সহকারী শিক্ষক হওয়ার সুযোগ
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
সারা দেশে ৬৪ হাজার ৮২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে প্রায় ১২ হাজার সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি ছাপা হয়েছে ৩১ জুলাইয়ের কালের কণ্ঠ (পৃ. ১৭) ও যুগান্তরে (পৃ. ৬)। বিজ্ঞপ্তিটি পাওয়া যাবে www.dpe.gov.bd ও dpe.teletalk.com.bd ওয়েবসাইটে এবং bit.ly/2LUeEK9 লিংকে।
আবেদনের যোগ্যতা
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল জানান, সহকারী শিক্ষক পদে আবেদনের জন্য বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। পার্বত্য তিন জেলা—রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের প্রার্থীরা আবেদন করতে পারবেন না। বাকি ৬১টি জেলার পুরুষ ও নারী উভয় প্রার্থী আবেদন করতে পারবেন। পুরুষ প্রার্থীদের বেলায় শিক্ষাগত যোগ্যতা চাওয়া হয়েছে কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কমপক্ষে দ্বিতীয় শ্রেণি বা সমমানের সিজিপিএসহ স্নাতক। কমপক্ষে দ্বিতীয় শ্রেণি বা সমমানের জিপিএসহ এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই আবেদন করতে পারবেন নারীরা।
৩০ আগস্ট ২০১৮ তারিখে সাধারণ প্রার্থীদের বয়সসীমা ১৮ থেকে ৩০ বছর। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রতিবন্ধীদের বেলায় বয়সসীমা ৩২ বছর।
আবেদন অনলাইনে
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের চাকরির আবেদনবিষয়ক ওয়েবপোর্টালের (dpe.teletalk.com.bd) মাধ্যমে আবেদন করা যাবে। ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে আবেদনপ্রক্রিয়া। আবেদন করা যাবে ৩০ আগস্ট রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত। অনলাইন আবেদন ফরমে ধারাবাহিকভাবে নাম, পিতার নাম, মাতার নাম, জন্ম তারিখ, লিঙ্গ, কোটা আছে কি না, জাতীয়তা, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, বৈবাহিক অবস্থা, বর্তমান ঠিকানা, স্থায়ী ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, শিক্ষাগত যোগ্যতার ঘর পূরণ করতে হবে। জন্ম তারিখ জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে মিল রেখে দিতে হবে। কোটার ঘরে যেসব প্রার্থীর মা-বাবা অথবা স্বামী বা স্ত্রী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন, তাঁদের নির্ভরশীল (ডিপেনডেন্ট) ঘরটি নির্বাচন করতে হবে। তিনি সর্বশেষ যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন, তার নাম এবং প্রার্থীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক উল্লেখ করতে হবে। মুক্তিযোদ্ধা কোটার প্রার্থীদের মুক্তিযোদ্ধার নাম, মুক্তিযোদ্ধা সনদ নম্বর, ঠিকানা এবং প্রার্থীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক লিখতে হবে। বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানার ঘরে জেলা, উপজেলা নির্বাচন করতে হবে এবং বিস্তারিত ঠিকানা উল্লেখ করতে হবে। পরের ধাপে আগের পৃষ্ঠায় দেওয়া তথ্যগুলো দেখাবে। সব তথ্য ঠিক আছে কি না ভালোভাবে দেখে নিতে হবে। কোনো তথ্য পরিবর্তন করতে হলে সংশোধন বাটনে ক্লিক করতে হবে। প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণের পর প্রার্থীর রঙিন ছবি এবং স্বাক্ষরের স্ক্যান কপি আপলোড করতে হবে। ছবির আকার হবে ৩০০ বাই ৩০০ পিক্সেল এবং ফাইল সাইজ সর্বোচ্চ ১০০ কেবি। স্বাক্ষরের আকার ৩০০ বাই ৮০ পিক্সেল এবং ফাইল সাইজ হবে সর্বোচ্চ ৬০ কেবি। ছবি ও স্বাক্ষর আপলোডের পর পুনরায় সব তথ্য ঠিক আছে কি না দেখে নিতে হবে। তথ্য ঠিক থাকলে ওপরে দেওয়া সব তথ্য ঠিক আছে নির্বাচন করে আবেদন সাবমিট করতে হবে। সাবমিটের পর ইউজার আইডি, ছবি ও স্বাক্ষরযুক্ত অ্যাপ্লিকেন্ট কপি পাওয়া যাবে। পিডিএফ ফাইলটি ডাউনলোড ও প্রিন্ট করে সংরক্ষণ করতে হবে। অনলাইন আবেদনের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে টেলিটক প্রিপেইড মোবাইল থেকে এসএমএসের মাধ্যমে পরীক্ষার ফি জমা দিতে হবে। ফি জমা দেওয়ার পর পাওয়া এসএমএসটি পরবর্তী সময়ে প্রবেশপত্র ডাউনলোডের জন্য সংরক্ষণ করতে হবে। প্রাথমিকভাবে কোনো কাগজপত্র জমা দিতে হবে না। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে।
পরীক্ষা পদ্ধতি
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সহকারী শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হবে। ২০১৪ সালের প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা চলতি বছরের এপ্রিল-মে মাসে অনুষ্ঠিত হয়েছে। লিখিত পরীক্ষায় ৮০ এবং মৌখিক পরীক্ষায় ২০ নম্বর বরাদ্দ থাকে। লিখিত পরীক্ষা হয় বহু নির্বাচনী বা এমসিকিউ পদ্ধতিতে। পরীক্ষার সময় ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট। ৮০টি নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন থাকে। প্রতিটি প্রশ্নের পূর্ণমান ১। বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সাধারণ জ্ঞান থেকে প্রশ্ন আসে। প্রতিটি বিষয় থেকে ২০টি করে প্রশ্ন থাকে। প্রতিটি সঠিক উত্তরে ১ নম্বর পাওয়া যাবে। রয়েছে নেগেটিভ মার্কিং। প্রতিটি ভুল উত্তরে কাটা যাবে ০.২৫ নম্বর। প্রস্তুতির জন্য দেখতে হবে অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ড নির্ধারিত পাঠ্য বই।
বাংলা
কুমিল্লার মুরাদনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জোস্না আরা বলেন, বাংলা অংশে ব্যাকরণ থেকে বেশি প্রশ্ন আসে। সাহিত্য থেকেও কিছু প্রশ্ন করা হয়। ব্যাকরণ অংশে পদপ্রকরণ, শব্দ, বাক্য, ধ্বনি, সন্ধিবিচ্ছেদ, কারকবিভক্তি, সমাস থেকে প্রশ্ন করা হয়। নিয়ম জানার পাশাপাশি উদাহরণও শিখতে হবে। কোনটি কোন কারক, সঠিক সন্ধিবিচ্ছেদ কোনটি বা একটি বাক্য দিয়ে তা কোন সমাস জানতে চাওয়া হতে পারে। এককথায় প্রকাশ, বাগধারা, বিপরীত শব্দ, সমার্থক শব্দ, পারিভাষিক শব্দ থেকেও প্রশ্ন করা হয়। এগুলো ভালোভাবে আয়ত্তে থাকলে সহজেই উত্তর দেওয়া যায়। সাহিত্য অংশের জন্য বিভিন্ন কবি-সাহিত্যিকের জীবনী, জন্ম-মৃত্যু সাল, রচিত বিভিন্ন গ্রন্থ থেকে প্রশ্ন আসতে পারে।
ইংরেজি
নারায়ণগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তারকানাথ বণিক জানান, ইংরেজিতে গ্রামার থেকে প্রশ্ন করা হয়। Right forms of verb, Parts of speech, Tense, Preposition, Article, Narration, Voice change থেকে প্রশ্ন আসে। মুখস্থ রাখতে হবে Antonym, Synonym, Spelling। প্রশ্নে কমপক্ষে এক থেকে দুটি Translation আসবেই।
গণিত
জোস্না আরা জানান, গণিতের জন্য মৌলিক বিষয়গুলো যেমন—ঐকিক নিয়ম, ভগ্নাংশ, লসাগু, গসাগু নির্ণয়, সুদ-কষা, লাভ-ক্ষতি থেকে প্রশ্ন আসে। জ্যামিতি এবং বীজগণিত থেকেও প্রশ্নও থাকতে পারে। পরীক্ষার হলে সাধারণত ক্যালকুলেটর ব্যবহারের সুযোগ থাকে না। তাই এমনভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে, যেন মুখেমুখেই অঙ্কের সমাধান করা যায়। প্রয়োজনে প্রশ্নের খালি অংশে পেনসিল দিয়ে সমাধান করা যেতে পারে। তবে সমাধান শেষে রাবার দিয়ে মুছে ফেলা ভালো। প্রতিটি প্রশ্নের সমাধানের জন্য এক মিনিটের বেশি সময় পাওয়া যায় না। তাই শিখতে হবে শর্টকাট টেকনিক।
সাধারণ জ্ঞান
সম্প্রতি শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ আয়েশা সিদ্দিকা জানান, বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক প্রসঙ্গে বেশ কিছু বিষয় আছে, যা থেকে প্রতিবছরই প্রশ্ন আসে। বিগত বছরের প্রশ্ন দেখলে এ বিষয়ে ধারণা পাওয়া যাবে। তথ্য-প্রযুক্তির মৌলিক কিছু প্রশ্নও সাধারণ জ্ঞানে আসতে পারে। সাম্প্রতিক বিষয়াবলি থেকেও কিছু প্রশ্ন আসে। বাজারে বিভিন্ন প্রকাশনীর প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ গাইড পাওয়া যায়। দেখতে পারেন গোলাম মোস্তফা কিরণের ‘আজকের বিশ্ব’ ও সেলিম গাজীউর রহমানের ‘স্বপ্নপূরণ’ বই দুটি। চোখ রাখতে পারেন কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স বিষয়ক মাসিক সাময়িকী ও দৈনিক পত্রিকায়।
বেতন-ভাতা
জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুসারে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকরা ১০২০০-২৪৬৮০ টাকা স্কেলে এবং প্রশিক্ষণবিহীনরা ৯৭০০-২৩৪৯০ টাকা স্কেলে বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাবেন।