পড়তে পারেন মৎস্যবিজ্ঞান নিয়ে
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
আমাদের দেশে প্রাণিজ পুষ্টি চাহিদার প্রায় ৬০ শতাংশ পূরণ হয় মাছ থেকে। পৌনে ৪ লাখ হেক্টর আয়তনের পুকুর ও ৯ হাজার ৬০ বর্গকিলোমিটার সমুদ্রসীমার দেড় কোটি মাছ চাষির কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী অপার সম্ভাবনাময় খাতটি জিডিপিতে অবদান রাখছে প্রায় ৪.৬০ শতাংশ। জনসংখ্যার ১১ শতাংশ কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী খাতটি ৮৪ মিলিয়ন টন মাছ রপ্তানি করে প্রতি বছর আয় করছে ৪ হাজার ৩১৩ কোটি টাকা।
মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণ ও উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে মৎস্য সেক্টরকে এগিয়ে নিতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৬৭ প্রতিষ্ঠা লাভ করে মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ। অনুষদটির প্রতিষ্ঠাতা-প্রধান অধ্যাপক ড. আবুল কালাম মুহাম্মদ আমীনুল হক। প্রথমে অনুষদের কার্যক্রম ছোট পরিসরে পরিচালিত হলেও পরে তা ধীরে ধীরে সম্প্রসারিত হতে থাকে। বর্তমানে মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ডিনের দায়িত্ব পালন করছেন মৎস্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ঈদ্রিস মিয়া।
- শিক্ষা কার্যক্রম
অনুষদ প্রতিষ্ঠার পর শিক্ষার্থীদের ইয়ার (বর্ষ) সিস্টেমের মাধ্যমে বাংলায় পাঠদান করা হতো। ২০০২ সাল থেকে ইংরেজি মাধ্যমে ছয় মাস মেয়াদি আটটি সেমিস্টার মিলে চার বছরের জন্য ১৬৮ ক্রেডিটের মাধ্যমে বিজ্ঞানসম্মত ডিগ্রি বিএসসি ফিশারিজ অনার্স ও এক বছর মেয়াদি ডিগ্রি ফিশারিজ বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিক্স, ফিশারিজ ম্যানেজমেন্ট, অ্যাকোয়াকালচার, ফিশারিজ টেকনোলজি নামের চারটি বিভাগ থেকে অনুষদের এমএসসি ডিগ্রি প্রদান করা হয়। এ ছাড়া পিএইচডি ডিগ্রিও এখানে দেয়া হয়।
- শিক্ষক-শিক্ষার্থী
বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদগুলোর মধ্যে গুণগতমান ও বাস্তবমুখী জ্ঞানের দিক দিয়ে এ অনুষদ অনেকটাই সমৃদ্ধ। মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদে বর্তমানে প্রায় ৫৭ জন শিক্ষক রয়েছেন। এ অনুষদে অনার্স ডিগ্রি প্রদানের লক্ষ্যে প্রতি বছর ১১১ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। প্রতি বছর এ অনুষদ থেকে অনার্স সমাপ্ত করে শিক্ষার্থী বের হয়ে তাদের কর্মজীবনে সফলতার স্বাক্ষর রেখে চলছেন। এ অনুষদের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. আবুল কালাম মুহাম্মদ আমীনুল হক জাতীয় অধ্যাপক হওয়ার গৌরব অর্জন করেন।
- ভৌত কাঠামো
প্রশাসনিক ভবন থেকে উত্তর দিকে প্রায় ২০০ মিটার দক্ষিণে অবস্থিত এ অনুষদ ভবন ভৌগোলিক কাঠামোগত দিক দিয়ে নিরিবিলি এবং আবহাওয়া কিছুটা সিক্ত থাকে, যা পরীক্ষণমূলক পুকুরে মাছ চাষে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। রয়েছে শিক্ষার্থীদের মাছ ও মাছ ধরার বিভিন্ন উপকরণের সঙ্গে পরিচিত করার জন্য প্রতিটি বিভাগের নিজস্ব গবেষণাগার। স্নাতকোত্তর ও পিএইচডির শিক্ষার্থীদের শিক্ষা, গবেষণা ও প্রশিক্ষণের জন্য রয়েছে ২১ একরবিশিষ্ট মৎস্য মাঠ গবেষণা কেন্দ্র। রয়েছে মাছের প্রজনন, বংশবৃদ্ধি, বিস্তারের জন্য বাকৃবি মৎস্য খামার। এ ছাড়াও অনুষদীয় প্রফেসর ড. মোস্তফা আলী রেজা হোসেনের অক্লান্ত পরিশ্রম ও চেষ্টার ফলে গড়ে উঠেছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ ‘মৎস্য জাদুঘর ও বায়োডাইভার্সিটি সেন্টার’। অনুষদীয় লাইব্রেরিতে রয়েছে কম্পিউটার-ব্যবস্থা। তা ছাড়া ফ্রি ওয়াইফাইব্যবস্থা তো রয়েছেই।
- গবেষণার ক্ষেত্রে অর্জিত সাফল্য
মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ গবেষণার ক্ষেত্রে অসাধারণ সফলতার স্বাক্ষর বহন করে। এর মধ্যে বাইম, মাগুর, শিং, তারাবাইম, গুচিবাইম ও বাটা মাছের কৃত্রিম প্রজননসহ ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ পদ্ধতি, একসঙ্গে সবজি ও মাছ চাষের আধুনিক পদ্ধতি (অ্যাকোয়া ফনিক্র-ইফকাস), স্বল্পখরচে বরফ বক্স, খাঁচায় পাঙ্গাশ মাছের চাষ, ডাকউইড দিয়ে মিশ্র মাছ চাষ, মাছের বিষ্ঠা দিয়ে সবজি চাষ, মাছের জীবন্ত খাদ্য হিসেবে টিউবিফিসিড উৎপাদনের কলাকৌশল, ইলিশ মাছ আহরণের পর মানসম্মত উপায়ে বাজারজাতকরণ, দেশি পাঙ্গাশের কৃত্রিম প্রজনন, মাছের পোনা চাষের জন্য রটিফারের চাষ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
- পড়াশোনার ক্ষেত্র
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট কৃষি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কৃষি, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও বাকৃবির অধীন জামালপুরের শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব ফিশারিজ কলেজসহ প্রায় ১৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাৎস্যবিজ্ঞান বিষয়ে পাঠদান ও ডিগ্রি প্রদান করা হয়। এ ছাড়াও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাৎস্যবিজ্ঞান বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি প্রদানের প্রক্রিয়া চলছে।
- চাকরির ক্ষেত্র
এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উত্তীর্ণ গ্র্যাজুয়েটরা দেশের মৎস্য সেক্টরে তাদের দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউট (বিএফআরআই), জেলা মৎস্য কর্মকর্তা, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (বিসিএসের মাধ্যমে), বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন, মৎস্য অধিদপ্তর, ওয়ার্ড ফিশ সেন্টার, দেশি-বিদেশি এনজিও, সরকারি-বেসরকারি মৎস্য খামার, ক্রাব হ্যাচারিতে চাকরির অপার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়াও এ অনুষদ থেকে উত্তীর্ণ ভালো রেজাল্টধারী শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশ কৃষি, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরো সব কৃষি ও সাধারণ সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হওয়ার সুযোগ তো রয়েছেই।
এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী সাদি, আজিজ, মাসুদ, আরিফ, ইউসুফ বলেন, ‘এ অনুষদে ভর্তি হতে পেরে আমরা সত্যিই গর্বিত। এখানকার শিক্ষকরা অনেক আন্তরিক। মাৎস্যবিজ্ঞান বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে মৎস্য বিষয়ে গবেষণা করে দেশের জনগণের আমিষের চাহিদা পূরণে অবদান রাখতে চাই। আর এ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো সেশনজট না থাকায় আমরা অনেকটা চিন্তামুক্ত থাকতে পারছি।’
আমরা মাছে-ভাতে বাঙালি। মাছ আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের অহংকার। দেশি ৬০ শতাংশ প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি মাছ চাষ দেশের লাখ লাখ মানুষের জন্য সৃষ্টি করেছে কর্মসংস্থান। এজন্যই আমাদের আজন্ম সাধ ও স্বাদের অপূর্ব সমন্বয় এ মাছকে আরো সহজলভ্য করার মাধ্যমে মানুষের পুষ্টি চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবেন মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের গ্র্যাজুয়েটরা_ এমনটিই প্রত্যাশা দেশবাসীর।