আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপ
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
গত বছর গ্রীষ্মে স্নাতক প্রথম বর্ষে পড়ার সময় ইন্টার্নশিপ করেছিলেন গুগলের সদর দপ্তর মাউন্টেন ভিউতে। এ বছর গ্রীষ্মে তাঁকে ইন্টার্নশিপের অফার করেছে ছয়টি নামি কম্পানি। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপের খুঁটিনাটি জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির শিক্ষার্থী বাংলাদেশি মেয়ে বৃষ্টি শিকদার।
গুগল, ফেসবুক, মাইক্রোসফটের মতো আরো অনেক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানেই আছে ইন্টার্নশিপের সুযোগ। ইন্টার্নশিপ হয় মূলত ১০-১৪ সপ্তাহ ধরে। সেই সময় মোটামুটি একজন ফুলটাইম কর্মকর্তার মতোই কাজ দেওয়া হয় ইন্টার্নদের।
ইন্টার্নদের একজন করে ম্যানেজার আর একজন মেন্টর থাকে। ম্যানেজার কাজ দেয়, আর মেন্টর সেই কাজ করতে সাহায্য করে। কিভাবে অন্য টিমের সঙ্গে কাজ ভাগাভাগি করা যায়, কিভাবে নিজেদের দলের সদস্যদের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করতে হয়, নেতৃত্বের গুণাবলি ইত্যাদি অনেক কিছু শেখা হয়ে যায় ইন্টার্নশিপে। ইন্টার্নশিপ না করলে এসব জিনিস ঠিকমতো বুঝে ওঠা যায় না।
পছন্দমতো কাজ
যোগ্যতা অনুযায়ী ইন্টার্নদের বিভিন্ন রকম কাজ দেওয়া হয়। যাঁর যে রকম কাজ পছন্দ, তাঁকে সে রকম কাজও দেওয়া হয়। যেমন—কেউ যদি ইউজার ইন্টারফেস ডিজাইন করতে পছন্দ করেন, তাঁকে ওই রকম একটা কাজ দেওয়া হবে। কেউ যদি আলগরিদম করতে পছন্দ করেন, তাঁকে কিছু ছোট ছোট আলগরিদমের সমস্যা সমাধান করে সেগুলো কোড করতে বলা হবে।
কখন কোথায়
ইন্টার্নশিপের প্রস্তুতি প্রথম বর্ষ থেকেই শুরু করা যায়। গুগল আর মাইক্রোসফটে প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রছাত্রীদের জন্য আলাদা ইন্টার্নশিপ আছে, যা তুলনামূলকভাবে অনেক সহজে পাওয়া যায়। তা ছাড়া যেকোনো বর্ষে থাকতেই একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইন্টার্নশিপের জন্য আবেদন করতে পারেন। বেশির ভাগ আন্তর্জাতিক ইন্টার্নশিপ হয় মে-সেপ্টেম্বরের দিকে। তবে গুগল এবং আরো কিছু কম্পানিতে সারা বছরই ইন্টার্ন নেওয়া হয়। মাইক্রোসফট, গুগল, ফেসবুকের মতো বড় কম্পানিগুলো আমেরিকার বাইরে থেকে অনেক ইন্টার্ন নেয়। অতএব, তুমি চাইলে বাংলাদেশে থেকেও ইন্টার্নশিপ করতে পারো, যদি তোমার যোগ্যতা থাকে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে প্রচুর ইন্টার্ন কাজ করে সিলিকন ভ্যালিতে।
প্রতিষ্ঠান বড়–ছোট বিষয় নয়
শুধু যে বড় কম্পানিতে ইন্টার্নশিপ করতে হবে, এমন কিন্তু নয়। ছোট কম্পানি বা স্টার্ট আপ-এ ইন্টার্নশিপ করলে অনেক রকম স্কিল শেখা যায়। কারণ সেখানে মানুষ কম আর কাজ অনেক বেশি। সেখানে নানা ধরনের কাজ কিভাবে করা যায়, তা শেখা যায়। অতএব কেউ ছোট কম্পানিতে ইন্টার্নশিপ করলেই এটিকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। অনেক বড় কম্পানি চাকরি দেওয়ার সময় ছোট কম্পানিতে করা ইন্টার্নশিপের কাজকে অনেক গুরুত্ব দেয়। অতএব প্রতিষ্ঠান বড় বা ছোট যা-ই হোক না কেন, ইন্টার্নশিপ করলে পরে ক্যারিয়ারে অনেক কাজে আসে।
আবেদন অনলাইনে
ইন্টার্নশিপের জন্য আবেদন করতে হবে অনলাইনে। আবেদনের পর নেওয়া হয় ইন্টারভিউ। বিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রীদের আলগরিদমসহ সায়েন্সের নানা বিষয়ে ভালো হওয়াটা খুব জরুরি। ‘Cracking the Coding Interview’ বইয়ে বেশ কিছু আলগরিদম আর কিছু প্রশ্ন আছে, যা ইন্টার্নশিপের ইন্টারভিউতে জিজ্ঞেস করা হয়। কিছু ইন্টারভিউয়ের প্রশ্ন কঠিন হতে পারে। আমার সাজেশন, বেশি বেশি করে আলগরিদম পড়া আর শেখা। codeforces.com, uva.onlinejudge.org, topcoder.com—এই সব সাইটে অনেক আলগরিদমের প্রবলেম থাকে। এই সব সাইটে নিয়মিত অনলাইন কন্টেস্ট করলে আলগরিদমে দক্ষতা বাড়বে।
সব খরচ দেবে প্রতিষ্ঠান
আমি এখন স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছি। এ বছর ছয়টি কম্পানি থেকে ইন্টার্নশিপের অফার পেয়েছি। সেই কম্পানিগুলো হচ্ছে—গুগল, মাইক্রোসফট, টুইটার, রভি, ইন্ডিড ও কোড়া। যখন তাদের কম্পানিগুলোতে ইন্টারভিউ দিতে গেছি, তখন আমার বিমানভাড়া থেকে শুরু করে হোটেলের খরচ, খাওয়ার খরচ, ট্যাক্সিভাড়া—সব কিছুই তারা দিয়েছিল। এমনকি একটা কম্পানি আমাকে সানফ্রান্সিসকো ঘোরার জন্য কিছু টাকাও দিয়েছিল। ইন্টারভিউয়ের অভিজ্ঞতাগুলোও খুব মজার হয়। এইবার ইন্টারভিউয়ের সুবাদে সানফ্রান্সিসকো ছাড়াও মাউনটেইন ভিউ, নিউ ইয়র্ক ও ডালাসে ঘোরার সুযোগ পাই। আমার প্রতিদিনের খাবার বাজেট রেখেছিল ৫০-৯০ ডলার, তাই বেশ দামি রেস্তোরাঁতেও খাবার সুযোগ হয়েছিল আমার।
মেলে বেতনও
ইন্টার্নশিপে খুবই ভালো বেতন দেওয়া হয়। ১২ সপ্তাহের ইন্টার্নশিপের জন্য ১২-৩৫ হাজার ডলার পর্যন্ত বেতন দেয় কম্পানিগুলো। যদি তুমি বাংলাদেশ থেকে অন্য কোনো দেশে ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ পাও, ওই কম্পানি তোমার ভিসার দায়িত্ব নেবে। মাঝেমধ্যে তারা নিজেরাই বিমানের টিকিট কেটে দেয়, অথবা বিমানের টিকিটের সমপরিমাণ টাকা বেতন হিসেবে দেয়।
সিভিতে ইন্টার্নশিপ থাকলে, সেটি অন্য মাত্রা পায়। সব কম্পানি অভিজ্ঞতাকে অনেক দাম দেয়। ইন্টার্নশিপ যেহেতু অনেক বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করার সুযোগ দিয়ে থাকে, তাই ফুলটাইম চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে এটি অনেক সাহায্য করে।
কাজের কিছু বই
এইখানে কিছু বই দেওয়া হলো, যা ইন্টারভিউর জন্য কাজে লাগে—
ox, Don. Essential .Net, Volume I : The Common Language Runtime. Addison-Wesley Professional, 2003.
Brooks, Fredrick. The Mythical Man-Month : Essays on Software Engineering. Addison-Wesley Professional, 1995.
Cormen, T. H., Leiserson, C. E., Reivert, R.L., Stein, Cliff, eds. Introduction to Algorithms. McGraw-Hill, 1990.
Howard, Michael, LeBlanc, David, Eds. Writing Secure Code. Microsoft Press, 2001.
McConnell, Steve. Code Complete : A Practical Handbook of Software Construction. Microsoft Press, 1993.
Maguire, Steve. Writing Solid Code : Microsoft’s Techniques for Developing Bug-Free C Programs. Microsoft Press, 1993.
Mc Connell, Steve. Rapid Development : Taming Wild Software Schedules. Microsoft Press, 1996.
Tanenbaum, Andrew. Modern Operating Systems. 2nd ed. Prentice Hall, 2001.