ (আমি হুকুমের অপেক্ষায় থাকি না)    
আমি যা প্রতিজ্ঞা করি সেটা যেকোন মূল্যে রক্ষা করি    
আমি আমার পোষাকের ব্যাপারে অত্যন্ত সচেতন    
আমি সবসময় আমার সুস্বাস্থ্যের ব্যাপারে সচেতন    
আমি সময়ের মুল্য সম্পর্কে সচেতন এবং আমি অযথা সময় অপচয় করি না।    
আমি যা বলি বুঝে বলি! আমি যা পড়ি বুঝে পড়ি! আমি যা লিখি বুঝে লিখি।    
আমার কাজ কি সেটা আমি ভলো করে জেনে নেই এবং যদি না জানি তাহলে নিজ দায়িত্বে সেটা বুঝে নেই।    
আমি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই আমার কাজ সম্পন্ন করতে পারি এবং সময়ের আগেই জমা দেই।    
আমি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ বাছাই করে সম্পন্ন করতে পারি।    
আমি একজন টিম প্লেয়ার।    
আমি সঠিক সময় সিদ্ধান্ত নিতে জানি।      
আমি মানুষের সাথে সম্মান বজায় রেখে কাজ করি    
আমি গঠনমূলক সমালোচনা করতে পারি এবং প্রয়োজনে গোপনীয়তা রক্ষা করতে পারি    
যেখানে প্রশংসার প্রয়োজন সেখানে আমি কার্পণ্য করি না    
আমি সবকিছুকেই ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখার চেষ্টা করি আগে    
‘‘তুমিও জিতবে আর আমিও জিতবো” আমি এই নীতিতে বিশ্বাসী    
আমি ব্যঙ্গাত্মকমূলক মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকি    
সবচেয়ে বড় কথা আমি হাসতে জানি     

নিচের ভিডিও লিংকের মাধ্যমে ব্যপারটি আরো পরিস্কার হবে, আমি বিশ্বাস করি

https://youtu.be/OYZKInRfHq4

কে এম হাসান রিপন

নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ স্কিল ডেভলপমেন্ট ইনস্টিটিউট (বিএসডিআই)

Sharing is caring!

Leave a Comment