সেলসে ক্যারিয়ার গড়ুন
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
বাজারে শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখতে প্রায় সবকটি প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানই তাদের উত্পাদিত অথবা বাজারজাতকৃত পণ্যের প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে শোরুম স্থাপন করে থাকে। প্রতিষ্ঠানকর্তৃক স্থাপিত প্রায় সবকটি শোরুমেই কোম্পানি কর্তৃক নিয়োজিত সেলসম্যান/সেলসগার্ল থাকে। তারা মূলত প্রতিষ্ঠানের উত্পাদিত অথবা বাজারজাতকৃত পণ্য সমূহের সাথে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করে থাকে এবং প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পণ্যের গুণাবলী ক্রেতাদের নিকট বর্ণনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের পণ্য বিক্রিতে সরাসরি ভূমিকা রেখে থাকে।
কাজের ধরন
এই কাজটি মূলত যেকোনো প্রতিষ্ঠানের সাথে ক্রেতাদের সরাসরি মেলবন্ধন হিসেবে কাজ করে থাকে। স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টের আওতায় থেকে কাজ করে থাকে একজন সেলসম্যান/ সেলসগার্ল। প্রতিষ্ঠানের শোরুমের আকার এবং ব্যবসায়িক কর্মপরিধির এবং পরিকল্পনা মতে তাদের কাজের ধরন বিভিন্নরকম হয়ে থাকে। তবে দায়িত্ব মূলত একই ধরনের হয়ে থাকে। অর্থাত্, প্রতিষ্ঠানের উত্পাদিত পণ্য অথবা বাজারজাতকৃত পণ্য সমূহকে সঠিক পন্থায় ক্রেতাদের নিকট উপস্থাপন এবং বিক্রয় নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের পণ্যের বাজার নিশ্চিত করা।
প্রতিষ্ঠানের শোরুমে আগত ক্রেতাদের সঠিক চাহিদা নিরুপণের মাধ্যমে যথাযথ ভূমিকা গ্রহণের মাধ্যমে পণ্যের বিক্রয় নিশ্চিতকরাই একজন বিপণন কর্মী তথা শো-রুমের সফল বিক্রয় কর্মীর মূল কাজ। সেই সাথে প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পনা অর্থাত্ প্রতিযোগিতার বাজারে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের পণ্যের বাজার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে কাজ করতে হয় তাদের। ফলে যেকোনো প্রতিষ্ঠানেই একজন মানসম্পন্ন বিপণন কর্মীর যথেষ্ট দায়িত্ব এবং চাহিদা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানের পণ্য বিক্রয় কার্যক্রমে সরাসরি ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে একজন বিপণন কর্মীর। স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হিসেবে সরাসরি ক্রেতাদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে হয়। ফলে ক্রেতাদের নিকট পণ্য বিক্রয় করার সাথে সাথে পণ্যের মান সম্বন্ধে ক্রেতার কোনো অভিযোগ থাকলে তা সমাধানের দায়িত্বও একজন বিপণনকর্মীর উপর বর্তায়। ফলে প্রতিষ্ঠানের পণ্য সঠিকভাবে ক্রেতাদের সামনে উপস্থাপনের লক্ষ্যে তাদের ভুমিকাই মূখ্য।
যোগ্যতা
এই পেশাতে আসতে হলে একজন ব্যক্তির ন্যূনতম স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করতে হয়। তবে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান আরও অধিক যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের নিয়োজিত করে থাকে। এ ক্ষেত্রে মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্নকারী ব্যক্তিদের নিয়োজিত করে থাকে প্রতিষ্ঠানগুলো। আবার কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানসমূহ বিশেষ ক্ষেত্রে এইচএসসি উত্তীর্ণদের এই পেশাতে নিয়োগ দিয়ে থাকে। কিন্তু শিক্ষাগত যোগ্যতা যাই চাওয়া হোক না কেন, এই পেশাতে যেকোনো বিষয় হতে উত্তীর্ণ ব্যক্তিরই আসতে পারে। তবে চাকরির প্রতিযোগিতার বাজারে অনেক প্রতিষ্ঠানসমূহ বাণিজ্য বিভাগ হতে উত্তীর্ণ ব্যক্তিদের প্রাধান্য দিয়ে থাকে।
বাড়তি যোগ্যতা
শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি এই পেশাতে অনেক যোগ্যতার প্রয়োজন হয়ে থাকে। শুদ্ধ বাচনভঙ্গি, স্মার্টনেস, পরিচ্ছন্নতাসহ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন গুণাবলী এই পেশাতে অবশ্যই প্রয়োজন হয়ে থাকে। সেই সাথে ক্রেতাদের পণ্য কিনতে প্রভাবিত করার ক্ষমতা এই পেশাতে একজন ব্যক্তির বাড়তি যোগ্যতা হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে।
চাকরির সুযোগ
বাংলাদেশে এই পেশাতে যথেষ্ট চাকরির সুযোগ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের উত্পাদিত অথবা বাজারজাতকৃত পণ্যসমূহের বাজার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে প্রতিনিয়তই তাদের ব্যবসার কর্মপরিধি বৃদ্ধি করে চলেছে। এরই ধারাবাহিকতায় চাকরির সুযোগ বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে বিপণন কর্মী তথা সেলসম্যান এবং সেলস গার্লদের। প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নিয়োগকৃতদের প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন শোরুম অথবা বিক্রয়কেন্দ্রে নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠানের আকার এবং ব্যবসায়িক কর্মপরিধির উপর নির্ভর করেই মূলত নির্দিষ্টসংখ্যক বিপণন কর্মীদের নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। তবে যেকোনো শোরুমেই ৫ জন থেকে ১০ জন কাজ করে থাকে এবং বৃহত্ শোরুমের ক্ষেত্রে এর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ১০ জন থেকে ৫০ জন পর্যন্ত হয়ে থাকে। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানে সময় শিফটিং হিসেবে কাজের পরিবেশ রয়েছে।
বেতন ও অন্যান্য সুবিধাসমূহ
একজন সেলসম্যান অথবা সেলস গার্লের বেতন অনভিজ্ঞ এবং অভিজ্ঞ দুইভাগে বিভক্ত করা হয়ে থাকে। অনভিজ্ঞদের এই পেশাতে নতুন নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানভেদে বেতন ৫-৭ হাজার টাকা হয়ে থাকে। সেই সাথে প্রতিষ্ঠানপ্রদত্ত বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা রয়েছে। অপরদিকে অভিজ্ঞ এবং অধিক শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্নদের এই পেশাতে বেতন অবকাঠামো ৮-১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। সেই সাথে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদেয় অন্যান্য সুবিধার পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।
প্রশিক্ষণ
বিপণন পেশাতে সবসময়েই প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। আর এই পদের জন্য প্রশিক্ষণ বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কেননা, প্রতিষ্ঠানের পণ্য বিক্রির জন্য তাদেরকে সরাসরি ক্রেতাদের পণ্য সম্বন্ধে সঠিক ধারণা প্রদান করতে হয়। ফলে, প্রায় সকল প্রতিষ্ঠানই তাদের সেলসম্যান/ সেলস গার্লদের নিজস্ব পণ্য সম্বন্ধে বিস্তারিত ধারণা দেওয়া হয় এবং ক্রেতাদের নিকট প্রতিষ্ঠানের পণ্য বিক্রয়ের কৌশলসমূহ সম্বন্ধে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। যোগ্য ব্যক্তিদের যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রদানের লক্ষ্যে বৃহত্ প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানসমূহ বিভিন্ন কর্মশালাতে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেয়।
পার্টটাইম চাকরির সুযোগ
বিপণন পেশাতে ছাত্র-ছাত্রীদের পার্টটাইম চাকরির যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে অনেক মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। সেসব মেলাতে অনেক প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে থাকে এবং তখন তারা মেলা চলাকালীন পার্টটাইম বিপণন কর্মীদের নিয়োগ দিয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে চাকরির মেয়াদ মেলা চলাকালীন পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে ভালো যোগ্যতা প্রমাণ করতে সক্ষম হলে প্রতিষ্ঠান তাদের পূর্ণকালীন কাজের সুযোগ করে দেয়।
বেতন
পার্টটাইম হিসেবে বিপণন কর্মীদের সাধারণত দিন হিসেবে পারিশ্রমিক প্রদান করা হয়ে থাকে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান মেলা চলাকালিন সময়কে হিসেব করে নির্দিষ্ট অর্থ প্রদান করে থাকে। তবে দিন হিসেবে পারিশ্রমিক একজন খণ্ডকালীন বিপণন কর্মীর ক্ষেত্রে ৫০০-১০০০ হাজার টাকা হয়ে থাকে। সেই সাথে থাকে যাতায়াত ব্যয়। প্রয়োজনীয় পোশাকও প্রদান করা হয়ে থাকে।
যোগ্যতা
পার্টটাইম বিপণন কর্মী হিসেবে কাজ করতে হলে সাধারণত নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ বিভিন্ন বিষয়ে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের নিয়োগ প্রদান করে থাকে। এ ক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে স্নাতক অধ্যায়নরতদের প্রাধান্য দেওয়া হয়ে থাকে। তবে এ ক্ষেত্রে বুদ্ধিদীপ্ত তরুণ-তরুণীদের প্রাধান্য সবচেয়ে বেশি। অনেকের মধ্যে ভূল ধারণা রয়েছে, ভালো চেহারার অধিকারী না হলে বিপণন পেশাতে কাজ করা যায় না। কথাটি কিন্তু সত্য নয়। আপনাকে মনে রাখতে হবে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান আপনার যোগ্যতাকেই বেশি প্রাধান্য দিবে। কেননা, যোগ্যতাবিহীন বিপণনকর্মীকে নিয়োগ দিলে প্রতিষ্ঠানসমূহ যে উদ্দেশ্যে বিপণনকর্মী নিয়োগ দিয়েছে সে উদ্দেশ্যেপূরণ কখনোই সম্ভবপর হবে না। অর্থাত্ স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানের উত্পাদিত অথবা বাজারজাতকৃত পণ্য সঠিক লক্ষ্যে বিক্রি হবে না। তাই প্রতিষ্ঠানের পণ্য বিক্রি এবং প্রদর্শনীর লক্ষ্যে যোগ্যতা সম্পন্ন বিপণন কর্মীদের নিয়োগ প্রদান করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে বর্তমানে এই পেশাতে তরুণ-তরুণীদের চাকরির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। ফলে প্রতিযোগিতার বাজারে নিজেকে এই পেশাতে প্রতিষ্ঠিত করতে সবসময়ই উদ্যমী ভূমিকা গ্রহণ করতে হয়। সুন্দর পরিবেশে ভদ্র এবং ভবিষ্যত সম্পন্ন চাকরিক্ষেত্র হিসেবে এই পেশাতে এখন উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিরা আগ্রহী হয়ে উঠেছে। সম্মানজনক পেশা হিসেবে আপনার আগামীর পথ চলা এই পেশাতে নিয়োজিত করে ক্যারিয়ারে সফলতা আনয়ন করুন।