স্মার্ট পেশা মার্কেটিং

স্মার্ট পেশা মার্কেটিং

রবিউল কমল : জনসংখ্যা বাড়ছে, সেই সঙ্গে বাড়ছে পণ্যের চাহিদাও। আর ভোক্তার চাহিদা মেটাতে বাজারে আবির্ভাব ঘটছে নিত্যনতুন পণ্যের। বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যেও নিজেদের ব্র্যান্ডের পণ্য বাজারজাতকরণ নিয়ে তীব্র প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যায়। সর্বত্র পণ্যের বার্তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রয়োজন হয় মার্কেটিং। সময়পোযোগী ও চ্যালঞ্জিং পেশা কি বলতে গেলে অবশ্যই এই মার্কেটিং পেশার নাম নিতে হয়।


এ পেশায় সংশ্লিষ্টদের মার্কেটিংয়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকেও উপস্থাপন করতে হয় একটু ভিন্ন আঙ্গিকে। ক্রেতা আকৃষ্ট করার চিন্তা মাথায় রাখতে হয় তাদের। পাশাপাশি ক্রেতাদের বিশ্বাস এবং আস্থাভাজন হওয়া এই পেশার অন্যতম মৌলিক চাহিদা। ক্রেতার পরিতৃপ্তির মধ্যেই এ পেশার আনন্দ। মার্কেটিং কাজটি করতে হয় একটি মার্কেটিং প্লানের মাধ্যমে, যা শুরু হয় একটি লক্ষ্যস্থির করে। পরবর্তীতে কোম্পানির প্রয়োজন হয় কিভাবে এ লক্ষ্য অর্জিত হবে তা নির্ধারণ করা অর্থাৎ মার্কেটিং কৌশল নির্ধারণ করা।

চাহিদা

আজকাল সব প্রতিষ্ঠানেই দূরদৃষ্টিসম্পন্ন বিপণন নির্বাহী বা মার্কেটিং কর্মকর্তা দরকার। পণ্যের পাশাপাশি সেবাও আজকাল মার্কেটিংয়ের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা থেকে শুরু করে বিমানের যাত্রীসেবা, সেলুন ও বিউটি পার্লারের সেবা সবই মার্কেটিং করতে হয়। তা ছাড়া যুগটা অর্থনীতির, একই সঙ্গে বিশ্বায়নের। এ যুগে সবকিছু বাজারের, সবকিছুই পণ্য মেধা এবং এমনকি অনেক মানবিক সেবাও। তৈরি হচ্ছে নতুন ভোগ্যপণ্য, আবির্ভাব হচ্ছে সেবা পণ্যের। সুতরাং ভবিষ্যতে মার্কেটিংয়েই সর্বাধিক সংখ্যক লোক কাজ করবে যা বর্তমানেও করছে।

এই পেশার বিভিন্ন পদ

মার্কেটিং পেশার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পদ রয়েছে। যেমন মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ, ব্র্যান্ড ম্যানেজার, প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার, এডভার্টাইজিং ম্যানেজার, মিডিয়া ডিরেক্টর, মিডিয়া বায়ার, মার্কেটিং এনালিস্ট, মার্কেটিং রিসার্চ ম্যানেজার, মার্কেটিং ডেভেলপমেন্ট ইত্যাদি।

মার্কেটিং পেশার যোগ্যতা

মার্কেটিং পেশায় আসতে হলে শিক্ষাগতযোগ্যতা কোম্পানিভেদে স্নাতক হতে এমবিএ থাকতে হবে। তবে একজন মার্কেটিং কর্মকর্তাকে কিছু আবশ্যক গুণাবলীর অধিকারী হতে হয়। যেমন সততা, নিয়মানুবর্তিতা, সহজ ও নিখুঁত বাচন ও অঙ্গভঙ্গি, পোশাক-পরিচ্ছদে পরিপাটি হতে হয়। সৃজনশীল, সূক্ষ্ম বিশ্লেষণী ক্ষমতাসম্পন্ন, স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি, পরমতসহিষ্ণু, উন্নত যোগাযোগ দক্ষতা থাকতে হয়। মার্কেটিং পেশার বেতন কাঠামো পদভেদে ৮ হাজার থেকে লক্ষাধিক টাকা পর্যন্ত রয়েছে।

এই পেশায় যা করণীয়

বর্তমানে বাংলাদেশে মার্কেটিং পেশাটি একই সাথে জনপ্রিয়, সম্ভাবনাময় ও সাচ্ছন্দময়। চুল কাটানোর সেলুন থেকে হাসপাতালসহ অধিকাংশ সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানেই মার্কেটিং পেশাজীবীদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই এ ব্যাপারে আপনার কিছু দক্ষতা অর্জন করতে হবে। সবচেয়ে বেশি যা প্রয়োজন তা হলো আপনাকে অবশ্যই স্মার্ট হতে হবে। ইংরেজীতে দক্ষতা থাকতে হবে, কম্পিউটার জানা থাকলে ভাল।

মার্কেটিংয়ে নিয়োগের ক্ষেত্রে যে বিষয়টিকে প্রাধান্য দেয়া হয় সেটা হলো নিয়োগ পরীক্ষা। পরীক্ষাই আপনাকে ভাল প্রিপারেশন নেয়া চাই। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে আপনাকে ভাইভার জন্য ডাকা হবে। ভাইভাতে সন্তোষজনক পারফরম্যান্স করতে পারলেই বদলে যাবে আপনার জীবনের গতিপথ। মার্কেটিংয়ে পদ যাই হোক না কেন, আপনাকে উন্নতি করতে হলে পরিশ্রম করতে হবে। প্রয়োজনে আপনাকে চ্যালেঞ্জ নিতে হবে।

আপনার কাজটা যেমনি নিম্নবিত্তদের সাথে, তেমনি উচ্চবিত্তদের সাথেও। তাই সবার সাথে সহজেই মেশার মানসিকতা থাকতে হবে। মার্কেটিংয়ে গতানুগতিক ধারার বাইরে স্মার্টলি নিজেকে উপস্থাপন করতে পারেন। কারণ এই ক্ষেত্রে পণ্যের গুণাগুণের চেয়ে আপনার গুণাগুণটাই প্রাধান্য পায়। আপনার উপস্থাপন নিখুঁত হলে অনেক ক্রেতা আপনার ব্যক্তিত্বে আকৃষ্ট হয়েও পণ্য ক্রয় করতে পারে। তাই একজন জনপ্রিয় মার্কেটিং অফিসার হওয়ার আগে নিজেকে একজন ব্যক্তিত্ববান মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা আবশ্যক। এতো গেল ব্যক্তিত্বের কথা। কিন্তু এটার পরে নিজেকে মার্কেটিং অফিসার হিসেবে গড়ে তুলতে চাইলে আরও কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে।

  • কারো মনে বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায় এমন কোনো কাজ কখনো করবেন না। তার পরিবর্তে আপনার অতীত কাজের বিবরণসহ সংক্ষিপ্ত ও মনোমুগ্ধকর পরিচিতিমূলক একটি চিঠি পাঠান। এছাড়া ই-মেইল বা ফোন কল দ্বারাও যোগাযোগ করতে থাকুন।
  • ট্রেড শো, সেমিনার, ইন্ডাস্ট্রি ফোরাম যেখানে সম্ভাব্য ক্রেতারা উপস্থিত থাকেন, সেখানে যতটা সম্ভব উপস্থিত থাকুন ।
  • নতুন সুযোগ খোঁজার চেয়ে বিদ্যমান সুযোগই আপনার জন্য অধিক কাজ এনে দেবে। সেজন্য পরিচিতি ও নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি করুন।
  • ই-মেইল ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি সহজেই আপনার বন্ধু, অভিজাত শ্রেণী এবং আগের ক্লায়েন্টদের সঙ্গে মাঝে মধ্যেই আপনার কাজগুলো শেয়ার করতে পারেন।
  • অনলাইন মার্কেটিং ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে বেশ ভালো ফলাফল দেয়। নিজের দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা প্রদর্শনের প্রথম ধাপ হলো মানসম্পন্ন ওয়েবসাইট তৈরি করা। এছাড়া ওয়েবসাইট তৈরির পেছনে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে এটি সবার বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করে।
  • বাড়ি থেকে নিজের বিজনেস কার্ড ছাড়া কখনো বের হবেন না। কারণ আপনি কখনোই জানবেন না, কার কখন আপনার সার্ভিস প্রয়োজন হবে। সুনির্দিষ্ট কিছু করতে চাইলে আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বসম্পন্ন একটি কার্ড সবসময় সঙ্গে রাখুন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী যথাযথ স্থানে এটিকে কাজে লাগান। এ কার্ডটিই অন্যদের চেয়ে আপনাকে আলাদাভাবে চিনতে সহায়তা করবে।
  • গ্রিটিং কার্ডের পরিবর্তে ক্লায়েন্টদের সুন্দর ডিজাইনের একটি ক্যালেন্ডার গিফট করুন, যাতে আপনার নাম ও ঠিকানা থাকবে। আপনি ডিজাইনার বা ফটোগ্রাফার হলে এতে অরিজিনাল আর্ট যুক্ত করে আপনার প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে পারেন।

এভাবেই একসময় আপনি নিজ গুণাবলির বলে মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ থেকে প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার কিংবা মার্কেটিং ম্যানেজার পদে পদোন্নতি পেতে পারেন।

Sharing is caring!

Leave a Comment