আইবিএ-তে পড়তে চাও?
- তাবাসসুম ইসলাম
‘অনেকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর শিক্ষার্থীদের নাকি পাস করার আগেই চাকরি হয়ে যায়, এটা কি সত্যি?’ ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের যেই তরুণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে আমরা কথা বলছিলাম, প্রশ্ন শুনে তাঁরা হাসলেন। সবার হয়ে উত্তর দিলেন মুহম্মদ শাফায়াত। ‘পুরোপুরি সত্যি না। এটা ঠিক যে কোথাও চাকরির আবেদন করলে প্রাথমিক বাছাইয়ে সাধারণত আইবিএর শিক্ষার্থীরা অগ্রাধিকার পান। তারপর কিন্তু আমাদের বন্ধুদের সঙ্গে আমাদেরই প্রতিযোগিতা করতে হয়।’
ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট) বা আইবিএ মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান। এর সুনামের পেছনে দক্ষ শিক্ষক, আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার যেমন ভূমিকা রয়েছে, তেমনি গতানুগতিকতার বাইরে বেশ কাঠামোবদ্ধ একটি ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে সীমিতসংখ্যক শিক্ষার্থী বেছে নেওয়ার পদ্ধতিটিও গুরুত্বপূর্ণ। ব্যবসায় প্রশাসন নিয়ে যাঁরা পড়তে চান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ তাঁদের জন্য একটা স্বপ্নের জায়গা। দীর্ঘদিনে আইবিএর শিক্ষার্থীদের একটা সুনাম তৈরি হয়েছে। দেশের বড় বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানের শীর্ষস্থানীয় পদে আছেন যেই প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা, তাঁরাও প্রতিষ্ঠানটির একটা বড় শক্তি।
বিবিএতে ভর্তি হতে
আইবিএতে বিবিএর শিক্ষার্থীদের জন্য আসনসংখ্যা ১২০। লিখিত পরীক্ষার পর সাধারণত ১৬০-১৮০ জন শিক্ষার্থী বেছে নেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে মৌখিক পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ভর্তির সুযোগ পান ১২০ জন। এ ক্ষেত্রে কোনো অপেক্ষমাণ তালিকা থাকে না, অর্থাৎ মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর যদি কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি না হন, তবে তাঁর আসনটি শূন্য থাকে।
বাংলা মাধ্যম, ইংরেজি মাধ্যম বা মাদ্রাসা বোর্ডের শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারেন। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফলের ক্ষেত্রে কিছু পূর্বশর্ত থাকে। যেমন গত বছর বলা হয়েছিল, বাংলা মাধ্যম ও মাদ্রাসা বোর্ডের শিক্ষার্থীদের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক—দুই পরীক্ষা মিলে চতুর্থ বিষয়সহ মোট জিপিএ ৭.৫ থাকতে হবে। আর ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের ও লেভেল এবং এ লেভেলের সাতটি বিষয়ের মধ্যে অন্তত চারটিতে বি গ্রেড এবং তিনটিতে সি গ্রেড থাকতে হবে। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এখনো এ বছরের সার্কুলার প্রকাশ করা হয়নি।
পরীক্ষার নিয়মকানুন
আইবিএর ভর্তি পরীক্ষার কাঠামো অনেকটাই আলাদা। এখানে ভর্তি পরীক্ষার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ, কম সময়ে বেশি সঠিক উত্তর দেওয়া। কিন্তু অন্যান্য বিভাগের ভর্তি পরীক্ষার মতো এখানে উচ্চমাধ্যমিকের কোনো বই পাঠ্যসূচিতে থাকে না। এমনকি কোনো নির্ধারিত পাঠ্যসূচিই আইবিএর ভর্তি পরীক্ষায় নেই। শুধু জানিয়ে দেওয়া হয়, কোন কোন বিষয়ের ওপর পরীক্ষা নেওয়া হবে।
ভর্তি পরীক্ষার দুটি ধাপ—লিখিত ও মৌখিক। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়া যায়। লিখিত পরীক্ষারও রয়েছে দুটি অংশ—বহুনির্বাচনী (এমসিকিউ) ও রচনামূলক (ন্যারেটিভ)। নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষার সময় ৯০ মিনিট। এতে তিনটি অংশ থাকে—ইংরেজি, গণিত ও অ্যানালিটিক্যাল বা বিশ্লেষণী অংশ। তিন বিষয়ের এই নৈর্ব্যক্তিক অংশে মোট নম্বর হলো ৭৫।
উল্লেখ্য, প্রতিটি বিষয়ে আলাদা করে উত্তীর্ণ হতে হবে। উত্তীর্ণ হওয়ার নম্বর বছরভেদে বা প্রশ্ন কতটা কঠিন বা সহজ হলো, তার ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে। কিন্তু প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিটি বিষয়ে অন্তত ৬০ ভাগ নম্বর না পেলে উত্তীর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা কম।
ইংরেজিতে সাধারণত গ্রামার (ব্যাকরণ), কম্প্রিহেনশন ও ভোকাবুলারির ওপর ভিত্তি করে প্রশ্ন করা হয়। গণিতের প্রশ্ন বীজগণিত বা অ্যালজেব্রা, পার্টিগণিত বা অ্যারিথমেটিক, জ্যামিতি বা জিওমেট্রি কেন্দ্রিক হয়ে থাকে। অ্যানালিটিক্যাল বা বিশ্লেষণী অংশের প্রশ্নের ধরনে কিছু বৈচিত্র্য থাকলেও পাজল মেলানো, ক্রিটিক্যাল রিজনিং বা কোনো ঘটনার সবচেয়ে সঠিক কারণ নির্ণয় করা, ডেটা সাফিসিয়েন্সি বা প্রদত্ত তথ্য যথেষ্ট কি না ইত্যাদি থাকে প্রশ্নপত্রে।
রচনামূলক পরীক্ষার সময় ৩০ মিনিট। এ ক্ষেত্রে সাধারণত নির্দিষ্ট জায়গার মধ্যে ইংরেজি ও বাংলায় দুটি অনুচ্ছেদ লিখতে দেওয়া হয়।
৫ পরামর্শ
গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইবিএর ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়েছিলেন আদিব আহমেদ খান। এবার যাঁরা ভর্তি হতে চান, তাঁদের জন্য আদিবের পাঁচ পরামর্শ—
১. ৯০ মিনিটের পরীক্ষায় যাঁরা বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে ‘সময়’টা কাজে লাগাতে পারবেন, তাঁরাই এগিয়ে থাকবেন। তাই বলে ধৈর্য হারালে চলবে না। তাড়াহুড়া করা যাবে না। মাথা ঠান্ডা রাখা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
২. একটা প্রশ্ন সমাধানের পেছনে অনেক সময় ব্যয় করা যাবে না। কোনো প্রশ্ন বেশি কঠিন মনে হলে পরের প্রশ্নে চলে যেতে হবে।
৩. প্রস্তুতির সময় প্রতিটি বিষয়কে সমান গুরুত্ব দিতে হবে। কেননা প্রতিটি বিষয়েই আলাদাভাবে পাস নম্বর লাগবে।
৪. প্রতিদিন ১০-২০টি নতুন ইংরেজি শব্দ শিখুন। কারণ, ভর্তি পরীক্ষায় আপনার ‘ভোকাবুলারি’ একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
৫. সময় ব্যবস্থাপনার কৌশল রপ্ত করতে হলে পুরোনো প্রশ্ন সমাধান ও মডেল টেস্টের মাধ্যমে নিয়মিত চর্চা জরুরি।
সূত্র : প্রথম আলো