তরুণরা ঝুঁকছে মুক্তপেশায়

তরুণরা ঝুঁকছে মুক্তপেশায়

  • ক্যারিয়ার ডেস্ক

দেশে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে মুক্ত পেশার বা ফ্রিল্যান্সের বাজার বড় হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ উত্তীর্ণ বা পড়ুয়া তরুণরা এ বাজারকে এগিয়ে নিচ্ছেন। বর্তমানে প্রায় ছয় লাখ নিবন্ধিত মুক্ত পেশাজীবী রয়েছেন। এ খাত থেকে গত বছর প্রায় ৫৫ মিলিয়ন ডলার বা ৪২৫ কোটি টাকার বেশি আয় করেছেন তরুণরা। ২০২০ সাল নাগাদ ১ বিলিয়ন ডলার আয় করার আশা করছেন শীর্ষ ফ্রিল্যান্সার ও নেতৃত্বস্থানীয়রা। ব্যক্তি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগের পাশাপাশি সরকারও ফ্রিল্যান্সার তৈরিতে উদ্যোগ নিয়েছে। নিজস্ব উদ্যোগে তরুণ-তরুণীরাও ফ্রিল্যান্স কাজে ঝুঁকছেন। ফলে এ পেশার বিকাশ এবং বৈদেশিক মুদ্রার আয় আরো বৃদ্ধির সম্ভাবনা জেগেছে।

আউটসোর্সিং ও ফ্রিল্যান্স কী

ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরনের কাজ করিয়ে নেয়। নিজ প্রতিষ্ঠানের বাইরে অন্য কাউকে দিয়ে এসব কাজ করানোকে আউটসোর্সিং বলে। যারা আউটসোর্সিংয়ের কাজ করে দেন, তাদের ফ্রিল্যান্সার বলে। ফ্রিল্যান্সার অর্থাত্ মুক্ত বা স্বাধীন পেশাজীবী। আউটসোর্সিংয়ের কাজের খোঁজ থাকে, এমন সাইটে যিনি কাজটা করে দেন, তাকে বলা হয় কন্ট্রাক্টর, তিনি চুক্তিতে কাজ করেন। আর যিনি কাজ দেন, তাকে বলে বায়ার/এমপ্লয়ার। তিনি চুক্তিতে কাজ দেন।

আউটসোর্সিং কাজ প্রাপ্তির স্থান

আউটসোর্সিং সাইট বা অনলাইন মার্কেট প্লেসে কাজ বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা থাকে। এর মধ্যে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, নেটওয়ার্কিং ও ইনফরমেশন সিস্টেম, লেখা ও অনুবাদ, প্রশাসনিক সহায়তা, ডিজাইন ও মাল্টিমিডিয়া, গ্রাহকসেবা, বিক্রয় ও বিপণন, ব্যবসা সেবা রয়েছে।

ওয়েব ডেভেলপমেন্টে রয়েছে- ওয়েবসাইট ডিজাইন, ওয়েব প্রোগ্রামিং, ই-কমার্স, ইউজার ইন্টারফেস ডিজাইন, ওয়েবসাইট টেস্টিং, ওয়েবসাইট প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি। সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের মধ্যে আছে- ডেস্কটপ এপ্লিকেশন, গেম ডেভেলপমেন্ট, স্ক্রিপ্ট ও ইউটিলিটি, সফটওয়্যার প্লাগ-ইনস, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন, ইন্টারফেস ডিজাইন, সফটওয়্যার প্রকল্প-ব্যবস্থাপনা, সফটওয়্যার টেস্টিং, ভিওআইপি ইত্যাদি।

নেটওয়ার্কিং ও ইনফরমেশন সিস্টেমের মধ্যে রয়েছে-নেটওয়ার্ক এডমিনিস্ট্রেশন, ডিবিএ-ডাটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, সার্ভার অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, ইআরপি/সিআরএম ইমপি­মেনটেশন ইত্যাদি। লেখালেখি ও অনুবাদ কাজের মধ্যে রয়েছে কারিগরি নিবন্ধ লেখা, টেকনিক্যাল রাইটিং, ওয়েবসাইট কনটেন্ট, ব্লগ ও আর্টিকেল রাইটিং, কপি রাইটিং, অনুবাদ, ক্রিয়েটিভ রাইটিং ইত্যাদি। ডিজাইন ও মাল্টিমিডিয়ার মধ্যে আছে গ্রাফিক ডিজাইন, লোগো ডিজাইন, ইলাস্ট্রেশন, প্রিন্ট ডিজাইন, থ্রিডি মডেলিং, ক্যাড, অডিও ও ভিডিও প্রোডাকশন, ভয়েস ট্যালেন্ট, অ্যানিমেশন, প্রেজেন্টেশন, প্রকৌশল ও টেকনিক্যাল ডিজাইন ইত্যাদি।

কেন ফ্রিল্যান্সিং

গত বছর ইকোনমিস্ট পত্রিকার ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে স্নাতকদের প্রায় ৪৭ ভাগই বেকার বা অর্ধবেকার। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, মেধা ও দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও প্রচলিত চাকরির বাজারে অধিকাংশ তরুণ-তরুণী নিজেদের মেধা ও সততার প্রতিফলন ঘটাতে পারেন না। কিন্তু বিশ্ববাজারে তাদের দক্ষতা রয়েছে এমন খাতে কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে। তাই দেশে থেকেই আউটসোর্সিং কাজ করে ক্যারিয়ার গঠন করা সম্ভব। বিভিন্ন অভিজ্ঞতার সম্মিলন ও বিনিময় হওয়ার কারণে এ ধরনের ফ্রিল্যান্সিং কাজ থেকে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতও দীর্ঘমেয়াদে লাভবান হতে পারে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ফাহিমা সুলতানা বলেন, এমবিএ শেষ করার পর একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পাই। কিন্তু সেখানে আমার মেধার প্রতিফলন ঘটানোর সুযোগ পাইনি। এরইমধ্যে ফ্রিল্যান্স কাজের সাথে জড়িয়ে যাই। এতে নিজের ও ক্লায়েন্টের পছন্দমত কাজ করা সম্ভব। তাই এ খাতেই নিজের ক্যারিয়ার গঠন করতে মনোযোগী হয়েছি।

এগিয়ে আসছে সরকারও

দেশে এখন পর্যন্ত ফ্রিল্যান্সিং কাজ ব্যক্তিগত উদ্যোগেই হয়ে আসছে। তবে সম্প্রতি সরকারও এ খাতে দক্ষ জনসম্পদ তৈরিতে উদ্যোগ নিয়েছে। সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ গত বছর ‘লার্নিং এন্ড আর্নিং’ এবং ‘ঘরে বসে বড়লোক’ কর্মসূচির মাধ্যমে ২৬ হাজার তরুণ-তরুণীকে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এর মধ্যে ১২ হাজার নারী। এছাড়া ২০১৫ এবং ২০১৬ সালের মধ্যে আরো ৫৫ হাজার জনকে ‘লার্নিং এন্ড আর্নিং’ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশিক্ষণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

সূত্র: ইত্তেফাকfavicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment