কোথায় পড়লে কেমন চাকরি
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
দেশে কৃষিভিত্তিক সব বিষয়ের চাকরির বাজার ভালো। ভেটেরিনারি অনুষদে ভর্তি হয়ে পশুর ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছা পূরণ করতে পারেন। তবে মনে রাখতে হবে, প্রচুর লেখাপড়া করতে হয় ভেটেরিনারি অনুষদে। তবে এর থেকে একটু কম পরিশ্রম করে সেমি-ডাক্তার হতে চাইলে বেছে নিতে পারেন অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি (পশুপালন)। এই অনুষদে প্রাণিসম্পদের বৈজ্ঞানিক লালনপালন, প্রজনন, পুষ্টি, প্রক্রিয়াজাতকরণসহ প্রাণিসম্পদের উৎপাদনভিত্তিক লেখাপড়া করানো হয়।
যদি থাকে প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা
ভেটেরিনারি থেকে পাস করে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে উপজেলা ভেটেরিনারি সার্জন হিসেবে যোগ দিতে পারেন। একই পরীক্ষায় পশুপালন অনুষদের গ্র্যাজুয়েটদের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, পশু উৎপাদন কর্মকর্তা কিংবা পোল্ট্রি উন্নয়ন কর্মকর্তা হিসেবে চাকরির সুযোগ আছে। এ ছাড়া হতে পারেন বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা। সুযোগ রয়েছে বিভিন্ন চিড়িয়াখানায় জ্যু অফিসার হিসেবে চাকরি করার। সরকারি প্রতিষ্ঠান মিল্কভিটা, সাভারের বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় গো প্রজনন কেন্দ্র ও দুগ্ধখামার, কক্সবাজারের হরিণ প্রজনন কেন্দ্র, সিলেটে ছাগল প্রজনন কেন্দ্র, বাগেরহাটে মহিষ প্রজনন কেন্দ্র, কুমির প্রজনন কেন্দ্র ও বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে ভেটেরিনারি ও পশুপালন গ্র্যাজুয়েটরা চাকরি করছেন। পাশাপাশি এ বিষয় দুটিতে বেসরকারি পর্যায়ে রয়েছে বিশাল চাকরির বাজার। চাকরি করতে পারেন বেসরকারি বিভিন্ন দুগ্ধ ও পোল্ট্রি খামার, বহুমুখী ফার্ম, ব্র্যাক, সিপি বাংলাদেশ, নারিশ, প্যারাগন, কাজী ফার্মসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। সুযোগ আছে দেশি-বিদেশি ফার্মাসিউটিক্যাল কম্পানিসহ দেশি-বিদেশি এনজিও ও সংস্থায়। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুপালন অনুষদের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আল মামুন বলেন, ‘প্রয়োজনের তুলনায় পশুপালন গ্র্যাজুয়েট অনেক কম। তাই দেশের বড় ফার্মগুলো পশুপালন গ্র্যাজুয়েট না পেয়ে বিদেশ থেকে কনসালট্যান্ট নিয়ে আসছে।’
কৃষিবিজ্ঞানী হতে চাইলে
যাঁরা কৃষিবিজ্ঞানী হয়ে বিভিন্ন ধান ও ফলের জাত উদ্ভাবন করতে চান, তাঁরা বেছে নিতে পারেন কৃষি অনুষদ। শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবু নোমান ফারুক আহমেদ বলেন, সবচেয়ে বেশি চাকরির সুযোগ রয়েছে কৃষি গ্র্যাজুয়েটদের। কৃষি গ্র্যাজুয়েটরা বিসিএসের মাধ্যমে উপজেলাগুলোয় কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন। এ কৃষিবিদদের খুবই পছন্দের জায়গা হলো সরকারি কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ তুলা গবেষণা ইনস্টিটিউট, মৃত্তিকা গবেষণা উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দিচ্ছেন। বেসরকারি খাতেও রয়েছে চাকরির সুযোগ। রয়েছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বীজ ও ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। চাকরির সুযোগ আছে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোতেও।
ভিন্ন ধাঁচের প্রকৌশলী
ছোটবেলা থেকেই যাঁদের প্রকৌশলী হওয়ার প্রবল ইচ্ছা, তাঁরা বেছে নিতে পারেন কৃষি প্রকৌশল বিষয়টিকে। কৃষি প্রকৌশলীদের পছন্দের সরকারি প্রতিষ্ঠান হলো বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা কাউন্সিল, পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কম্পানি। কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপাদক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও আছে চাকরির সুযোগ।
যে জন ভোজনরশিক
ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি খাদ্য প্রক্রিয়াজাত ও খাদ্যের গুণগতমান নির্ধারণ করা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা যায়। কিছুটা সহজ মৎসবিজ্ঞান ও কৃষি অর্থনীতি। তবে চাকরির বাজার বেশ প্রতিযোগিতাপূর্ণ। হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক শাহীন আলম জানান, মাত্স্যবিজ্ঞান অনুষদ থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা বিসিএসের মাধ্যমে টেকনিক্যাল কোটায় উপজেলাগুলোয় মত্স্য কর্মকর্তা ও মত্স্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন। এ ছাড়া সাধারণ কোটায় অনেকেই যোগ দিচ্ছেন। সরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বাংলাদেশ মত্স্য গবেষণা ইনস্টিটিউট। বাংলাদেশ মত্স্য উন্নয়ন করপোরেশন ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড ফিশ সেন্টারেও চাকরির সুযোগ থাকছে। কৃষি অর্থনীতিতে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জন্য বিসিএসের টেকনিক্যাল ক্যাডারে কৃষি বিপণন কর্মকর্তা পদ সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন গবেষণা ইনস্টিটিউটেও আছে চাকরির সুযোগ।