চাকরি শুরুর আগের চাকরি

চাকরি শুরুর আগের চাকরি

  • ক্যারিয়ার ডেস্ক

ইন্টার্নশিপ_ কথাটা শুনে এক সময় দূর থেকে অনেকেই ট্যারা চোখে তাকাতেন। সেই দিন বদলে গেছে। এখন ইন্টার্নশিপকে অনেকেই স্যালুট করেন। গ্র্যাজুয়েশন ও পোস্ট গ্র্যাজুয়েশনের মেজর বিষয়গুলোর প্র্যাকটিক্যাল প্রতিফলন ঘটে ইন্টার্নশিপের মাধ্যমে। তাই ইন্টার্নশিপকে ছোট করে দেখার কোনো ফুরসত নেই। যে প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপ করবেন, সেটাই হবে আপনার চাকরি ক্ষেত্র- এ ভাবনা মাথায় রেখে যদি পা বাড়ান, তাহলে সেটা একেবারেই সম্ভব। কাজে একটু মনোযোগী হলেই ইন্টার্নশিপ প্রতিষ্ঠানে পারমানেন্ট চাকরি পাওয়া খুবই ডাল-ভাতের মতো ব্যাপার! তাই ইন্টার্নশিপে নামার আগে পছন্দের কোম্পানি ঠিক করে নিজের সঙ্গে একটা চ্যালেঞ্জ নিয়ে নামুন।

এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য আবার সাপোর্ট আর রিসোর্স শেয়ারিংও গুরুত্বপূর্ণ। ঘাবড়াবেন না! কারণ আপনি শিক্ষানবিশ হিসেবে যে প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপে যাচ্ছেন, সেই প্রতিষ্ঠান কিন্তু আপনাকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা করা তাদের কর্তব্য মনে করে। লক্ষ্যকে কাজে লাগাতে এটাও বড় ধরনের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে।

দক্ষতা ও লক্ষ্য যাচাই
ইন্টার্নশিপে কাজ শুরুর আগে মাথায় রাখতে হবে, কোন দিকটিতে দক্ষতা অর্জন করতে চান, নতুন কী আয়ত্ত করতে চান এবং কীভাবে নেটওয়ার্ক তৈরি করতে চান। তবে এমন কিছু আশা করবেন না- যা অর্জন করা আপনার পক্ষে অসম্ভব। তা ছাড়া জানেনই তো, ইন্টার্নশিপ নির্দিষ্ট একজনের অধীনে বা তত্ত্বাবধানে করতে হয়। সেই তত্ত্বাবধায়ক বা সুপারভাইজারের সঙ্গে ভালো একটা সম্পর্ক রাখতে হবে। যে কোনো আইডিয়া এই তত্ত্বাবধায়ক বা সুপারভাইজারের সঙ্গে আলোচনা করুন। এতে করে আপনার সঙ্গে সুপারভাইজারের একটা ভালো সম্পর্ক তৈরি হবে। শুধু তাই নয়, এতে আপনি অনেক বেশি শিখতেও পারবেন।

শেখার মানসিকতা
সব ধরনের প্রতিষ্ঠানই শিক্ষানবিশদের ইন্টার্নশিপের পেছনে কিছু ব্যয় করেন। সুতরাং তারা শিক্ষানবিশদের দিয়ে কিছু বাড়তি কাজ করিয়ে নেয়। এগুলো সুকৌশলে পালন করা শিক্ষানবিশদের কর্তব্য। এতে বিরক্ত না হয়ে কাজগুলো শেখার মানসিকতা নিয়েই করে যান। এ ছাড়া অভিযোগ, অশালীন আচরণ, সহযোগীদের সঙ্গে অশ্রাব্য কথা, দেরিতে অফিসে আসা এবং অন্যদের আগে অফিস ত্যাগ করা, ডেটলাইন মিস ও অফিস পলিসি না মানা কিন্তু নিজের জন্যই ক্ষতিকর। তাই এসব এড়িয়ে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে কাজ করুন।

আইডিয়ার জাদু
ইন্টার্নশিপ মূলত একটি নির্দিষ্ট ডিপার্টমেন্ট, সুপারভাইজার ও শিক্ষানবিশদের চক্রে আবদ্ধ। কিন্তু আপনি তাতে আবদ্ধ না থেকে প্রতিষ্ঠানের সব মিটিং, ওয়ার্কশপ, কনফারেন্স, ইভেন্টে নিয়মিত অংশগ্রহণ করুন। এতে প্রতিষ্ঠানের খুঁটিনাটি বিষয় জানতে পারবেন। অন্য ডিপার্টমেন্টের কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ এবং প্রতিষ্ঠানের সোশ্যাল ইভেন্টে অংশগ্রহণ করুন। আর সব জায়গায় নিজের আইডিয়া শেয়ার করুন। যত বেশি অন্যদের সঙ্গে আইডিয়া শেয়ার করবেন ততই শিখতে পারবেন।

জেনে নিন
ইন্টার্নশিপ কিন্তু লার্নিং প্রসেস। প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার বা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা যে ধরনের কাজ আপনার কাছ থেকে আশা করছেন সে বিষয়ে আপনার কোনো ধারণা না থাকাটাই স্বাভাবিক। ফলে কাজটা ভালো করে বুঝে নিন। আর এ নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে নিঃসংকোচে প্রশ্ন করে যান। একবার না পারলে কোনো কাজ বারবার চেষ্টায়ও সফলতা আনতে পারেন। কারণ এখানে আপনি অভিজ্ঞতা নিতেই এসেছেন। যেই অভিজ্ঞতা আপনার জীবনবৃত্তান্ত এবং ক্যারিয়ার পোর্টফলিওতে উল্লেখ করতে পারবেন। ইন্টার্নশিপ সত্যিই ক্যারিয়ারের বড় ধরনের একটি অভিজ্ঞতা। নতুন পরিবেশে নিজেকে কাজের জন্য উপযুক্ত করে তোলার প্রাথমিক পর্যায়ে একটু বেগ পেতেই হয়। এসব প্রতিকূলতা ঠেলে দিতে পারেন কেবল প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে। তবে অতিরিক্ত প্রশ্ন করতে যাবেন না। আপনার প্রশ্নগুলো হোক কাজ রিলেটেড।

পথ পরিষ্কার
প্রতিষ্ঠান সেই কর্মীকেই পছন্দ করে, যে বা যারা যে কোনো অবস্থায় কার্যকর উদ্যোগ নিতে পারে। তাই আপনাকেও প্রমাণ করতে হবে যে, আপনি যে কোনো সময়, যে কোনো পরিস্থিতিতে কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের জন্য কিছু করতে পারেন। শুধু কাজের মাধ্যমেই নয়, বাড়তি উদ্যোগ নিয়েও এ পথটাকে পরিষ্কার করতে হবে।

দিকনির্দেশনা
মেন্টর হচ্ছে এমন ব্যক্তি, যিনি তার অধীন কর্মীদের সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে জানাবেন। এই মেন্টরই বুঝবেন কর্মীদের চাহিদা এবং সে অনুযায়ী দিকনির্দেশনা দেবেন সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি করার। অফিস পলিটিক্স থেকে আপনাকে মুক্ত রাখতে মেন্টর কাজ করবেন। সুতরাং আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে আসল মেন্টর। ইন্টার্নশিপের জন্য সুপারভাইজারই হতে পারে আপনার মেন্টর বা সঠিক দিকনির্দেশক।

যোগাযোগ
জব খোঁজার সবচেয়ে বড় রাস্তাটা হচ্ছে যোগাযোগ। যার যোগাযোগ যত বেশি। তার চাকরিও মেলে তত দ্রুত। তাই ইন্টার্নশিপের সময় সুপারভাইজারসহ সবার সঙ্গেই ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলুন। তা ছাড়া ইন্টার্নশিপে আপনাকে প্রচুর শিখতে হবে। এখানকার অভিজ্ঞতাও আপনার চাকরির জন্য বাড়তি সুবিধা প্রদান করবে। তবে শেখার সঙ্গে সঙ্গে ইন্টার্নশিপের সময়টা উপভোগ করার চেষ্টা করুন। এতে আপনার শিখন প্রক্রিয়া সহজ হয়ে উঠবে। মনে রাখবেন, এ সময়টা কিন্তু ক্যারিয়ারের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ!

কোম্পানির স্থায়ীভাবে রিত্রুক্রটমেন্টের সময় যারা ইন্টার্নশিপে অংশ নেন, তাদের মধ্যে যারা চাকরির সুযোগ পান তারা সত্যিকার অর্থে কোম্পানির ভালো-মন্দ নতুনদের চেয়ে বেশি বোঝেন। যারা পুরোপুরি রিত্রুক্রটমেন্ট প্রসেসের মাধ্যমে চাকরি পান, তাদের চেয়ে ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রামের শিক্ষানবিশরা অনেক বেশি এগিয়ে থাকেন কাজকর্মে এবং প্রতিষ্ঠানের নিয়ম-কানুন পালনে। মনে রাখবেন, আপনার ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানও উপকৃত হচ্ছে। পাশাপাশি আপনিও। কাজেই উদ্দেশ্য মাথায় রেখে শুরু থেকেই কাজে মনোযোগী হোন।favicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment