৩৬তম বিসিএস : লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি

৩৬তম বিসিএস : লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি

  • ক্যারিয়ার ডেস্ক

আগামী ১ সেপ্টেম্বর শুরু হবে ৩৬ তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা। বিসিএস পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হতে হলে আপনাকে যে ধাপগুলো মোকাবেলা করতে হবে তার মধ্যে লিখিত পরীক্ষা অন্যতম। এখান থেকেই মেধা তালিকায় স্থান করে নিতে হয়। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারলেই মুখোমুখি হতে হবে ভাইভার। এই হিসেবে শিক্ষার্থীদের জন্য লিখিত পরীক্ষাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই লিখিত পরীক্ষার জন্য প্রার্থীরা অনেক চিন্তিত। কোন বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিবে আবার কোন বিষয়কে এড়িয়ে যাবে তা স্থির করতে পারছে না অনেকেই। এ নিয়ে কথা হয় ২৭ তম বিসিএসে সম্মিলিত মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ আবু তারেক দিপুর সাথে। তিনি বর্তমানে এডিশনাল পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত আছেন।

1471429193
২৭ তম বিসিএসে সম্মিলিত মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ আবু তারেক দিপু

বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এত দিন যা পড়েছেন, নতুন আর কোনো বিষয় যুক্ত না করে মাথা ঠান্ডা রেখে সেগুলোতেই ভালো করে নজর দিতে হবে। যে কাজটি করতে হবে তা হলো বিগত বছরের প্রশ্নগুলো পড়া। অর্থাৎ দশম বিসিএস থেকে ৩৫তম বিসিএস প্রশ্নগুলো পড়তে হবে। দেখা যায় কিছু প্রশ্ন সব লিখিত পরীক্ষাতেই রিপিট হয়ে থাকে। তবে পড়ার সময় বিগত যে প্রশ্নগুলো প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে তা বাদ দিয়ে দিতে হবে।’ তিনি আরও জানান, বাংলা, ইংরেজি, গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা, বাংলাদেশ বিষয়াবলি, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি, সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য প্রার্থীকে প্রথমেই চিহ্নিত করতে হবে কোন কোন বিষয়ে তার ধারণা কম। সে বিষয়েই বেশি জোর দিতে হবে। গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা বিষয়টা একটু ভিন্ন ধরনের। এ বিষয় পুরোপুরি নির্ভর করে চর্চার ওপর। তাই কখনোই বিরতি দেওয়া যাবে না। গণিতের ক্ষেত্রে অনুশীলনের বিকল্প নেই। সূত্রগুলো একটি খাতায় এক সঙ্গে লিখে রাখতে পারেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে ভালো করার জন্য মাধ্যমিক ক্লাসের সাধারণ বিজ্ঞান বইয়ের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। বিশ্বজুড়ে সমসাময়িক যেসব ঘটনা ঘটছে সেগুলোর ব্যাপারে পরিস্কার ধারণা রাখলে আন্তর্জাতিক বিষয়ে ভালো করা অনেক সহজ হয়। বেশি বেশি সংবাদপত্র পড়া ও খবর শুনতে হবে। অনুবাদ অনেকের কাছেই কঠিন ঠেকে। বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকীয় নিয়মিত অনুবাদ করতে হবে। বাংলাদেশ বিষয়াবলির জন্য দেশীয় অঙ্গনে ঘটে যাওয়া সমসাময়িক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, দেশের ভূ-প্রকৃতি, জলবায়ু, ইতিহাস, অর্থনীতি, সরকার ব্যবস্থা, আর্থসামাজিক অবস্থা, শিক্ষানীতি, দেশের জন্ম ইতিহাস ও সংবিধান ইত্যাদি বিষয়ে পরিপূর্ণ ধারণা নিলে পরীক্ষায় ভালো করা যায়। গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য খাতায় একসঙ্গে লিখে রাখলে পরীক্ষার আগের রাতে রিভিশনে বেশ সুবিধা হয়। যেমন- আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এবং তার ঐতিহাসিক পটভূমি সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ তারিখগুলো। আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংগঠন সম্পর্কিত তথ্য। রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি, সংবিধানের সবক’টি ভাগের মূল বিষয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ধারা। বাংলা বিষয়ে প্রস্তুতির জন্য সাহায্য নেওয়া যেতে পারে বিগত সালের পরীক্ষায় আসা নানা প্রশ্নের। এসব পরীক্ষায় আসা ব্যাকরণ এবং বিভিন্ন ধরনের পত্র লেখার নিয়ম জেনে নেওয়া যেতে পারে।

বিসিএসে যে সব প্রশ্ন কমন পড়বে এমন ধারণা ভুল। ভালো করার জন্য ধারণা থেকে হলেও কিছুটা লিখে আসতে হবে। কারণ বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় কোনো একটি বিষয়ে খারাপ করলে অন্য একটি বিষয় দিয়ে সেটি পূরণ করা খুবই কঠিন।

লিখিত পরীক্ষার মানবন্টন ও প্রস্তুতি প্র্রসঙ্গে আরও কথা হয় ৩২তম বিসিএসে সম্মিলিত মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ হওয়া ডা. মো. আকতারুজ্জামান লিকুর সঙ্গে। তিনি বর্তমানে ন্যাশনাল ইনস্টিউট অব অফথ্যালমোলজীতে কর্মরত আছেন। তিনি বলেন, ‘লিখিত পরীক্ষা মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে।

৩২তম বিসিএসে সম্মিলিত মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ আকতারুজ্জামান লিকু
৩২তম বিসিএসে সম্মিলিত মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ আকতারুজ্জামান লিকু

তা হলো জেনারেল ও টেকনিক্যাল। প্রশাসন, পুলিশ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ ইত্যাদি হলো জেনারেল ক্যাডার। ডাক্তার, শিক্ষক, ইঞ্জিনিয়ার এগুলো হলো টেকনিক্যাল ক্যাডার। প্রত্যেককেই লিখিত ৯০০ নম্বরের পরীক্ষা দিতে হবে, তবে জেনারেলদের থেকে টেকনিক্যাল ক্যাডারের জন্য ২০০ নম্বরের আলাদা পরীক্ষা দিতে হবে। যে যেই বিষয়ে লেখাপড়া করেছে তাকে সেই বিষয়েই পরীক্ষা দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে ৭০০ নম্বর জেনারেলদের মতোই হবে।’ বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় বাংলায় থাকে ২০০, ইংরেজীতে ২০০, সাধারন বিজ্ঞানে ১০০, গনিত ১০০, আন্তর্জাতিক ১০০, বাংলাদেশ সম্পর্কিত ২০০। বাংলা ২০০ নম্বরের মধ্যে ১ম পত্রে ১০০ এবং ২য় পত্রে ১০০ নম্বর থাকে। ইংরেজিতেও তাই। সাধারণ ক্যাডারের জন্য বাংলা ইংরেজিতে ২০০ নম্বরের পরীক্ষাই দিতে হবে। টেকনিক্যাল ক্যাডারের জন্য বাংলা ও ইংরেজিতে ২০০ নম্বরের স্থানে ১০০ নম্বরের পরীক্ষা দিতে হবে। অর্থাত্ বাংলা ও ইংরেজির ১ম পত্রের পরীক্ষা দিতে হবে। ২য় পত্র হবে বিষয়ভিত্তিক (যে বিষয়ে সে লেখাপড়া করেছে)। লিখিত পরীক্ষায় সন্তোষজনক ফল পেতে হলে করনীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে আকতারুজ্জামান আরও বলেন, ‘৩৫ তম বিসিএস পরীক্ষায় একটু ভিন্ন ধরনের প্রশ্ন এসেছে। এতে ৪২টি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছে। এ জন্য বিগত বছরগুলোর প্রশ্নের সাথে ৩৫তম বিসিএস পরীক্ষার ক্যাটাগরিও খেয়াল রাখতে হবে। আরেকটি বিষয় হলো অনেকেই উত্তরপত্রে বাংলা ও ইংরেজি মিলিয়ে উত্তর দেন। এটা কোনো অবস্থাতেই করা যাবে না। বাংলায় উত্তর দিতে চাইলে সম্পূর্ণ বাংলাতেই দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে টেকনিক্যাল কোডগুলো এবং সংবিধানের কিছু বিষয় আছে যা ইংরেজিতেই দিতে হবে।’ ইংরেজি বানান, গ্রামারের প্রতি বেশি জোর দিতে হবে। বাংলা ব্যাকরণ অনুবাদে ভালো করলে অনেক নম্বর নিশ্চিত করা যায়। সংবিধান সংশোধনী, মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস, ৭৫ সালের পরবর্তী ইতিহাস, বর্তমান সিরিয়ার অবস্থা, বর্তমান অলিম্পিক নিয়ে প্রশ্ন থাকবেই। প্রত্যেকটি পরীক্ষাই ৩ ঘন্টা করে হবে। প্রায় পরীক্ষার দিনই ২টি করে পরীক্ষা হতে পারে। একটানা তিন ঘন্টা থেকে ছয় ঘন্টা লেখার অভ্যাস করা উচিত। তা না হলে দেখা যাবে প্রথম পরীক্ষার পর আর হাত চলছে না।

সূত্র: ইত্তেফাকfavicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment