উচ্চশিক্ষা চাই, তবে কতটা?

উচ্চশিক্ষা চাই, তবে কতটা?

  • ক্যারিয়ার ডেস্ক

ডবল মাস্টার্স, পিএইচডি না এমবিএ? ক্যারিয়ারের একটা প্রান্তে এসে অনেকেই মুখোমুখি হোন এমন একটা প্রশ্নের৷ অথচ একটা সময় ছিল, যখন শুধু ‘আন্ডারগ্র্যাজুয়েট’ করলেই ভালো বেতনের এবং নির্ভরশীল একটি চাকরি পাওয়া যেত৷

এখন যুগ বদলেছে৷ আর তার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে প্রতিযোগীতা৷ তাই আজকাল, নিদেনপক্ষে একটা মাস্টার্স ছাড়া ভালো চাকরি পাওয়া প্রায় অসম্ভব৷ এর সঙ্গে আপনি যদি বহিরাগত বা বিদেশি হন – তাহলে তো কথাই নেই! পিএইচডি, একাধিক মাস্টার্স, এমনকি পিএইচডির সঙ্গে এমবিএ করেছে – এমন লোকও একেবারে অপ্রতুল নয়৷ যেমন অ্যান থমাস’এর কথায়, ‘‘অবশ্য সব ক্ষেত্রে বিষয়টা এক নয়৷ যেমন ডাক্তারি পড়লে খুব একটা উচ্চশিক্ষার সরাসরি প্রয়োজনীয়তা নেই৷ আবার ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং বা কম্পিউটার সায়েন্স পড়লে শুধু একটি মার্স্টাস থাকলেই ভালো চাকুরির সুযোগ রয়েছে৷ আর যাঁদের পরবর্তীতে শিক্ষকতা বা গবেষণায় যাওয়ার ইচ্ছে আছে, তাদের জন্য শুধু মাস্টার্স না করে সরাসরি পিএচডি প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়া ভালো৷ অবশ্য সে ইচ্ছে না থাকলে, এমবিএ করাটাই হয়তো বেশি বুদ্ধিমানের৷ অন্তত আজকের বাজারে৷”

কিন্তু পিএইচডি করার বৈশিষ্ট কি? মনে আছে, আমার এক বন্ধু বলেছিল পিএইচডি মানে – ‘পার্মানেন্ট হেড ড্যামেজ’৷ শুনে হেসেছিলাম৷ আদতে পিএইচডি হচ্ছে কোনো বিষয় নিয়ে ‘স্পেশালাইজেশন’৷ অর্থাৎ, সে বিষয়টি সম্পর্কে সবটুকু জ্ঞান আরহন করা৷ অবশ্য আমার সেই বন্ধু বলেছিল, এই ডিগ্রি নিয়ে ক্যারিয়ারের পথ হবে খুব সংকীর্ণ, অথচ উঁচুমাত্রায় স্পেশালাইজড৷ আমি আবারো হেসেছিলাম৷

সে যাই হোক৷ বর্তমানে কিন্তু অনেক পিএইচডি ধারীকেই কিছু সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে৷ এর একটাই কারণ৷ যাঁরা পিএইচডি করেন, তাঁদের প্রাথমিক লক্ষ্য থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করা৷ কিন্তু বাস্তবে, পিএইচডি করার পর প্রফেসর পদে চাকরি পেতে এক থেকে দুই বছর পোস্ট ডক্টরেট করতে হয়৷ ওদিকে, প্রয়োজনের তুলনায় বাজারে বেশি ডক্টরেট থাকায়, অনেককেই বেকার বসে থাকতে হচ্ছে৷

কোনো কোনো ক্ষেত্রে, বিশেষ করে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে একজন ডক্টরেট’এর বদলে অ্যাসেসিয়েট প্রফেসার দিয়েই কাজ চালিয়ে নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি৷ উপরন্তু বয়স্ক প্রফেসররা বহুদিন ধরে পদ আঁকড়ে থাকায়, নতুন প্রফেসরদের জন্য সুযোগ-সুবিধাও কম৷ তাছাড়া, প্রফেসর পদে চাকরি পাওয়ার পরও যে শান্তি নেই৷ গবেষণার জন্য ‘ফান্ডিং’ নিয়ে যুদ্ধ এবং পেপার প্রকাশের দৌড়ে নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড়, যা কিনা খুব সাধারণ ব্যাপার ডক্টরেটদের মধ্যে৷

অন্যদিকে, এমবিএ’এর বৈশিষ্ট্যই হলো ‘জেনারেলাইজেশন’৷ এর ফলে চাকরির বাজারে নিজের ক্যারিয়ার ট্র্যাক বদলে নানা দিকে যাওয়ার সুযোগ থাকে৷ আমার সেই বন্ধুর ভাষায়, এমবিএ হলো – ‘মিডিওকোর বাট অ্যারোগেন্ট’৷ তবে এর মূল সমস্যা হলো, আজকাল প্রচুর বিশ্ববিদ্যালয় এই এমবিএ ডিগ্রী দিচ্ছে৷ তাই খুব ভালো কোনো জায়গা থেকে এমবিএ না করলে তার মূল্য তেমন একটা নেই৷ তার ওপর এমবিএ’এর খরচও বেশি৷ থাকা, খাওয়া, চিকিৎসা ইত্যাদির খরচ ছাড়াও, যুক্তরাষ্ট্রের কোনো শীর্ষ স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ করতে বর্তমানে খরচ হয় প্রায় ৫০ হাজার ডলার৷

অ্যান থমাস জানান, ‘‘এমবিএ করে জেনারেলাইজেশনের পিঠে চড়ে চাকরি-বাজারে ভালো মানের বেতন পাওয়া হয়তো যায়৷ কিন্তু এতে করে নিজের পছন্দের বিষয় থেকে সরে ম্যানেজমেন্টের কাজে ব্যস্ত হয়ে যেতে হয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে৷ তাই সাধারণত যাঁরা এমবিএ পড়তে আগ্রহী, তাঁদের সঙ্গে পিএইচডি করতে চাওয়া ছাত্র-ছাত্রীদের একটা বেশ চরিত্রগত পার্থক্য আছে৷ অবশ্য এমবিএ’এর সঙ্গে সায়েন্স বা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কোনো বিষয়ে আন্ডারগ্রাজুয়েট, মাস্টার্স বা পিএইচডি থাকলে কথাই নেই৷ এধরণের চাকরিকেই যে বলা হয় ‘গোল্ডেন কলার জব’৷”

স্বাভাবিকভাবেই, উচ্চশিক্ষার যে কোনো পথ বেছে নেওয়ার আগে, এটা জানা দরকার যে প্রতিটি মানুষের গল্প স্বতন্ত্র৷ তাছাড়া, প্রতিটা মানুষের অভিজ্ঞতা, শিক্ষা এবং তার ফলাফলও হয় ভিন্ন৷ তাই প্রত্যেকের উচিত নিজের লক্ষ্যটিকে প্রথমে নিশ্চিত করা এবং একটি পরিষ্কার পরিকল্পনা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া৷

প্রতিবেদন: দেবারতি গুহ
সূত্র: ডয়েচে ভেলেfavicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment