হতে পারেন জনসংযোগ কর্মকর্তা

হতে পারেন জনসংযোগ কর্মকর্তা

  • ক্যারিয়ার ডেস্ক

একবিংশ শতাব্দীর বাজার অর্থনৈতিক কারণে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা শুরম্ন হয়েছে। এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানিকে তাদের পণ্যের বা দ্রব্যের গুণগত মান বজায় রাখার পাশাপাশি মিডিয়াতে তা প্রকাশ-প্রচারের ব্যবস্থা করতে হয়। এই চাহিদা মাথায় রেখেই সৃষ্টি হয়েছে জনসংযোগ কর্মকর্তার পদ। হ্যাঁ, কীভাবে হবেন জনসংযোগ কর্মকর্তা? কী কী গুণ থাকা চাই? কেমন এ পেশা তাই নিয়েই  আজকের প্রতিবেদন-


জনসংযোগ কর্মকর্তাকে ইংরেজিতে বলা হয় পাবলিক রিলেশন অফিসার। সংক্ষেপে পিআরও। পিআরও বা জনসংযোগ কর্মকর্তার কাজই হচ্ছে জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা। জনসংযোগ বলতে বোঝায় জনসাধারণের সঙ্গে কোনো পণ্য বা কোনো প্রতিষ্ঠানের সংযোগ স্থাপন করে দেওয়া অর্থাৎ কোনো প্রতিষ্ঠানের কোনো কাজ কিংবা কোনো উদ্দেশ্যে জনসমর্থন জোগাড় করা। বস্তুত জনসংযোগের উদ্দেশ্য হলো সংশিস্নষ্ট প্রতিষ্ঠানের পরিচিতি বাড়ানো তথা বাজার তৈরি করা, পুরাতন গ্রাহক ধরে রাখা এবং নতুন ভোক্তা বা ব্যবহারকারীদের আকৃষ্ট করা। তবে যদি পণ্য বা পরিসেবার মান ভালো হয় তাহলে বাজার সৃষ্টি অনেক সহজ হয়। মোট কথা প্রত্যেক পেশাতেই সমৃদ্ধির জন্য সাধারণ মানুষের কাছাকাছি যেতে হয়। কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা সম্পর্কে মানুষের মনে ইতিবাচক ধারণা তৈরি ও প্রাতিষ্ঠানিক সুনাম অর্জনের জন্য এটা করতে হয়। এজন্য জনসংযোগের চাহিদা অত্যধিক। আমরা সহজ কথায় বলতে পারি, পারস্পরিক বোঝাপড়া প্রতিষ্ঠা করাই হলো জনসংযোগ, আর তা যাতে স্থায়ী হয় তার প্রচেষ্টা করা হলো জনসংযোগের উদ্দেশ্য।

জনসংযোগ বিভাগের কাজ

জনসংযোগ বিভাগের কাজই হলো জনসংযোগ করা। জনসংযোগ বিভাগের কাজের একটা বিরাট অংশ হলো প্রচার মাধ্যমগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা। দৈনন্দিন কার্যক্রমের রিপোর্ট গণমাধ্যমগুলোতে পাঠানো এবং প্রতিষ্ঠানের পরিচিতি বাড়ানোর সহায়ক কাজগুলো করা। এছাড়া প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে যারা বিভিন্ন তথ্য, বিভিন্ন কার্যক্রম জানতে আগ্রহী তাদেরকে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করা। পাশাপাশি প্রচার সংশিস্নষ্ট বিভিন্ন কাজ যেমন, বিজ্ঞাপন তৈরি, প্রচার ও প্রচার কার্যক্রমের মূল্যায়ন করাও জনসংযোগ বিভাগের কাজ। নামকরা কোম্পানিগুলোর প্রতিষ্ঠানের লৰ্য-উদ্দেশ্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ, সংরৰণ এবং সিদ্ধানত্দ গ্রহণের উপযোগী করে উপস্থাপন করতে জনসংযোগ কর্মকর্তারা গুরম্নত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। জনসংযোগ বিভাগ সমজাতীয় কোম্পানি ও সংস্থাগুলোর মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখা এবং নেটওয়ার্কিয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন কাজ করার ৰেত্রে মধ্যমণি হিসেবে কাজ করে। আজকাল বড় বড় বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর প্রচার কার্যক্রম শুধু প্রিন্ট মিডিয়াতেই সীমাবদ্ধ থাকছে না। বর্তমানে তারা দৃষ্টিপাত করছে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার দিকে। নিজেদের পরিচিতি বাড়ানো এবং ভোক্তা সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন ধরনের তথ্যচিত্র ও ডকুমেন্টারি ফিল্ম তৈরি, প্রতিযোগিতামূলক কর্মকাণ্ড, টিভি মিডিয়াতে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানে স্পন্সর করা, কনসার্টের আয়োজন করাসহ নানাবিধ কার্যক্রম হাতে নিচ্ছে। ফলে জনসংযোগ পেশায় কাজের পরিধি এখন অনেক বেড়ে গেছে। কোনো সংস্থা বা কোম্পানি এখন জনসংযোগ বিভাগের সহযোগিতা ছাড়া একটি দিনও কল্পনা করতে পারে না। আমরা ইউনিলিভার, স্কয়ার, গ্রামীণফোনসহ যেসব বড় বড় কোম্পানির বিজ্ঞাপন দেখি এবং বিভিন্ন কনসার্ট ও বিউটি কনটেস্টে তাদের অংশগ্রহণ দেখি সেগুলোর যাবতীয় কাজ করেন জনসংযোগ কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি দক্ষ টিম।

পেশা হিসেবে জনসংযোগ

পেশা হিসেবে জনসংযোগ অবশ্যই একটি চ্যালেঞ্জিং ও রোমাঞ্চকর পেশা। আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে জনসংযোগ বা যোগাযোগের মাত্রা সম্প্রসারিত হওয়ায় এই পেশার প্রতি মানুষের আগ্রহও বাড়ছে। জনসংযোগ জ্ঞান বা দৰতা থাকলে যে কেউ এ পেশায় আসতে পারেন। কর্মৰেত্র, ব্যক্তি, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও পারিবারিক সকল ৰেত্রেই জনসংযোগের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। আপনার যদি ভালো শিৰাগত যোগ্যতা থাকে আর থাকে মানুষের সঙ্গে সুন্দর করে কথা বলার ও মানুষকে প্রভাবিত করার ৰমতা তাহলে আপনি জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। মাস্টার্স পাস করে থাকলে চাকরির জন্য খোঁজ করতে পারেন দৈনিক পত্রিকার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে অথবা প্রাইভেট ফার্মে পরিচিত থাকলে তার মাধ্যমেও চাকরিতে সুযোগ নিতে পারেন। বেতনও সম্মানজনক।

জনসংযোগ কর্মকর্তা হতে চাইলে

জনসংযোগ কর্মকর্তাকে অনেক দায়িত্ব পালন করতে হয়। একজন দৰ জনসংযোগবিদ হতে হলে বহুমাত্রিক যোগ্যতা ও গুণাবলীর অধিকারী হতে হয়। থাকতে হয় প্রখর ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধিমত্তা, দৰতা এবং সৃজনশীলতা। একজন জনসংযোগ কর্মকর্তার মাঝে কয়েকটি গুণ থাকলে সে একজন দৰ এবং সফল জনসংযোগবিদ হতে পারে। গুণগুলো হলো- ইতিবাচক মনোভাব, স্মার্ট ও কঠোর পরিশ্রম, নেতৃত্ব দেয়ার ৰমতা ও প্রভাবিত করা ৰমতা। প্রতিটি পেশা বা কাজের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব থাকতে হয়। না হলে সে কাজে তৃপ্তি আসে না। একজন দৰ কর্মকর্তার অবশ্যই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থাকা উচিত। যখনই প্রাতিষ্ঠানিক কাজ করার কমিটমেন্ট দেখাবেন তখনই পরিবেশ ও পরিস্থিতির কারণে অনেকগুলো বাধা এসে সামনে দাঁড়াবে, সবগুলোকে তুচ্ছ করে আপনার সৎ মনোভাব নিয়ে স্বাধীন ও ঝুঁকিমুক্তভাবে প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন সামনের দিকে। favicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment