ফটোগ্রাফিতে ক্যারিয়ার
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
তরুণদের অনেকেই এখন পড়াশোনা শেষ করার পর গতানুগতিক পেশার পেছনে না ছুটে সৃজনশীল পেশাকে বেছে নিচ্ছেন। এসব পেশায় নিজের দক্ষতার পাশাপাশি শৈল্পিক জ্ঞান থাকা অপরিহার্য। এ রকমই একটি পেশা ফটোগ্রাফি। বর্তমানে এই পেশার যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে।
কাজের ক্ষেত্র:
সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে প্রিন্ট ও অনলাইন পত্রিকা। নিউজ এজেন্সি, বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতেও (এনজিও) রয়েছে আলোকচিত্রীদের (ফটোগ্রাফার) চাহিদা। ফলে তৈরি হচ্ছে আলোকচিত্রীদের কর্মসংস্থান। তা ছাড়া তথ্যচিত্র বানানো কিংবা ফ্রিল্যান্সার হিসেবেও কাজ করার সুযোগ রয়েছে।
আলোকচিত্র প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান কাউন্টার ফটোর একাডেমিক প্রধান দীন মোহাম্মদ শিবলী বলেন, যেকোনো বয়সের লোকজন আলোকচিত্র প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। এখন অনেকেই ফটোগ্রাফিকে পেশা হিসেবে নিচ্ছেন। কেউ প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন, কেউ ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করছেন। পাশাপাশি ওয়েডিং ফটোগ্রাফার (বিয়ের ছবি তোলা) হিসেবেও কাজ করছেন কেউ কেউ।
দরকার প্রশিক্ষণ:
বই পড়ে, ইন্টারনেট ঘেঁটে, ছবি দেখে, অভিজ্ঞ কোনো আলোকচিত্রীর সঙ্গে থেকে কিংবা কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে শেখা যায় ফটোগ্রাফি। তবে পেশা হিসেবে ফটোগ্রাফিকে নিতে চাইলে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থাকা জরুরি। আমাদের দেশে বেশ কয়েকটি আলোকচিত্র প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান বর্তমানে আলোকচিত্রবিষয়ক ডিপ্লোমা বা স্নাতক ডিগ্রি দিচ্ছে।
ফটোগ্রাফিতে ডিপ্লোমা করার প্রাথমিক শর্ত, প্রশিক্ষণার্থীকে ফটোগ্রাফির ওপর মৌলিক (বেসিক) কোর্স করা থাকতে হবে। সেই সঙ্গে একটি ডিজিটাল সিঙ্গেল লেন্স রিফ্লেক্স (ডিএসএলআর) ক্যামেরা থাকতে হবে। এই কোর্সে শেখানো হয় ডিজিটাল ক্যামেরা অপারেশন, সম্পাদনা, পোর্টে৶ট ফটোগ্রাফি, শিশুদের ছবি তোলা, মডেল ফটোগ্রাফি ও ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফি।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য স্নাতক আসাদুর রহমান জানান, শিক্ষার্থী থাকার সময়ে ডিএসএলআর ক্যামেরা কিনে শখের বশে শুরু করেন ফটোগ্রাফি। বর্তমানে তাঁর ইচ্ছা ফটোগ্রাফিকেই পেশা হিসেবে নেওয়ার। আসাদুর রহমান বলেন, ‘প্রথম দিকে ফটোগ্রাফির সাধারণ বিষয়গুলো ইন্টারনেট থেকে শিখেছিলাম। কিন্তু প্রফেশনালি কাজ করার সুবিধার্থে অ্যাডভান্স ফটোগ্রাফির প্রশিক্ষণ নিয়েছি।’
আয়-রোজগার:
পেশা হিসেবে ফটোগ্রাফিকে নিতে চান, কিন্তু ফটোগ্রাফারদের আয়-রোজগার কেমন। এ বিষয়ে দীন মোহাম্মদ শিবলী বলেন, শিক্ষানবিশ পর্যায়ে ফটোগ্রাফি করে মাসিক ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। অভিজ্ঞতার সঙ্গে সঙ্গে ফটোগ্রাফারদের উপার্জনও বাড়ে। আর ফ্রিল্যান্সার ও ওয়েডিং ফটোগ্রাফার হিসেবেও মাসে সম্মানজনক অর্থ আয় করা সম্ভব।
শিখবেন কোথায়:
এখন আমাদের দেশে ফটোগ্রাফি শেখানোর অনেক প্রতিষ্ঠান চালু হয়েছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে:
পাঠশালা:
তিন বছরের প্রফেশনাল ফটোগ্রাফি কোর্সের (ছয় সেমিস্টার) সেমিস্টার ফি বর্তমানে ৩৫ হাজার টাকা। ঠিকানা: পাঠশালা, ১৬, শুক্রাবাদ, ঢাকা। ফোন: ৯১২৯৮৪৭।
কাউন্টার ফটো: তরুণ ফটোগ্রাফারদের জন্য রয়েছে ছয় মাসের ‘মেন্টর প্রোগ্রাম’। এক বছরের ডিপ্লোমা কোর্সের ফি ৬৫ হাজার টাকা। ঠিকানা: ১৪ পূর্ব শেওড়াপাড়া, মিরপুর। ফোন: ৯০১৩০২৬, ০১৬৭৭০৬৮৭৩৫।
বেগার্ট ইনস্টিটিউট অব ফটোগ্রাফি: এক বছরমেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি ফি ১০ হাজার টাকা। আর প্রতি মাসে টিউশন ফি দুই হাজার টাকা। ঠিকানা: ৮৩ ল্যাবরেটরি রোড (কফি হাউসের গলি), ঢাকা। ফোন: ০১৭১৬৬৬৩৭৫৭।
ঢাকা ফটোগ্রাফি ইনস্টিটিউট: এখানে ভিডিও কোর্স ফি ১০ হাজার টাকা এবং ডিপ্লোমা কোর্স ফি ২০ হাজার টাকা। ঠিকানা: সাহেরা ট্রপিক্যাল সেন্টার (ষষ্ঠ তলা), ২১৮ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা। ফোন: ৯০১৪২১৩, ০১৮১৯২৮৫৫৮৪।
ঢাকা ইউনিভার্সিটি ফটোগ্রাফিক সোসাইটি (ডিইউপিএস): ডিইউপিএসে ফটোগ্রাফির ওপরে শুধু বেসিক কোর্স করানো হয়। তিন মাসের বেসিক কোর্স ফি তিন হাজার টাকা। প্রশিক্ষণ কোর্সে যাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নন, তাঁরাও অংশ নিতে পারবেন। ঠিকানা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র, নিচতলা। ফোন: ০১১৯৭২৬০৫৫২-৫৪।
এ ছাড়া ফটোফি, ফ্রাস্টলাইট, আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ, চঞ্চল মাহমুদ স্কুল অব ফটোগ্রাফি, ওয়েডিং ডায়েরি, প্রিজম ও জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটে ফটোগ্রাফি প্রশিক্ষণের কোর্স চালু আছে।