প্রিলি প্রস্তুতি : গণিতে টেক্সট বই-ই ভরসা
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
সাধারণ গণিত বিসিএস পরীক্ষার অন্যতম অংশ। প্রিলিমিনারিতে ১৫ নম্বর বরাদ্দ আছে। যার তিনটি অংশ; পাটিগণিত, বীজগণিত ও জ্যামিতি। অনেকেই গণিতকে ভয় পান। কেউবা একটি অংশ পারলেও অন্য অংশে ভালো করেন না। অর্থাৎ পাটিগণিত পারল কিন্তু বীজগণিত কম বোঝেন। এমন অবস্থা দেখেছি। সাধারণ গণিতে সহজে ভালো করার জন্য নিচের বিষয়গুলো অনুসরণ করা যেতে পারে।
ক) গণিতের ভিত্তি ধরতে হবে বোর্ডের গণিত বইগুলোকে। বিশেষ করে সপ্তম, অষ্টম ও নবম-দশম শ্রেণির বইগুলো।
খ) গণিত চর্চা শুরু করতে হবে নিচের শ্রেণি থেকে ওপরের শ্রেণি পর্যন্ত। যেমন প্রথমে সপ্তম, পরে অষ্টম ও তারপর নবম-দশম শ্রেণি।
গ) বোর্ড বইগুলো সমাধান করার সময় কঠিন অঙ্কগুলো মার্ক করে রাখবেন। পরের বার করার সময় শুধু ওই মার্ক করাগুলো করলেই হবে। ঘ) গণিতের বিভিন্ন অংশের সূত্রগুলো ভালো করে পড়ে নেবেন। প্রয়োজনে একটা নোট তৈরি করে নেবেন। অনেক সময় সূত্র থেকেও দু-একটি প্রশ্নের উত্তর করা যায়।
ঙ) কিছু অধ্যায় তুলনামূলকভাবে একটু বেশি গুরুত্ব দিয়ে করতে হবে। যেমন সুদকষা, শতকরা, লাভ ও ক্ষতি, বর্গমূল, উৎপাদক, সূচক, ধারা, সেট ইত্যাদি।
চ) জ্যামিতি অংশটি বোর্ডের বই থেকে না পড়লেও চলবে। কারণ, প্রিলিমিনারিতে জ্যামিতির খুব গভীর থেকে প্রশ্ন হয় না বা করার সুযোগও থাকে না। তাই এই অংশের জন্য একটা গাইড অনুসরণ করলেই হবে।
ছ) গণিতের যে অংশটি ভালো করে পারেন, তা যেন আয়ত্তে থাকে খেয়াল রাখবেন। অন্য অংশটি কম পারলেও যেন তা কাভার করা যায়।
জ) অনুশীলন ব্যতীত গণিতে ভালো করা যায় না। তাই প্রতিদিন এক থেকে দেড় ঘণ্টা সময় গণিত অনুশীলন করার জন্য বরাদ্দ রাখুন।
ঝ) বিগত বছরের গণিত প্রশ্নগুলো ভালো করে সমাধান করে নেবেন।
ঞ) কিছু গণিত শর্টকাটে করবেন। কারণ, আপনি সব সময় বিস্তারিত করার সময় পাবেন না। তবে সব আবার শর্টকাট করতে যাবেন না।
ট) অতি কঠিন মাত্রার গণিত বিশেষ করে জিআরই, জিম্যাট থেকে অনুশীলন করার প্রয়োজন নেই। প্রিলিমিনারিতে গণিতে এত কঠিন প্রশ্ন হয় না।
ঠ) গণিতে বেশি দুর্বল হলে বন্ধুদের নিয়ে গ্রুপ স্টাডি করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে গণিতে দক্ষ বন্ধুকে বেছে নিন।
ড) যদি বিশেষ কোনো অধ্যায় যেমন সময় ও স্রোত এর গণিত আয়ত্ত করতে না পারেন, ছেড়ে দিন। ওই অধ্যায় থেকে প্রশ্ন না-ও আসতে পারে।
ঢ) গণিতের কোনো অংশকে সহজ মনে করে এড়িয়ে যাবেন না। সমান গুরুত্ব দেবেন। না হলে দেখা যাবে পরীক্ষার হলে গিয়ে আর মেলাতে পারছেন না।
ণ) মাঝে মাঝে নিজেকে যাচাই করার জন্য কিছু অধ্যায় ধরে পরীক্ষা দেবেন। এটা আপনার করণীয় ঠিক করতে সাহায্য করবে।
ত) একটা আশার কথা হলো, গণিতের একটা সীমানা আছে। মৌলিক নিয়মগুলো ভালো করে জানলে কমনসেন্স দিয়ে অনেক ম্যাথ সমাধান করা সম্ভব।
মানসিক দক্ষতা অংশে ১৫টি প্রশ্ন থাকবে। একটা কথা মনে রাখতে হবে, বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ জ্ঞান, চিত্র, গণিত, মনস্তাত্ত্বিক বিষয় ও কমনসেন্স-বিষয়ক প্রশ্ন হয়ে থাকে এ অংশে। অর্থাৎ এটাও প্রিলির মধ্যে আরেকটা ছোটখাটো প্রিলি। আপনি যদি অন্যান্য অংশে ভালো করে প্রস্তুতি নেন, তবে মানসিক দক্ষতা অংশেও ভালো করবেন। তারপরেও কিছু প্রস্তুতি আলাদা করে নেবেন। যেমন
ক) প্রথমে বিগত প্রিলিমিনারির প্রশ্নগুলো পড়ে নেবেন।
খ) ২৭তম বিসিএস থেকে সর্বশেষ অনুষ্ঠিত বিসিএস লিখিত পরীক্ষার মানসিক দক্ষতার প্রশ্নগুলো পড়ে ফেলবেন। বুঝে বুঝে পড়বেন। অনেকেরই জানা আছে, লিখিত পরীক্ষায় ৫০টি এমসিকিউ টাইপ প্রশ্ন হয়।
গ) এতে মানসিক দক্ষতা সম্পর্কে আপনার একটা পূর্ণাঙ্গ ধারণা হয়ে যাবে। এগুলো পেতে একটা গাইড সংগ্রহ করে নেবেন। ওরাকল হতে পারে।
ঘ) কিছু বিষয় একটু ভালো করে পড়বেন। যেমন বাংলা বানান, ইংরেজি বানান, অ্যানালজি, সিরিজ, দূরত্ব নির্ণয়-বিষয়ক সমস্যা, চিত্রভিত্তিক সমস্যা বিন্যাস ও সমাবেশ, শূন্যস্থান পূরণ, বছর নির্ণয় ইত্যাদি।
ঙ) অনুশীলন করার সময় প্রশ্নের প্যাঁচটা বোঝার চেষ্টা করুন। তাড়াহুড়ো করে না বুঝে অধ্যায় বা বই শেষ করতে যাবেন না। এতে তেমন লাভ হবে না।
বোর্ডের বইগুলো যদি মনোযোগ দিয়ে শেষ করতে পারেন, তবে গণিত-ভীতি অনেকাংশেই কমে যাবে। কারণ, এই বইগুলোতে গণিতের মৌলিক বিষয় আলোচনা করা হয়েছে, যা উপেক্ষা করে ভালো করা যাবে না। তা ছাড়া এই বইগুলো লিখেছেন গণিতের খ্যাতিমান অধ্যাপকেরা। দেখা যায়, তাঁরাই হয়তো প্রশ্ন তৈরি করেন। তাই সঠিকভাবে আজ থেকেই হোক গণিত ও মানসিক দক্ষতার চর্চা। নিশ্চয়ই ভালো কিছু হবে।
পরামর্শ দিয়েছেন ৩৪তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে দ্বিতীয় স্থান অধিকারী শাহ মো. সজীব