কর্মক্ষেত্রে সৃজনশীলতা বাড়ানোর ৮ পদ্ধতি
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
তরুণ পেশাজীবী সামিয়া জামান (ছদ্মনাম)। প্রতিদিন অফিসের নানান কাজে ব্যস্ত থাকেন। কাজ করতে করতে কখন যে সময় পার হয়ে যায়, তা যেন টেরই পান না সামিয়া। আজকাল তিনি কাজের ক্লান্তিতে অবসাদে ভুগছেন। কাজে সৃজনশীলতা আর বৈচিত্র্য আনার আগ্রহ থাকলেও তেমন কাজ করতে পারছেন না তিনি। সামিয়ার মতো অনেকেই এমন সমস্যায় পড়েন। মানবসম্পদ বিশেষজ্ঞ ও প্রশিক্ষক মো. সোহান হায়দার এমন সমস্যা কাটিয়ে নিজেকে দক্ষ কর্মী হিসেবে গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দেন। তাঁর ভাষ্য, সৃজনশীলতা আসলে এক রকমের অভ্যাস। প্রতিদিন একটু ইতিবাচক কাজ নিয়মিত করার মাধ্যমে নিজের জীবনে যে কেউ পরিবর্তন আনতে পারে। মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ সোহান হায়দার সৃজনশীলতা বাড়াতে বেশ কিছু পরামর্শ দিচ্ছেন।
১. সকালের নাশতা করুন ভরপেট
অদ্ভুত শোনালেও সকালের নাশতার ওপর নির্ভর করে আমাদের সারা দিনের কর্মচাঞ্চল্য ও গতি। তরুণ পেশাজীবীরা সকালে তাড়াহুড়ার মধ্যে অফিসে দৌড়ান, যে কারণে অনেকেই নিয়মিত নাশতা করেন না। নিয়মিত সকালের নাশতা শুধু শরীরের ওপরই ইতিবাচক প্রভাব ফেলে না, দিনের প্রথম ভাগের কাজের ওপরও প্রভাব ফেলে। সুস্বাস্থ্যের জন্য সকালে নাশতা করতে হবে যেকোনো পেশাজীবীকে।
২. কাজের টেবিল পরিচ্ছন্ন রাখুন
যেখানে আমরা কাজ করি বা যে টেবিলে বসে কাজ করি, তা যতটা সম্ভব গুছিয়ে রাখুন। আমাদের অনেকেরই কাজ দেখানোর প্রবণতা থাকে, যে কারণে টেবিলে ফাইল আর কাগজপত্র ছড়িয়ে–ছিটিয়ে রাখি আমরা। আবার অনেক বস কর্মীদের টেবিলে ফাইলপত্র না দেখলে ভেবে নেন কর্মী ফাঁকি দিচ্ছে। অথচ কাজে আগ্রহ সৃষ্টি ও সৃজনশীলতা বিকাশে পরিচ্ছন্ন টেবিলের গুরুত্ব অনেক। পরিচ্ছন্ন টেবিল মনের ওপর চাপ কমায়।
৩. ই–মেইল পড়ুন নিয়মিত বিরতিতে
অনেকের একটি বাজে অভ্যাস হচ্ছে ঘন ঘন ই–মেইল পড়া। যখনই ই–মেইল, তখনই মুঠোফোন বা ডেস্কটপে চোখ রাখি আমরা। এতে একটি কাজ করার সময় মন অন্যদিকে চলে যায়। অনেক দক্ষ কর্মী দিনের শুরুতে ই–মেইল পড়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলেন না। আগের দিনের যে কাজগুলো বাকি আছে, কিংবা যে কাজে চাপ বেশি, তা শেষ করে ধীরেসুস্থে ই–মেইল পড়ুন। কাজের মান বাড়ানোর দিকে বেশি সময় দিন, ই–মেইল পড়ুন কাজের প্রয়োজনে, নিয়মিত বিরতিতে।
৪. তালিকা ধরে কাজ করুন
আগামীকাল কী করব, তা আমরা অনেকেই জানি না। আবার আজ কী করব, তা মুখস্থ করে রাখি। প্রতিদিন কী কী করবেন, তা একটি কাগজে লিখে তালিকা করে ফেলুন। কাজের গুরুত্ব বুঝে কোন কাজ আগে করবেন, তা ঠিক করুন। তালিকা ধরে কাজ করলে মস্তিষ্কের ওপর কোন কাজ বাকি, কখন করব—এমন চাপ তৈরি হয় না।
৫. বিরতি নিন
আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করে যাই। এতে আসলে কাজ করা হয়, কিন্তু কাজের মান অনেক ক্ষেত্রেই দুর্বল হয়ে যায়। নিয়মিত বিরতি নিন কাজের ফাঁকে। একটানা কাজে মস্তিষ্কের ওপর চাপ তৈরি হয়। প্রতি ঘণ্টায় নিয়মিত বিরতি নিন, পানি পান করুন নিয়মিত বিরতিতে।
৬. মুঠোফোন দূরে রাখুন
যেকোনো কাজ করার সময় কিংবা মিটিংয়ে ফোন দূরে রাখুন। বিভিন্ন অ্যাপের নোটিফিকেশন আমাদের মনঃসংযোগে বাধা তৈরি করে। কাজে গতিশীলতা আনতে ফোন দূরে রাখুন। মুঠোফোনকে কাজের প্রয়োজনে ব্যবহার করার অভ্যাস করুন।
৭. মিটিং ছোট করুন
কার্যকর ও গতিশীল মিটিং করার কৌশল আয়ত্ত করুন। প্রয়োজনে মানবসম্পদ বিভাগের সহায়তায় জেনে নিন কার্যকর মিটিং করার কৌশল। ১৫ বা ২০ মিনিটের ছোট ছোট মিটিং সৃজনশীলতা বিকাশে বেশ কার্যকর।
৮. একবারে এক কাজ
আমরা বহু কাজ একসঙ্গে করার চেষ্টা করি। এতে আসলে কোনো কাজই ভালো করে শেষ করা হয় না। যখন যা করবেন, একটা কাজেই মনঃসংযোগ করুন। এক হাতে কয়েকটা কাজ আসলে নিজেকে ধীর করে দেয়।
সূত্র : প্রথম আলো