জাপানি ভাষা শিখলেই চাকরির সুযোগ
- ক্যারিয়ারে ডেস্ক
‘মাস্টার্স পাস করার পর দুই বছর হতে চলল। চাকরি পাচ্ছি না। কয়েকজনের পরামর্শে এখানে ভাষা শিখতে এসেছি। ভর্তি হতে ১ হাজার ১০০ টাকা লেগেছিল। আর কোনো খরচ নেই। ভাষাদক্ষতার ওপর মৌখিক পরীক্ষা হবে। ওতে টিকলেই টেকনিক্যাল ইন্টার্ন হিসেবে বিনা খরচায় জাপানে চাকরি সুযোগ মিলে যেতে পারে।’
বলছিলেন আবু তৈয়ব। দারুস সালাম টেকনিক্যাল মোড়ে অবস্থিত শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে জাপানি ভাষা শিখছেন তিনি।
গত রোববার প্রশিক্ষণকেন্দ্রে গিয়ে জানা গেল, জাপানে চাকরিপ্রত্যাশী আবু তৈয়বসহ ৩০ প্রশিক্ষণার্থী জাপানি ভাষা শিখছেন। তাঁদের প্রশিক্ষক ইফতেখার শাহরিয়ার বলেন, জাপানে টেকনিক্যাল ইন্টার্নদের (কারিগরি প্রশিক্ষণার্থী) চাকরি পাওয়ার সুযোগ বাড়ছে। শুধু জাপানি ভাষা ও সংস্কৃতি ভালোভাবে আত্মস্থ করতে হবে। তিনি জানান, বাংলাদেশ থেকে ভাষা শিখে গেলেই হবে। জাপানে সে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোই বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর উপপরিচালক মেহবুব আলম প্রথম আলোকে বলেন, জাপানে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন পাঠানোর লক্ষ্যে ২০১৭ সালের ১২ মার্চ ইন্টারন্যাশনাল ম্যানপাওয়ার ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন বা আইএম জাপানের সঙ্গে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর আওতায় দেশটি বিনা খরচায় তিন বছরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় এক হাজার টেকনিক্যাল ইন্টার্ন নেবে।
জনশক্তি প্রশিক্ষণ ব্যুরো সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের কারিগরি প্রশিক্ষণার্থীরা শিক্ষানবিশ কর্মী হিসেবে জাপানে নির্মাণশিল্প, প্রযুক্তি, নার্সিং, কৃষি, হোটেল ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ট্যুরিজম সেক্টরে কাজের সুযোগ পাবেন। এ সময় থাকা-খাওয়া বাদে প্রতি মাসে প্রায় ৮০ হাজার টাকা উপার্জনের সুযোগ থাকছে কর্মীদের। পাঁচ বছর দক্ষতার সঙ্গে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন হিসেবে কাজ করলে সেখানে স্থায়ী দক্ষ কর্মী হিসেবে কাজ করার সুযোগ পাবেন বাংলাদেশিরা। আর পাঁচ বছর পর দেশে ফিরলে কর্মসংস্থানের জন্য প্রত্যেককে এককালীন চার লাখ টাকা দেওয়া হবে। ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ৩১ জন টেকনিক্যাল ইন্টার্ন জাপানে কাজের সুযোগ পেয়েছেন।
জানা গেছে, জনশক্তি রপ্তানি ব্যুরো জাপানে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন পাঠানোর জন্য সে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর চাহিদার ভিত্তিতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে থাকে। আবেদনের প্রাথমিক যোগ্যতা হিসেবে প্রার্থীর বয়স ২০ থেকে অনূর্ধ্ব ৩০ বছর, উচ্চতা ১৬০ সেন্টিমিটার, শিক্ষাগত যোগ্যতা মাধ্যমিক পাস হতে হয়। আবেদনপত্র জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়। প্রার্থীদের আবেদনপত্র ডাউনলোডের পর পূরণ করে ই-মেইলের মাধ্যমে পাঠাতে হয়। আবেদনপত্র যাচাই-বাছাই শেষে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিতদের জাপানি ভাষা ও সংস্কৃতি ও শারীরিক যোগ্যতা প্রমাণের পরীক্ষা দিতে হয় প্রার্থীদের।
এ ক্ষেত্রে জাপানি ভাষা ও সংস্কৃতিটা জানা বাধ্যতামূলক। এ জন্য জাপানি ভাষা শেখার ব্যবস্থা করছে সরকারি জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো। ঢাকায় শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ছাড়াও দারুস সালামের বাংলাদেশ কোরিয়া কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও ইস্কাটনের প্রবাসীকল্যাণ ভবনে জাপানি ভাষা শেখার সুযোগ পাচ্ছেন আগ্রহীরা। এর বাইরে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, পাবনা, নোয়াখালী ও রাঙামাটির সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে জাপানি ভাষা শিক্ষার সুযোগ রয়েছে।
ভাষা শিক্ষা প্রসঙ্গে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী ফৌজিয়া শাহনাজ বলেন, ‘চার মাসের এ ভাষা শিক্ষার কোর্স গত এপ্রিলে শুরু হয়েছে। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো সার্বিক আয়োজনটা করেছে। আমরা এর দেখভাল করছি। এ বছরের জুলাইয়ে শুরু হবে পরবর্তী কোর্স।’