প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি

প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি

  • ক্যারিয়ার ডেস্ক

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতির শুরুতেই কী করণীয় তা নিয়ে ইতোপূর্বে আলোচনা হয়েছে। এই পর্বে মাদারীপুরের মহিষেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শ্রাবণী বিশ্বাস এবং গোপালগঞ্জের নাটগ্রাম তেঁতুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাগর মোল্লার সঙ্গে আলাপ করে তিনটি বিষয়ের (বাংলা, ইংরেজি ও গণিত) গুরুত্বপূর্ণ টপিকস ও শর্টকাট প্রস্তুতি নিয়ে লিখেছেন এম এম মুজাহিদ উদ্দীন


এবারের প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ১৩ লক্ষাধিক প্রার্থী অংশ নেবেন। উপজেলাভিত্তিক হলেও পরীক্ষায় বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য সামনের তিন মাসের একটি পরিকল্পনা করতে হবে। যাঁদের হাতে পর্যাপ্ত সময় নেই বা এতদিন ঠিকঠাক প্রস্তুতি নিতে পারেননি, তাঁরা চাইলে কাটছাঁট করে গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয়বস্তুর তালিকা করতে পারেন, যেগুলো ভালোভাবে আয়ত্ত করলেই প্রায় পুরো প্রস্তুতি হয়ে যাবে। প্রতিটি বিষয়ের সিলেবাস ও বিগত প্রশ্নপত্র ঘেঁটে এবং গুরুত্বপূর্ণ টপিকস (বিষয়বস্তু) ধরে পরিকল্পিতভাবে প্রস্তুতি নিতে পারলে বাছাই প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ এমসিকিউ (লিখিত) টপকানো সহজ হবে।

বাংলা : বিগত বাংলা প্রশ্নপত্রগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রতিটি নিয়োগ পরীক্ষায় ঘুরে-ফিরে নির্দিষ্ট কিছু বিষয় থেকেই বেশি প্রশ্ন আসে। বাংলা বিষয়ের দুটি অংশ—সাহিত্য আর ব্যাকরণ।

বাংলা সাহিত্য থেকে মাত্র চার-পাঁচটি প্রশ্ন করা হয়। শুরুতে বিগত বিসিএস, নন-ক্যাডার ও প্রাইমারির প্রশ্ন ব্যাখ্যাসহ পড়বেন। বিগত প্রশ্ন থেকেই হয়তো অনেক প্রশ্ন কমন পেয়ে যাবেন। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা বইয়ের লেখক পরিচিত জেনে রাখবেন। পাঠ্য বই থেকে পড়তে না পারলে চাকরির প্রস্তুতির গাইড বই থেকেও এসব তথ্য দেখে নিতে পারেন। সব লেখকের পরিচিতি মুখস্থ না করলেও চলবে।

সাহিত্য অংশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ—প্রাচীন যুগের চর্যাপদ, মধ্যযুগ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, জসীমউদ্দীন, শামসুর রাহমান, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ইত্যাদি। এখান থেকে প্রতি পরীক্ষায়ই একাধিক প্রশ্ন আসে। প্রয়োজনে এই কয়েকজন সাহিত্যিকের রচনাগুলো ছন্দ বা কৌশল বানিয়ে মনে রাখবেন। অনলাইনে সার্চ দিলে এমন অনেক নমুনা পাওয়া যাবে। এ ছাড়া দেখতে হবে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কয়েকটি গল্প, উপন্যাস ও নাটক এবং বিভিন্ন সাহিত্যিকের ছদ্মনাম ও উপাধি। এসব পড়া থাকলে আশা করা যায় বাংলা সাহিত্য নিয়ে আর টেনশন করতে হবে না। বাংলা সাহিত্যের চেয়ে ব্যাকরণ অংশ থেকে বেশি প্রশ্ন আসে। ব্যাকরণ অংশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ—

এককথায় প্রকাশ বা বাক্য সংকোচন, বাগধারা, কারক-বিভক্তি, সন্ধি, বানান শুদ্ধি, সমার্থক শব্দ, বিপরীত শব্দ, শব্দের প্রকারভেদ (কোনটা কোন দেশি শব্দ), সাধু ও চলিত রূপ, সমাস, পদ প্রকরণ, ক্রিয়ার কাল, পরিভাষা, উপসর্গ ইত্যাদি। এ ছাড়া আরো ভালো বা অগ্রিম প্রস্তুতির জন্য ব্যাকরণের অন্যান্য বিষয়বস্তুও অনুশীলন করতে পারেন।

ব্যাকরণের প্রস্তুতি মুনীর চৌধুরী রচিত নবম ও দশম শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ বই থেকে নিতে পারেন। বাজারের ভালো কোনো প্রকাশনীর বইও চাইলে পড়া যেতে পারে।

পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য সামনের তিন মাসের একটি পরিকল্পনা ছক করতে হবে। যাঁদের হাতে সময় কম, তাঁরা চাইলে কাটছাঁট করে গুরুত্বপূর্ণ এমন সব বিষয়ের তালিকা করতে পারেন, যেগুলো ভালোভাবে আয়ত্ত করলেই প্রায় পুরো প্রস্তুতি কাভার হয়ে যাবে

ইংরেজি : বাংলার মতো ইংরেজির দুটি অংশ—গ্রামার ও লিটারেচার। এখানেও লিটারেচার অংশ থেকে কম প্রশ্ন থাকে। বিগত পরীক্ষাগুলোর প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, লিটারেচার অংশ থেকে মাত্র দু-তিনটি প্রশ্ন এসেছে। আবার কোনো কোনো পরীক্ষায় একটিও প্রশ্ন আসেনি। তবু সেরা প্রস্তুতির জন্য এগুলোও পড়তে পারেন, বিশেষ করে বিগত বিসিএস, নন-ক্যাডার, প্রাথমিকসহ বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় আসা প্রশ্ন। খেয়াল রাখবেন, Shakespeare, John Milton, Wordsworth-সহ বিখ্যাত লেখকদের সম্পর্কে যেন ন্যূনতম ধারণা থাকে। আসল প্রস্তুতি নিতে হবে গ্রামার অংশে। বিগত প্রশ্নপত্র বিশ্লেষণের আলোকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে—1. Parts of Speech, 2. Identification of Parts of Speech, 3. Interchange Parts of speech, 4. Phrase & Clause, 5. Gerund & Participle, 6. Number & Gender, 7. Preposition, 8. Right form of Verb, 9. Voice & Narration, 10. Subject-Verb Agreement, 12. Conditional Sentence, 13. Synonym, Antonym 14. Spelling ইত্যাদি। ইংরেজি প্রস্তুতির জন্য একাধিক বই কেনার দরকার নেই। বাজার থেকে তথ্যবহুল এবং বিগত পরীক্ষার প্রশ্নপত্রসংবলিত ভালো প্রকাশনীর একটি বই কিনলেই চলবে।

গণিত : গণিতের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থেকেই পরীক্ষাগুলোতে বেশি প্রশ্ন আসে। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য গণিত বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করে।

গণিতকে তিনটি অংশে ভাগ করা যায়—পাটিগণিত, বীজগণিত ও জ্যামিতি। পাটিগণিত থেকেই ১০-১২টির মতো প্রশ্ন আসে। তাই এ অংশটাকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। পঞ্চম-অষ্টম শ্রেণির গণিত বই থেকে পাটিগণিত করবেন।

এখনো যতটুকু সময় আছে, নিয়মিত বুঝে বুঝে অনুশীলন করে গণিতের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হবে।

পাটিগণিতের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তু—মুনাফা, লাভ-ক্ষতি, শতকরা, অনুপাত, মৌলিক ও বাস্তব সংখ্যা, ঐকিক নিয়ম, বয়স, ভগ্ন্যাংশ, গড়, সময় ও দূরত্ব, লসাগু ও গসাগু, নৌকা ও স্রোতের বেগ প্রভৃতি।

বীজগণিত থেকে সাধারণত তিন-চারটি প্রশ্ন থাকে।

বীজগণিতের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তু—বীজগাণিতিক রাশি, উৎপাদকে বিশ্লেষণ, মান নির্ণয়, এক চলক ও দ্বিচলক বিশিষ্ট সমীকরণ, সূচক, লগারিদম ও ধারা প্রভৃতি। জ্যামিতি থেকে সাধারণত তিন-চারটি প্রশ্ন আসে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তু—রেখা, কোণ ও ত্রিভুজ, পিথাগোরাসের উপপাদ্য, বৃত্ত, বর্গক্ষেত্র, আয়তক্ষেত্র ও সমকোণী ত্রিভুজসংক্রান্ত সমস্যা প্রভৃতি।

একনজরে নম্বর বণ্টন

পরীক্ষা পদ্ধতি : এমসিকিউ (৮০) ও মৌখিক (২০)।

নম্বর বণ্টন : বাংলা-২০, ইংরেজি-২০, গণিত-২০, সাধারণ জ্ঞান+বিজ্ঞান+কম্পিউটার-২০। প্রতিটি বিষয় থেকে ২০টি করে মোট ৮০টি বহু নির্বাচনী প্রশ্ন থাকবে।

সূত্র: কালের কণ্ঠ

Sharing is caring!

Leave a Comment