চাকরি পরিবর্তনের পর
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
নতুন অফিসে জয়েন করেছেন আপনি। আগের অফিসে হয়তো কিছু সমস্যা ছিল বা নতুন অফিসে হয়তো কিছু সুবিধার সাপেক্ষেই যোগ দিয়েছেন। যে কারনেই আপনি আগের চাকরী ছেড়ে নতুন চাকরীতে জয়েন করুন না কেন, বর্তমান বাস্তবতা হচ্ছে আপনি আপনার পুরোনো প্রতিষ্ঠান ছেড়ে নতুন অফিসে জয়েন করেছেন। স্বভাবতই এখন অনেক কিছুই বদলে যাবে, অনেক ব্যাপার যোগ-বিয়োগ হবে। তাই কিছু ব্যাপার অবশ্যই মাথায় রাখুন।
- নতুন করে শুরু করুন
নতুন পরিবেশে সব কিছু নতুন ভাবে শুরু করুন। পুরোনো যে আচরণ, সুবিধা, অভ্যাসের সাথে আপনি অভ্যস্ত ছিলেন পুরোনো অফিসে, তা এখানে চর্চা করে লাভ নাও হতে পারে বা সুযোগ নাও মিলতে পারে। তাই নতুন করে সব কিছু শুরু করুন। ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করুন প্রত্যেককে, প্রতিটি কাজকে।
- নতুন নিয়ম কানুনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন
পুরোনো অফিস আর নতুন অফিসের নিয়ম কানুনের মধ্যে সুক্ষ্ম বা বিস্তর ফারাক থাকতে পারে। যাই হোক না কেন, চেষ্টা করুন ভিন্নতার জায়গাগুলো ধরার। জেনে নিন অফিসের নিয়ম কানুন। যদি খুব কঠোর নিয়ম মেনে চলতে হয় আগের অফিসের তুলনায়, তবে অযথা এর বিপক্ষে কলিগদের সাথে কানাঘুষা শুরু করবেন না। চেষ্টা করুন, আস্তে আস্তে মানিয়ে নেবার। আর কোন নিয়ম যদি আপনার পক্ষে মেনে চলা সমস্যা হয়, তবে কর্তৃপক্ষের সাথে আপনার সমস্যাটা একটু শেয়ার করে দেখুন যে, খানিকটা ছাড় পেতে পারেন কিনা!
- অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগান
আগের কাজের ফলে আপনার যে অভিজ্ঞতা সেগুলোকে কাজে লাগান। তবে নতুন কিছু শেখার সুযোগ থাকলে হাতছাড়া করবেন না। পুরোনো কাজের প্যাটার্নে হয়তো আপনি সাচ্ছ্বন্দ্যবোধ করেন। কিন্তু এখানে যদি আরো ভালো কোন ফরম্যাটে কাজ করা হয়, তবে পুরোনো পদ্ধতি আঁকড়ে ধরে না রেখে চেষ্টা করুন নতুনটি শেখার ও চর্চার। পরে কাজে দেবে।
- কলিগদের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করুন
পুরোনো অফিস ছেড়ে এসেছেন বেশ কিছুদিন হলো, তবু এখনো আপনার তাদের সাথেই আড্ডা বা ফোনে কথা বলতে ভালো লাগে। সামাজিক সাইটেও তাদের সাথেই বেশী সময় কাটান আপনি। এতে সমস্যা নেই। কিন্তু সম্পর্ক গড়ে তুলতে চেষ্টা করুন নতুন কলিগদের সাথেও! সবার মানসিকতা এক হয় না। হয়তো কাজ করে এসেছেন এন জি ও বা মিডিয়াতে। যেখানে অফিসের পরিবেশ ছিল খুবই আন্তরিক কিন্তু এখন হয়তো কাজ করছেন কোন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে। যেখানে সবাই অনেক ফর্মাল। কেউ হয়তো নিজে থেকে আপনার কাছে আসবে না। কিন্তু আপনিই বন্ধুত্বেরর হাত বাড়িয়ে দিন না! হাসির জবাবে হাসিই পাবেন। কথাটা মিথ্যে নয়!
- পুরোনো অফিসের দুর্নাম করবেন না
আপনি যে কারনেই চাকরী ছেড়ে থাকেন না কেন। হতে পারে সেটা আপনাকে ব্যক্তিগতভাবে অনেক তিক্ত আর যন্ত্রণাদায়ক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন করেছে। কিন্তু নতুন অফিসের কলিগদের সাথে দয়া করে সেগুলো শেয়ার করতে যাবেন না। এতে দুটো ব্যাপার হতে পারে। কলিগদের আপনার সম্পর্কে একটা খারাপ ধারণা হতে পারে। তারা ভাবতে পারেন যে, এই অফিস ছেড়ে অন্য কোথাও গেলে আপনি তাদের নামেও এমনটা বলতে পারেন। অথবা, এই কথাগুলো কোন কারনে আপনার আগের অফিসের কারো কানে গেলে সেটা তাদের জন্যেও কষ্টকর হবে। কি দরকার! শেয়ার করতে হলে পরিবার বা বন্ধুদের সাথে করুন। অফিসে নয়। কোনভাবেই নয়!
- সারাক্ষণ আগের অফিসের গল্প করবেন না
হতে পারে বর্তমান অফিসের নাম, পরিচিতি, পরিবেশ, কলিগদের শিক্ষাগত বা অন্যান্য যোগ্যতা আগের অফিসের মত নয়। তাই বলে সারাক্ষণ আগের অফিসের ভূয়সী প্রশংসা করে অন্যের বিরক্তির কারণ হবেন না। কেননা বাস্তবতা হলো, এখন আপনিও এখানেই চাকরী করেন। শুধু শুধু নিজের দাম বাড়াবার চেষ্টা করতে গিয়ে উলটো হাসির পাত্রে পরিণত হবেন না যেন!
- কলিগদের তুলনা করবেন না
নতুন অফিসের কলিগদের মান বা আচরনের সাথে আগের অফিসের কলিগদের তুলনামূলক আলোচনা না করাই ভালো। একান্তই যদি তাদের সাথে আপনার ভালো সম্পর্কের বিষয়টা শেয়ার করতে ভালো লাগে, তবে ছবি দেখাতে পারেন, গল্প করতে পারেন, কিংবা একদিন বাসায় নতুন, পুরোনো মিলিয়ে কিছু কলিগদের চায়ের আড্ডায় আমন্ত্রণ জানাতে পারেন। এতে বিষয়টা ভালো দেখাবে। কিন্তু অযথা তুলনা না করাই ভালো!
- পুরোনো কলিগদের সাথেও যোগাযোগ বজায় রাখুন
নতুন অফিস, নতুন কলিগদের পেয়ে পুরোনো কলিগদের ভুলে যাবেন না যেন! আগের মত নিয়মিত যোগাযোগ না রাখতে পারলেও চেষ্টা করুন যতটা সম্ভব যোগাযোগ রাখার। অন্তত বিশেষ দিনগুলোতে শুভেচ্ছা জানান।সামাজিক উৎসব, অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেন বা আমন্ত্রণ জানাতে পারেন। সামাজিক যোগাযোগ সব সময়েই গুরুত্বপূর্ণ। কখন কে কাজে লেগে যায় আপনি ভাবতেও পারবেন না!
- ধৈর্য হারাবেন না
হয়তো নতুন পরিবেশে এসে চেনা পুরোনো পরিবেশের কথা খুব মনে পড়বে। কাজে মন বসবে না অথবা ভুল ভ্রান্তিও হতে পারে। কিন্তু হাল ছাড়বেন না, ধৈর্য ধরে কাজ করুন।
প্রতি্যোগিতার এই পেশার জগতে পেশা বা কর্মস্থল পরবর্তন খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। আপনার ক্যারিয়ারের উন্নতি আর নতুন কিছু শেখার জন্যে এর বিকল্প নেই। কিন্তু সেই সাথে এটাও মনে রাখবেন, তাই বলে ঘন ঘন চাকরী পরিবর্তন করাটাও কিন্তু একটা নেতিবাচক দিক। বুঝে, শুনে, ভেবে চাকরী পরিবর্তন করুন। আর নতুন চাকরীতে সঠিকভাবে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে নিয়ের উন্নয়ণ নিশ্চিত করুন। আপনি-ই পারবেন!